দেশের মহাসড়কগুলোয় অ্যাকসেস কন্ট্রোলড বা প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত না হওয়ায় পণ্যের সরবরাহ খরচ তুলনামূলক অনেক বেশি। বিশেষ করে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহনের বাধাহীন চলাচল সম্ভব হচ্ছে না। সড়কটিকে আট লেন করা হলেও এই সমস্যা থেকে যাবে। তাই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে আট লেন না করে তার বদলে উড়াল মহাসড়ক বা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করার পরামর্শ দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
গতকাল শনিবার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) বাংলাদেশ আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের বিষয়ে এ বৈঠকের আয়োজন করা হয়। আইসিসিবি সভাপতি মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এম শামসুল হক।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তাফা কে মুজেরি, আইসিসিবির সহসভাপতি ও হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে আজাদ, আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম) সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ, বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘আমরা উড়াল মহাসড়ক তৈরির পক্ষে। এখন থেকে জলাভূমি, প্লাবনভূমি, চর ও উপকূলে আর কোনো সড়ক নির্মাণ করা হবে না। তার পরিবর্তে উড়ালসড়ক বানানো হবে। পরিবেশের যেন ক্ষতি না হয়, সে জন্য বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হবে।’ ঢাকা-চট্টগ্রাম পথে উড়ালসড়কের দাবির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এ মহাসড়ক নির্মাণে অনেক সময় ও অর্থ খরচ হয়েছে। তাতে মানুষকে যন্ত্রণাও পোহাতে হয়েছে। এ মহাসড়কে উড়ালসড়ক করতে হলে বড় বিনিয়োগ লাগবে। এ বিষয়গুলোও আমাদের মাথায় রাখা প্রয়োজন।’
স্বাগত বক্তব্যে আইসিসিবির সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের মহাসড়ক দিয়ে যানবাহনের বাধাহীন চলাচল সম্ভব হচ্ছে না। সড়কটি আট লেন করা হলেও এই সমস্যা থাকবে। আমরা বর্তমানে বড় ধরনের বিনিয়োগ ও রপ্তানির লক্ষ্যে এগোচ্ছি। তাই ঢাকার সঙ্গে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে উড়াল মহাসড়ক একটি টেকসই সমাধান হতে পারে।’
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, পণ্য পরিবহনকে নিরবচ্ছিন্ন রাখতে হলে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত মহাসড়কের কোনো বিকল্প নেই। তবে এ জন্য বিভিন্ন সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
অ্যামচেম সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ বলেন, মহাসড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণসহ বিভিন্ন জটিলতা রয়েছে। তাতে খরচ অনেক বেড়ে যাবে। তাই দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই প্রকল্প হিসেবে উড়াল মহাসড়ক নির্মাণ করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তাফা কে মুজেরি বলেন, ‘অনেক দেশ ইতিমধ্যে সফলভাবে উড়াল মহাসড়কের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটিয়েছে। তাদের থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি।’
মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক এম শামসুল হক বলেন, বাংলাদেশে সরবরাহ খরচ তুলনামূলক অনেক বেশি। পণ্য উৎপাদন খরচের প্রায় ৪০ শতাংশ পণ্য পরিবহনে খরচ হয়। নিয়ন্ত্রিত উড়াল মহাসড়কের মাধ্যমে এই খরচ কমানো সম্ভব। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বেশির ভাগ প্রধান মহাসড়কে গাড়ির গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ৩০ কিলোমিটার। কিন্তু প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রিত মহাসড়কের মাধ্যমে এই গতিকে ৮০ কিলোমিটার করা গেলে দেশের রপ্তানি ৬-৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে।
তবে হা-মীম গ্রুপের এমডি এ কে আজাদ বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম উড়াল মহাসড়ক এখন আমাদের অগ্রাধিকার নয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ না হলে ২০২৫ সাল পর্যন্ত রপ্তানিতে ধীরগতি থাকবে। তাই আমাদের এখন সংযমী হতে হবে। যেসব প্রকল্পের ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে, সেগুলো দ্রুত শেষ করতে হবে।’
মহাসড়কে প্রবেশাধিকার নিয়ন্ত্রণের নামে অনেক স্থানে দুর্বৃত্তায়ন হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন।