|
প্রিন্টের সময়কালঃ ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১০:০৪ অপরাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ৩১ আগu ২০২৫ ০৭:৫৯ অপরাহ্ণ

চবিতে শিক্ষার্থী-স্থানীয়দের সংঘর্ষ: কেন ঘটছে বারবার?


চবিতে শিক্ষার্থী-স্থানীয়দের সংঘর্ষ: কেন ঘটছে বারবার?


চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) এলাকায় শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে একের পর এক সংঘর্ষে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। সর্বশেষ সংঘর্ষের পর হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করেছে এবং যৌথবাহিনী মোতায়েন করেছে। শনিবার রাত থেকে শুরু হয়ে রোববার দুপুর পর্যন্ত টানা দুই দফা সংঘর্ষের ঘটনাই ছিল এ সংকটের সর্বশেষ চিত্র।
 

কিভাবে শুরু হলো সংঘর্ষ

শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগ থেকে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত। অভিযোগ অনুযায়ী, বাসার দারোয়ান প্রথমে তাকে ভেতরে ঢুকতে দেননি, পরে হাতাহাতির পর্যায়ে গিয়ে ছাত্রীকে মারধর করেন। খবর পেয়ে অন্য শিক্ষার্থীরা এগিয়ে আসলে দারোয়ানকে রক্ষায় স্থানীয় অটোরিকশা চালকেরা যুক্ত হন। এতে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।
 

দোকান, ভাড়া, চাঁদা—প্রায়শই সংঘর্ষের কারণ

চবি ক্যাম্পাস হাটহাজারী উপজেলায় অবস্থিত। শিক্ষার্থীদের অনেকেই ভাড়া বাসায় থাকেন এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে স্থানীয় বাজারে যান। আবার তাদের যাতায়াতও নির্ভর করে স্থানীয় পরিবহনের ওপর। এ নির্ভরতার মাঝেই প্রায়ই বিরোধ বাঁধে।
 

  • চলতি মাসের শুরুর দিকে স্থানীয়দের চাঁদা দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়েছিল।

  • গত বছর অক্টোবরে দোকান দখল নিয়ে সংঘর্ষ ঘটে, যাতে গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে।

  • একই বছরের মার্চে মোটরসাইকেল ধাক্কা লাগার ঘটনাও শিক্ষার্থী-স্থানীয় সংঘর্ষে রূপ নেয়।

অর্থাৎ তুচ্ছ বিষয় থেকেই সংঘর্ষের সূত্রপাত হলেও তা দ্রুত বড় আকার ধারণ করে।
 

গভীরতর কারণ

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টররা মনে করেন, আবাসন সংকট, পরিবহন সমস্যা, স্থানীয়-শিক্ষার্থী নির্ভরশীলতা, এবং প্রশাসনিক সমন্বয়ের ঘাটতিই মূলত এই পুনরাবৃত্ত সংঘর্ষের কারণ।

  • ভৌগলিক অবস্থান: শহর থেকে দূরে ক্যাম্পাস হওয়ায় শিক্ষার্থীদের স্থানীয়দের ওপর নির্ভর করতে হয়।

  • আবাসন সংকট: প্রায় ২৭ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য মাত্র ১৪টি হল থাকায় অনেকে ভাড়া বাসায় থাকতে বাধ্য হয়, যেখানে প্রায়ই স্থানীয়দের সঙ্গে বিবাদ বাঁধে।

  • পরিবহন সমস্যা: বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সরাসরি পরিবহন চালুর উদ্যোগ স্থানীয় চালকদের বাধার মুখে পড়ে।

  • রাজনীতি ও মাদক: কিছু সংঘর্ষের পেছনে স্থানীয় রাজনীতি ও মাদক ব্যবসার দ্বন্দ্বও কাজ করে।
     

সমাধানের পথ

বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তৎপরতা যথেষ্ট নয়। স্থানীয় উপজেলা ও পুলিশ প্রশাসনকে সমন্বিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে।

  • আবাসন সংকট দূরীকরণে নতুন হল নির্মাণ জরুরি।

  • শিক্ষার্থীদের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করতে পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রয়োজন।

  • দ্রুত সমাধানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, স্থানীয় প্রশাসন ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে একটি স্থায়ী সমন্বয় কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।
     

চবির সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক আল আমিনের ভাষায়, “শিক্ষার্থীরা দেশের নাগরিক হিসেবেই নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার রাখে। স্থানীয় প্রশাসন সক্রিয় না হলে বারবার এ ধরনের সংঘর্ষ ঠেকানো সম্ভব হবে না।”


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫