রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রে আগুনে ৩৬ পরিবার হারিয়েছে ঘর ও আয়ের উৎস

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৬:২২ অপরাহ্ণ   |   ১৪৪ বার পঠিত
রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রে আগুনে ৩৬ পরিবার হারিয়েছে ঘর ও আয়ের উৎস

রাঙামাটি প্রতিনিধি:-

 

রাঙামাটির সাজেকের রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রে ভয়াবহ আগুনে রিসোর্ট, কটেজ, রেস্তোরাঁ, দোকানঘরের পাশাপাশি স্থানীয় ত্রিপুরা ও লুসাই জাতিগোষ্ঠীর বেশ কয়েকটি বসতঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এসব পরিবারের অধিকাংশের আয়ের প্রধান উৎস ছিল স্থানীয় রিসোর্ট ও হোটেল মালিকদের কাছে জমি লিজ দিয়ে পাওয়া ভাড়া এবং কাজ করার মাধ্যমে। আগুনের তীব্রতায় শুধু হোটেল মালিকরা নিঃস্ব হননি, স্থানীয় মানুষও দুঃখ-দুর্দশার মধ্যে পড়েছেন। তাদের অনেককে এখন খোলা আকাশের নিচে জীবনযাপন করতে হচ্ছে।
 

গত সোমবার দুপুরে রুইলুই পর্যটনকেন্দ্রে আগুনের সূত্রপাত হয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ৯৭টি কটেজ, রিসোর্ট, রেস্তোরাঁ, দোকানঘর ও বসতঘর পুড়ে যায়, যার মধ্যে ৩৬টি ছিল ত্রিপুরা ও লুসাই সম্প্রদায়ের মানুষের বসতঘর। এছাড়া ৩৪টি কটেজ, ২০টি দোকানঘর এবং ৭টি রেস্তোরাঁও আগুনে পুড়ে গেছে। ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ১০০ কোটি টাকার বেশি বলে জানা যাচ্ছে।
 

স্থানীয়দের মাঝে ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে সরেজমিন পরিদর্শন করলে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া হোটেল-রিসোর্ট ও বসতঘরের ধ্বংসাবশেষ এখনও আগুনের ভয়াবহতার সাক্ষী হয়ে রয়েছে। অনেকেই এখন খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছেন, কেউ কেউ পোড়া টিন দিয়ে কোনোমতে ঝুপড়ি বানিয়ে বেঁচে আছেন।
 

এর মধ্যে একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী ওয়াইতুই রাম ত্রিপুরা জানান, তার পরিবারের একমাত্র আয়ের উৎস ছিল পাশের তরুছায়া রিসোর্ট থেকে ভাড়া পাওয়া টাকা। কিন্তু এখন রিসোর্টসহ তার নিজস্ব বসতঘরও আগুনে পুড়ে গেছে। তিনি পরিবার নিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। তার স্ত্রী ভারতী ত্রিপুরা জানান, আগুনের সময় তিনি এক সন্তানকে খুঁজতে গিয়েছিলেন, তখন আগুন ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। তারা কিছুই উদ্ধার করতে পারেননি।
 

এছাড়া সাংপুই লুসাই, রোয়াত্তি লুসাইসহ আরো অনেকে বসতঘর ও ব্যবসা হারিয়ে এখন ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল। ক্ষতিগ্রস্তরা স্থানীয় গির্জায় আশ্রয় নিয়েছেন এবং স্থানীয়দের পাঠানো খাবার দিয়ে দিন পার করছেন।
 

পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলে বিভিন্ন সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি জানান, প্রতিটি পরিবারকে দুই টন চাল দেওয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের জেলা পরিষদ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা প্রদানের কথা বলা হয়।
 

এ সময় উপদেষ্টা আরও বলেন, সাজেকে দ্রুত একটি বিশেষায়িত ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন, কটেজ ও রিসোর্ট মালিকদের করপোরেট ঋণের ব্যবস্থা এবং পানির সংকট সমাধানে জলাধার নির্মাণের বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।
 

অপরদিকে, জেলা প্রশাসন পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির প্রধান মোবারক হোসেন জানিয়েছেন, আগুনের সূত্রপাত হয়েছে "ইকো ভ্যালি" রিসোর্ট থেকে, তবে বিস্তারিত তদন্তের পর প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।
 

এদিকে, ক্ষতিগ্রস্ত ৩৬ পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুই দিন পর ৩০ কেজি চাল, সাড়ে ৭ হাজার টাকা, শুকনো খাবার ও কম্বল দেওয়া হয়েছে।