|
প্রিন্টের সময়কালঃ ২২ অক্টোবর ২০২৫ ০৩:৩১ পূর্বাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ২১ অক্টোবর ২০২৫ ০৫:০৩ অপরাহ্ণ

কুড়িগ্রামে নদ-নদীর ভাঙনে বছরে প্রায় সম্বলহীন দুই হাজার পরিবার


কুড়িগ্রামে নদ-নদীর ভাঙনে বছরে প্রায় সম্বলহীন দুই হাজার পরিবার


আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-


 

যুগ যুগ ধরে উজানী ঢল, অতিবৃষ্টি, বন্যা, নদীভাঙন ও খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে যাযাবর জীবনে দিন কাটাচ্ছেন কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের মানুষ। সাড়ে চার শতাধিক চরে বসবাসরত প্রায় পাঁচ লক্ষ মানুষ প্রতিবছরই নতুন করে বন্যা ও ভাঙনের মুখে পড়ছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এসব দুর্যোগের তীব্রতা বাড়লেও কার্যকর পরিকল্পনা ও স্থায়ী সমাধানের উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
 

বিশ্লেষকদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় জরুরি পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে চরাঞ্চলের জীবনযাত্রা আরও বিপর্যস্ত হবে। কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, নদ-নদীর দুই পাড় স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ ও খনন কাজ সম্পন্ন করা গেলে ভাঙন অনেকাংশে কমে আসবে।
 

সরেজমিন দেখা গেছে, তীব্র ভাঙনের কারণে মানুষ ঘর-বাড়ি, আসবাবপত্র ও গবাদিপশু নিয়ে এক চর থেকে আরেক চরে পাড়ি জমাচ্ছেন। নদীর বুকে নতুন জেগে ওঠা চরে কোনোরকমে আশ্রয় নিলেও আবার কয়েক বছরের মধ্যে সেই চরটিও নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। বন্যায় ভেসে যাচ্ছে ফসল, বসতভিটা ও জীবনভর সঞ্চয়।

 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার ও গঙ্গাধর নদীর ভাঙনে প্রতিবছর দুই হাজারেরও বেশি পরিবার তাদের বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। অনেকেই নতুন চরে গিয়ে বসত গড়ছেন, কেউ কেউ কাজের সন্ধানে ঢাকাসহ অন্য জেলায় পাড়ি দিচ্ছেন।

 
কুড়িগ্রাম জেলা সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া গ্রামের লেবু মিয়া বলেন, ‘এ বছর দুধকুমারের ভাঙনে আমাদের গ্রামের অর্ধেক নদীতে চলে গেছে। ভাঙন ঠেকাতে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেই। বাধ্য হয়ে পাশের চরে গিয়ে থাকছি।’

 
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বাবলু মিয়া জানান, ’ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমারের ভাঙনে আমার ইউনিয়নের অর্ধেক নদীতে চলে গেছে। দ্রুত পাড়রক্ষা না করলে পুরো ইউনিয়ন মানচিত্র থেকে মুছে যাবে।’

 
বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উত্তরাঞ্চলের নদ-নদীও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উজানে ভারতের পাহাড়ি এলাকায় অকালবৃষ্টি ও মেঘভাঙা ঢলে হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পেয়ে নদীর পাড় ভেঙে ফেলছে। স্থানীয়রা বলছেন, এমনকি স্থানীয়ভাবে বৃষ্টি না থাকলেও ভারতের পাহাড়ি ঢলে তারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

 
জলবায়ু ও পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠন গ্রীন ভিলেজ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এম. রশিদ আলী বলেন, ‘আগে নদীতে সারা বছর পানি থাকত। এখন জলবায়ুর পরিবর্তনে সময়-অসময়ে ঢল নামছে। ভাঙন রোধে দুই পাড় স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ, বাঁধের পাশে গভীরমূল বিশিষ্ট গাছের বনায়ন ও চরগুলোকে স্থায়ীভাবে উন্নয়ন করা জরুরি।’

 

কুড়িগ্রাম চর উন্নয়ন কমিটির আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম বেবু বলেন, ‘পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের মতো চর বিষয়ক আলাদা মন্ত্রণালয় গঠন জরুরি। নদীভাঙন ও চরে বসবাসকারী মানুষের টেকসই উন্নয়নে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে।’

 
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) স্বীকার করছে, নদ-নদীতে জলবায়ুর প্রভাব বাড়ছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, দীর্ঘমেয়াদে নদীর দুই পাড় স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা গেলে বন্যা ও ভাঙন মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

 
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রাকিবুল হাসান বলেন, ‘কুড়িগ্রাম জেলার উপর দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীর দুই পাড় পরিকল্পনা অনুযায়ী সংরক্ষণ ও খনন করা গেলে ভাঙন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে।’

 
তথ্য অনুযায়ী, ভারত থেকে প্রবেশ করা ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, তিস্তা, দুধকুমার ও গঙ্গাধর নদী কুড়িগ্রাম জেলায় প্রায় ১৮৬ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেছে। এসব নদ–নদীর অববাহিকায় রয়েছে সাড়ে চার শতাধিক চর, যেখানে লাখো মানুষের জীবিকা এখন ভাঙনের করুণ ছোবলে হুমকির মুখে।


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫