‘ব্লক মার্কেটে’ ভর করে বছরের সর্বোচ্চ লেনদেন

দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেনের গতি ফিরেছে। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) এ বছরের সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে, যা পরিমাণে ৯৬৮ কোটি টাকা।
চলতি বছরের চার মাসসহ গত সাড়ে পাঁচ মাসে এটিই ডিএসইতে সর্বোচ্চ লেনদেন। এর আগে গত ৯ নভেম্বর ঢাকার বাজারে সর্বোচ্চ ১ হাজার ১৯ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল। চলতি বছরে এর আগে সর্বোচ্চ লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৯৩৪ কোটি টাকা। সেটি হয়েছিল ১৮ জানুয়ারি।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ঈদের আগে থেকেই শেয়ারবাজারের সূচক অল্প অল্প করে বাড়ছিল। ঈদের ছুটির পর তাতে কিছুটা গতি সঞ্চার হয়েছে। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স টানা ৯ দিন ধরে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় রয়েছে। তাতে ডিএসইএক্স সূচকটি মোট ৭৮ পয়েন্ট বেড়েছে। সূচকের ঊর্ধ্বমুখী ধারার কারণে বাজারে একটু একটু করে বিনিয়োগও বেড়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বছরের সর্বোচ্চ লেনদেন হয়েছে গতকাল। তবে হাতে গোনা কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারের লেনদেনই হচ্ছে বেশি। নিয়ন্ত্রক সংস্থার বেঁধে দেওয়া সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা কোম্পানিগুলোর শেয়ারদরে কোনো নড়াচড়া হচ্ছে না। সে জন্য যে শেয়ারের দাম বাড়ছে, সেগুলোতেই ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা। এতে শেয়ারবাজারে একধরনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
ঢাকার বাজারে গতকালের রেকর্ড লেনদেনে বড় ভূমিকা রেখেছে ব্লক মার্কেট। লেনদেনের বিশেষ এ ব্যবস্থায় বৃহস্পতিবার এককভাবে ইসলামী ব্যাংকের ১১১ কোটি টাকায় প্রায় সাড়ে ৩ কোটি শেয়ার হাতবদল হয়েছে। সব মিলিয়ে এদিন ব্লক মার্কেটে হাতবদল হয়েছে ১৫৩ কোটি টাকার শেয়ার।
ব্লক মার্কেট ও সাধারণ বাজারের লেনদেনের মধ্যে তফাত আছে। সাধারণ বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা ও শেয়ারের দরদাম বাজারের নিয়মে নির্ধারিত হয়, আগে থেকে কিছুই ঠিক করা থাকে না। আর ব্লক মার্কেটে আগে থেকেই ক্রেতা-বিক্রেতার মাধ্যমে শেয়ারের লেনদেন ও দরদাম ঠিক হয়ে থাকে। শুধু শেয়ারের হাতবদলের আনুষ্ঠানিকতাটুকু সম্পন্ন হয় ব্লক মার্কেটে।
বাজার সম্পর্কে জানতে চাইলে মার্চেন্ট ব্যাংক আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, গতকাল রেকর্ড লেনদেনের পেছনে ব্লক মার্কেটের একটা বড় ভূমিকা ছিল। তবে কয়েক দিন ধরে লেনদেনে গতি সঞ্চার হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আশা তৈরি হয়েছে। এটি বাজারের জন্য ইতিবাচক দিক। কিন্তু লেনদেনের বড় অংশই সীমাবদ্ধ ছিল হাতে গোনা কিছু শেয়ারে। ফলে ভালো ভালো শেয়ারও অবমূল্যায়িত অবস্থায় তথা সর্বনিম্ন মূল্যস্তরে (ফ্লোর প্রাইস) আটকে আছে। ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকা শেয়ারগুলোও যদি স্বাভাবিক লেনদেনে ফিরে আসে, তাতে সামগ্রিকভাবে বাজারে গতি ফিরবে।
বছরের সর্বোচ্চ লেনদেনের দিনেও গতকাল ২১০টি কোম্পানির শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দামে কোনো হেরফের হয়নি। কারণ, এসব শেয়ার ও ইউনিটের বড় অংশই ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে। ডিএসইতে বৃহস্পতিবার ৩৫১ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে আগের চেয়ে দাম বেড়েছে ৭৯টির, কমেছে ৬২টির।
ব্রোকারেজ হাউস লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিএসইতে গতকাল লেনদেনের শীর্ষে ছিল খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাত। এ খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারের মোট লেনদেন হয় ১৫১ কোটি টাকার, যা ডিএসইর এদিনকার মোট লেনদেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ। খাদ্য ও আনুষঙ্গিক খাতের শেয়ারের এমন লেনদেনে বড় ভূমিকা রেখেছে মূলত তিনটি কোম্পানি অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ, জেমিনি সি ফুড ও এমারেল্ড অয়েল। এ তিন কোম্পানির মোট শেয়ার লেনদেন হয় প্রায় ৭৩ কোটি টাকার। লেনদেনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খাত ছিল তথ্যপ্রযুক্তি। এ খাতের কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত লেনদেনের পরিমাণ ১২০ কোটি টাকা।
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫