|
প্রিন্টের সময়কালঃ ১২ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:৪০ পূর্বাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ১৩ আগu ২০২৪ ১১:১০ অপরাহ্ণ

কুড়িগ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে উন্নয়ন তহবিল লুটপাট 


কুড়িগ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে উন্নয়ন তহবিল লুটপাট 


ঢাকা প্রেস
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-

 

 

কুড়িগ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে উন্নয়নের বরাদ্দের টাকা নয়ছয়। শিক্ষা বিভাগের তদারকির অভাবে নাম মাত্র কাজ দেখিয়ে আত্নসাৎ করা হচ্ছে এসব অর্থ।

 

কুড়িগ্রাম জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার দলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াশ ব্লক তালাবদ্ধ দীর্ঘদিন ধরে, বেচিং নষ্ট, বিদ্যালয়ের ছাদ পলেস্তারা ওঠাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত।

 

গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে এই বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র মেরামত, স্লিপ, ওয়াশ ব্লক সংস্কার বাবদ বরাদ্দ দেয়া প্রায় তিন লাখ টাকা। এই টাকা দিয়ে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণীর শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষা উপকরণ ক্রয়,ওয়াশ ব্লক এবং বিদ্যালয় সংস্কার কাজে ব্যয় করার কথা। অথচ বিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক সময়ে অবসরে যাওয়া প্রধান শিক্ষক আলী আকবর নামমাত্র কাজ দেখিয়ে এসব অর্থ আত্নসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। তার অর্থ আত্নসাতের বিষয়টি ধরা পড়ে চলতি বছরের জুলাই মাসে মা সমাবেশ দেখিয়ে খাবারের পাঁচ হাজার টাকার একটি ভাউচারে বিল উত্তোলন করার ঘটনায়। তিনি গত ৫মে অবসরে যাবার আগেই এপ্রিল মাসে বিদ্যালয় বন্ধ থাকাকালীন এসব কাজ সম্পন্ন করে বিল তুলেছেন।

 

এই বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের ওয়াশ ব্লকে একটি ছেলে এবং মেয়েদের জন্য আলাদা দুটি লেট্রিন রয়েছে। কিন্তু ওয়াশ ব্লক নির্মাণের পর থেকে মেয়েদের লেট্রিন তারাবদ্ধ। ছেলে-মেয়ে সবাই একটি লেট্রিন ব্যবহার করি। সেখানেও বেচিং,কমোট,টেপ এগুলো নষ্ট।

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক ও অভিভাবক জানান,এই স্কুলে কোন মা সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়নি। শিক্ষা উপকরণও কেনা হয়নি। পুরাতন গুলো দেখিয়ে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

 

সহকারি শিক্ষক শামসুন্নাহার বলেন,বিদ্যালয়ে কত টাকা বরাদ্দ হয়েছে তা আমরা জানি না। গত ঈদুল ফিতরে বিদ্যালয় বন্ধ থাকাকালীন আমাদের সাবেক প্রধান শিক্ষক কাজ করছেন। তবে আমাদের চোখের সামনে কাজ হয়নি। তিনি ভালো বলতে পারবেন কিকি কাজ হয়েছে।

 

সাবেক প্রধান শিক্ষক আলী আকবর জুলাই মাস না আসলেও কিভাবে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে সেই বিষয়ে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। ভুল বসত এমন তারিখ হয়েছে। তবে তার দাবী সঠিক নিয়মে বরাদ্দের টাকা খরচ করেছেন তিনি।

 

একই উপজেলার চর ধাউরার কুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চিত্র প্রায় একই। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে উন্নয়নের জন্য প্রতিবছর যে বরাদ্দ আসে তা সম্পর্কে জানা নেই শিক্ষক,শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের। ফলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক,ম্যানেজিং কমিটি এবং কর্মকর্তারা অনায়সে আত্নসাৎ করেন এসব টাকা।

 

এই বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন,স্কুলে কত টাকা বরাদ্দ আসছে আমার জানা নেই। প্রাক-প্রাথমিকের শিক্ষার্থীর জন্য কোন খেলনা বা শিক্ষা উপকরণ নেই। শুধু বর্ণ চাট আর পাপোষ আছে। প্রায় দেড় বছর থেকে কোন কিছু কেনা হয়নি। কি কি কাজ হয়েছে তা আমাদের জানা নেই। এখন বিল উত্তোলন হয়েছে কিনা আমি বলতে পারি না।

 

অভিভাবক মজিবর রহমান বলেন, এই স্কুলে কয়েক বছর থেকে কোন কাজ হয়নি। শোনা যায় দু/তিন লাখ টাকা করে বরাদ্দ আসে। অথচ আমরা জানতেও পারি না কি কি কাজ হয়। কোন সাইন বোর্ডও দেয়া হয় নি। স্কুলের পলেস্তারা নষ্ট,বাচ্চাদের দোলনা নষ্ট হয়ে পড়ে আছে।

 

ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন রাজিবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের নয়ারচর কোল পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩৩শতক জমি। এরমধ্যে ৮শতক জমিতে বিদ্যালয়ের একটি ভবন নির্মাণ করা হয়। এই বিদ্যালয়ের ভবনের চারপাশে সীমানা প্রাচীর থাকলেও সেটির কাজ শেষ হয়নি। অথচ অসমাপ্ত সীমানা প্রাচীরের কাজ না করেই বিদ্যালয়ের বাকি ২৫শতক জমিতে আংশিক ভাবে দেয়া হয়েছে সীমানা প্রাচীর। কর্তৃপক্ষের এমন কাজ দেখে স্থানীয়দের অভিযোগ সরকারি টাকা অপচয় করা হয়েছে।

 

স্থাণীয় বাসিন্দা মকবুল হোসেন বলেন,এই দেয়াল দেখে আমি তো মনে করেছি কারও বাড়ির দেয়াল দিচ্ছে। কিন্তু এটা যে স্কুলের দেয়াল তা কিভাবে বুঝবো। কেননা স্কুল এখানে আর দেয়াল অন্যখানে। এভাবে সরকারের টাকা অপচয় ছাড়া আর কিছুই না। এই দেয়াল না দিয়ে ভবনের সামনের দেয়ালের কাজটা শেষ করলেও এটা মানাতো। এখন কর্মকর্তা কি মনে করে দিছে তারাই ভালো জানেন।

 

এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, সীমানা দেয়াল নির্মাণ করেছে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ থেকে। তারা কত টাকা বরাদ্দ বা ব্যয় করেছে আমি জানি না। আমাকে তারা বলেওনি।

 

এই বিষয়ে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা রাজিবপুর উপজেলা প্রকৌশলী সৌরভ কুমার সাহা স্কুলের ভবন থেকে অন্য স্থানে দেয়াল নির্মাণ করে সরকারি অর্থ অপচয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন,বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ খবর নিয়ে এই প্রসঙ্গে জানাতে পারবো।

 

রুপার খামার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সাজেদা বেগম বলেন, কর্মকর্তাদেরকে ঘুষ দিয়ে সন্তুষ্ট করতে না পারায় দীর্ঘদিন ধরে রুপার খামার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বরাদ্দ হয়না। যারা ঘুষ দিতে পারে তারাই বরাদ্দ পায়। অনেক সহকর্মীদের কাছ থেকে শুনেছি বরাদ্দ ভেদে কর্মকর্তাদের দুই হাজার হতে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়।

 

কুড়িগ্রাম জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নবেজ উদ্দিন সরকার বলেন, সরকারি টাকা আত্নসাৎ কিংবা অপচয় করার বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন।


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫