রায়পুরায় প্রসব-পরবর্তী সংকটে প্রাণ বাঁচালেন ডা. ফাহিমা, কৃতজ্ঞতায় ভাসছে পরিবার-অঞ্চল

নরসিংদীর রায়পুরায় প্রসব-পরবর্তী রক্তক্ষরণে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা সুমা (২৫) নামে এক গৃহবধূকে সাহসী পদক্ষেপে বাঁচিয়ে তুলেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. ফাহিমা শারমিন হানি। তাঁর এমন মানবিক উদ্যোগে রোগীর পরিবার ও স্থানীয়রা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
মঙ্গলবার রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মহিলা ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, সুস্থ হয়ে উঠেছেন সুমা। তিনি হাসিমুখে বলেন, “আল্লাহর রহমতে ডাক্তার-নার্সদের কারণে আজ আমি বেঁচে আছি। ডা. ফাহিমাসহ সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।”
সংকটময় সময়ের লড়াই
বেলাব উপজেলার হোসেননগর গ্রামের বাবুল মিয়ার স্ত্রী ও তিন সন্তানের জননী সুমা গত রোববার সন্তান জন্ম দেওয়ার পর মারাত্মক রক্তক্ষরণে পড়েন। রক্তের পরিমাণ (Hb%) মাত্র ১-এ নেমে গেলে সরকারি-বেসরকারি কোনো হাসপাতালই তাঁকে ভর্তি নেয়নি। শেষ পর্যন্ত মুমূর্ষু অবস্থায় রায়পুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হলে প্রথমে তাঁকে রেফার করার সিদ্ধান্ত হয়। তবে স্বজনদের অনুরোধে দায়িত্ব নেন ডা. ফাহিমা।
জেলা সিভিল সার্জনের নির্দেশনা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আরএমও ডা. ইসমাইল আল রাজীবের সার্বিক তত্ত্বাবধান, অভিজ্ঞ নার্সদের সহযোগিতা এবং ডা. ফাহিমার দৃঢ় সিদ্ধান্তে দ্রুত চিকিৎসা শুরু হয়। প্রায় দুই ঘণ্টার নিরলস চেষ্টার পর অবশেষে সুস্থ হয়ে ওঠেন সুমা।
আবেগঘন প্রতিক্রিয়া
সুমার শাশুড়ি আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, “ওই সময় বৌমা আমার হাতে তিনটা নাতনী দিয়ে বলেছিল—মা, আমি না থাকলে ওদের দেখে রেখো। কী যে দুশ্চিন্তায় ছিলাম, তা বলে বোঝাতে পারবো না। আল্লাহর রহমতে আর ডাক্তার-নার্সদের জন্যই আজ আমার পুত্রবধূ বেঁচে আছে।”
সুমার বাবা মুমতাজ মিয়া বলেন, “খোদার পরেই ফেরেশতার মতো ডাক্তাররা এসে আমার মেয়ের জীবন বাঁচিয়েছে। আমরা চিরকৃতজ্ঞ।”
স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক শফিকুল ইসলাম বলেন, “ডা. ফাহিমার মানবিকতা ও সাহসী সিদ্ধান্ত সরকারি হাসপাতালের প্রতি মানুষের আস্থা ফেরাবে।”
নার্সিং সুপারভাইজার রেহেনা বেগম জানান, “রোগীটির অবস্থা ছিল অত্যন্ত সংকটাপন্ন। তবে সময়মতো সঠিক চিকিৎসার কারণেই তিনি বেঁচে গেছেন।”
চিকিৎসকের বক্তব্য
ডা. ফাহিমা শারমিন হানি বলেন, “সুমাকে যখন আনা হয়, তখন তিনি একেবারেই মুমূর্ষু অবস্থায় ছিলেন। অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। ঝুঁকি ছিল, তবে জীবন বাঁচাতে সেটাই করতে হয়েছে। টিমওয়ার্ক ও সবার সহযোগিতায় শেষ পর্যন্ত তাঁকে বাঁচাতে পেরেছি, এটাই সবচেয়ে বড় আনন্দ।”
তিনি আরও বলেন, “সরকারি হাসপাতাল নিয়ে মানুষের অনেক ভ্রান্ত ধারণা আছে। কিন্তু আন্তরিকতা ও সঠিক সময়ে পদক্ষেপ নিলে সরকারি হাসপাতালও রোগীদের জীবনের নিরাপদ আশ্রয় হতে পারে।”
আরএমও ডা. ইসমাইল আল রাজীব বলেন, “রোগীকে অন্য কোথাও নেওয়ার সুযোগ ছিল না। ডা. ফাহিমার সাহসী সিদ্ধান্তের কারণেই মা ও সন্তান দু’জনই এখন নিরাপদ।”
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা খান নূরুদ্দিন মো. জাহাঙ্গীর বলেন, “এমন মানবিক কাজের জন্য ডা. ফাহিমা ও তাঁর টিম ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।”
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫