অনেকে ফুটপাতে দোকান বসিয়েছেন, কাপড় ধার করেছেন কেউ

প্রকাশকালঃ ০৯ এপ্রিল ২০২৩ ১১:১৮ পূর্বাহ্ণ ৩৬৯ বার পঠিত
অনেকে ফুটপাতে দোকান বসিয়েছেন, কাপড় ধার করেছেন কেউ

রাজধানীর বঙ্গবাজারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক ব্যবসায়ী ফুটপাতে দোকান নিয়ে বসেছেন। আগুনে পোড়া মার্কেটের স্থানটি পরিষ্কার করে আজ শনিবার থেকে অস্থায়ীভাবে বসার কথা থাকলেও পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার কাজ শেষ না হওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা আশপাশের ফুটপাতে দোকান নিয়ে বসেন।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের একটা অংশ গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের নিচে ও এনেক্সকো টাওয়ারসংলগ্ন এলাকায় অস্থায়ীভাবে দোকান পেতে বসেছেন। জায়গার দখল পেতে কেউ কেউ সকাল ছয়টায় এসেছেন বলে জানান। তবে সকাল ১০টা থেকে মোটামুটি অনেকেই দোকান নিয়ে বসে যান। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা ঈদের আগেই পোড়া মার্কেটের জায়গায় চৌকি পেতে ব্যবসা করার দাবি আবারও জানিয়েছেন।

ফায়ার সার্ভিস সদরদপ্তরের ফটকসংলগ্ন ফ্লাইওভারের নিচে তিন কন্যা ফ্যাশনের বিক্রেতা মো. বিল্লাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনটি দোকানের দুটি একেবারে পুড়ে শেষ। একটা থেকে কিছু মালামাল বাঁচাতে পেরেছিলাম। সেগুলো নিয়ে আজ সকাল ১০টায় বসেছি। এখন বিকেল চারটা বাজে, মাত্র ছয়টা কাপড় বিক্রি করেছি। তারপরও প্রতিটি ৩০ টাকা ক্ষতিতে বিক্রি করতে হয়েছে। হাতে একেবারে টাকা না থাকায় ক্ষতিতে হলেও বিক্রি করে দিচ্ছি।’


ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেসব কাপড় তাঁরা আগুন থেকে বাঁচাতে পেরেছিলেন, মূলত সেগুলো নিয়েই ফুটপাতে বসেছেন। এর বাইরে এখনই তাঁরা বড় লটে মালামাল আনছেন না। মূলধনের ঘাটতি তো আছেই, পাশাপাশি এই জায়গায় প্রতিদিন তাঁরা বসতে পারবেন কি না, সে ব্যাপারে নিশ্চয়তা না পাওয়ায় অনেকে এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। তবে কেউ কেউ জানালেন যে তাঁরা আশপাশের এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কাপড় এনে অস্থায়ী দোকানে রেখেছেন।

ফুটপাতের দোকানগুলো ঘিরে আজও মানুষের ভিড় লক্ষ করা গেছে। তবে বেচাকেনা খুব কম ছিল বলে জানালেন দোকানিরা।

এনেক্সকো টাওয়ারের পাশে পুলিশ সদর দপ্তরের কাছাকাছি ফুটপাতে বসেছিলেন মো. মিজানুর রহমান। মিম গার্মেন্টস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক তিনি। গাজীপুর ও সাভার থেকে গার্মেন্টসের স্টক লটের মালামাল এনে ব্যবসা করেন। এসব মালামাল বাকিতে মেলে না বলে যেটুকু বাঁচাতে পেরেছিলেন, তা নিয়ে বসেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সম্পদ বলতে এটুকুই। উপায় নেই দেখে এখানে বসে পড়লাম। ক্রেতা নেই, তবে চেষ্টা তো করতে হবে। ঘুরে দাঁড়াতে গেলে এর বাইরে চিন্তা করার সুযোগ নেই।’

তবে সব ব্যবসায়ী যে ফুটপাতে বসে পড়েছেন, তা নয়। যাঁরা ফুটপাতে বসেছেন, তাঁদের অধিকাংশই ক্ষুদ্র ও মাঝারি মানের ব্যবসায়ী। একটু বড় ব্যবসায়ীরা এখনো পরিস্থিতি বুঝতে চেষ্টা করছেন। ফাতেমা গার্মেন্টস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক চান মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘৩ দোকানে ক্ষতি হয়েছে ৮২ লাখ টাকা। একটা কারখানাও আছে। ফুটপাতে বসে ব্যবসা করার অভ্যাসও তো আমার নেই। আমাদের স্থায়ীভাবে বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হোক। কাজটা যত দ্রুত করা হবে, ততই আমাদের জন্য ভালো হবে।’


এদিকে বঙ্গবাজারের পুড়ে যাওয়া মার্কেটের পাশের এনেক্সকো টাওয়ারের ব্যবসায়ীদের দোকানপাট খুলতে দেখা গেছে। আজ নিচতলার বেশ কিছু দোকান খুলে ধোয়ামোছা ও মালামাল সাজানোর কাজ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে অনেকেই জানালেন, তাঁদের মধ্যে এখনো আতঙ্কের রেশ রয়ে গেছে। এখানেও ক্রেতাদের তেমন আনাগোনা দেখা গেল না। উৎসুক জনতার সংখ্যাই বেশি। এ ছাড়া অধিকাংশ ব্যবসায়ীকে নানা আলোচনায় ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে।

এনেক্সকো টাওয়ারের নিচতলার ব্যবসায়ী হিমেল জ্যাকেট কালেকশনের মালিক ফারুক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মার্কেট খুলতে কোনো বাধা নেই। তবে বেচাকেনার মতো পরিবেশ এখনো হয়নি। আপাতত সবাই পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারটিতে গুরুত্ব দিচ্ছেন। তবে সবাই মিলে উদ্যোগ নিতে হবে যেন এখানে ক্রেতারা আবার আসতে শুরু করেন। অন্যথায় আমাদের ঘুরে দাঁড়ানো কষ্টকর হয়ে যাবে।’

এর আগে গত বৃহস্পতিবার সকালে বঙ্গবাজারের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বঙ্গবাজার অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের ঈদের আগে অস্থায়ীভাবে ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়া হবে। পরে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়, শুক্রবার পরিষ্কার করে শনিবার থেকে পোড়া মার্কেটের স্থানে অস্থায়ীভাবে ব্যবসায়ীদের বসতে দেওয়া হবে।