|
প্রিন্টের সময়কালঃ ২১ জুন ২০২৫ ০৯:০১ পূর্বাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ০৭ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:২১ অপরাহ্ণ

সীমান্তে ফেলানী হত্যার ১৪ বছর আজ, কত বছর পেরুলে বিচার পাবে পিতা-মাতা.?


সীমান্তে ফেলানী হত্যার ১৪ বছর আজ, কত বছর পেরুলে বিচার পাবে পিতা-মাতা.?


ঢাকা প্রেস
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-


 

‘আগে যে সরকার ছিল তারা অনেক আশা দিছে। আমার মেয়ের বিচার করবে, আমাদের পরিবারের ভরণপোষণ দেবে, সন্তানদের পড়াশোনা করালে চাকরি দেবে। কিন্তু আইজ পর্যন্ত সরকারের একজন লোকও আসে নাই, মেয়ে হত্যার বিচারটাও পাই নাই। এখন তো নতুন সরকার আসলো। এখন যদি বিচারের ব্যবস্থাটা করে। আমি চাই এই সরকার যেন আন্তর্জাতিক আদালতে ফেলানী হত্যার বিচারের ব্যবস্থা করে।এটাই এই সরকারের কাছে আমার দাবি।’
 

২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া অতিক্রমের সময় বিএসএফের গুলিতে নিহত হন ১৪ বছরের কিশোরী ফেলানী। তার লাশ কাঁটাতারে সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে ঝুলে ছিল। কাঁটাতারে ঝুলে থাকা ফেলানীর লাশ আলোড়ন তুলেছিল দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে। হত্যাকাণ্ডের ১৪ বছর পার হলেও বিচার পায় পরিবার। এখন বিচার চেয়ে বর্তমান সরকারের কাছে এভাবেই দাবি জানালেন তার মা জাহানারা বেগম। ন্যায়বিচার নিয়ে হতাশার তলানিতে পৌঁছেও নতুন সরকারের কাছে নতুন করে বিচার প্রক্রিয়া শুরুর আবেদন জানান এই মা।
 

ফেলানীর কবরের পাশে দাঁড়িয়ে পরিবারের অভাব এবং নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে জাহানারা বেগম বলেন, ‌‘প্রত্যেক বছর মৃত্যুবার্ষিকী আসলে টিএনওর কাছে যাই, ডিসির কাছে যাই। কিন্তু দুই বছর থেকে কোনও সাহায্য পাই না। আমার বাচ্চাগুলাকে কষ্ট করে পড়াশোনা করাইছি। কিন্তু চাকরি নাই। সরকার যেন আমার ছেলের জন্য একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়। ছোট চাকরি হলেও যেন দেয়। তাহলে অন্তত জীবনের বাকি দিনগুলা আমরা ভালোভাবে বাঁচতে পারবো।’
 

দীর্ঘ সময়েও মেয়ে হত্যার বিচার না পেয়ে প্রতিনিয়ত হতাশা ও আক্ষেপ করে চলছেন বাবা-মা। তাদের প্রশ্ন, একটি প্রমাণিত হ্ত্যাকাণ্ডের বিচার পেতে আর কতদিন লাগবে? তারা উভয় দেশের সরকারের কাছে দ্রুত বিচার দাবি করেছেন।
 

ফেলানী খাতুনের লাশ নিয়ে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন গণমাধ্যমসহ মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ভারতের ‘সীমান্তনীতি’। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষের ‘বিচারের’ ব্যবস্থা করে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী। ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারে জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়। বিএসএফের কোর্টে সাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা নূরুল ইসলাম ও মামা হানিফ। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেয় বিএসএফের বিশেষ কোর্ট। পরে রায় প্রত্যাখ্যান করে পুনরায় বিচারের দাবি জানান ফেলানীর বাবা। ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনরায় শুরু হলে ১৭ নভেম্বর আবারও আদালতে সাক্ষ্য দেন নূরুল ইসলাম। ২০১৫ সালের ২ জুলাই আদালত আবারও আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেন। দুই দফা অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষকে খালাস দেওয়ান রায় প্রত্যাখ্যান করে ২০১৫ সালে ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টে যৌথ রিট আবেদন করেন নুরুল ইসলাম এবং ভারতীয় মানবাধিকারকর্মী কিরিটি রায়। কিন্তু একের পর এক তারিখ পিছিয়ে আজও সে রিটের নিষ্পত্তি হয়নি।
 

সর্বশেষ ৭ জানুয়ারি সেই রিটের শুনানি হওয়ার কথা থাকলেও আবারও তারিখ পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। আগামী ২৯ জানুয়ারি শুনানির নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এসব তথ্য জানিয়েছেন কিশোরীর পরিবারকে আইনি পরামর্শ দেওয়াসহ ফেলানীর বাবার সঙ্গে ভারতে একাধিকবার সহযাত্রী হওয়া কুড়িগ্রামের সাবেক পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ও একুশে পদকপ্রাপ্ত মানবাধিকারকর্মী এস এম আব্রাহাম লিংকন।
 

ভারতীয় মানবাধিকারকর্মী কিরিটি রায়ের বরাতে তিনি বলেন, ‘আবার তারিখ পিছিয়েছে। কার্য তালিকায় নতুন তারিখ ২৯ জানুয়ারি। আমি মনে করি, ভারতীয় উচ্চ আদালত রিটটির শুনানি নিয়ে ন্যায় বিচার করবেন। ফেলানীর পরিবার ন্যায় বিচার পেলে কারও জয় বা পরাজয় হবে না। সেটা মানবাধিকারের বিজয় হবে।’
 

‘অমিয় ঘোষ আত্মস্বীকৃত খুনি। সে বলেছে তার গুলিতে মারা গেছে। খুনিকে সাজা দেওয়াই ন্যায় বিচার, খালাস ন্যায় বিচার নয়। আমরা বিএসএফের আদালতে ন্যায় বিচার পাইনি। ভারতের উচ্চ আদালতের গ্রহণযোগ্যতা বিশ্বজুড়ে রয়েছে। তারা যদি ন্যায় বিচার করেন তাতে ভারতীয় রাষ্ট্রীয় আইনের সুরক্ষা হবে। সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় ভারতীয় নাগরিকদের জন্য সেটা সুরক্ষা দেবে। সেটা মানবতার বিজয় হবে, কারও পরাজয়ের প্রশ্ন আসবে না। মানবাধিকার সরক্ষিত হবে। তাদের সীমান্তরক্ষী বাহিনী জবাবদিহিতার আওতায় আসবে। ট্রিগার ফ্রি থাকবে না’ বলে উল্লেখ করেন আব্রাহাম লিংকন।


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫