|
প্রিন্টের সময়কালঃ ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ০৩:২৬ অপরাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ০২:৫০ অপরাহ্ণ

পদ্মহেম ধাম ভ্রমন গাইড! কিভাবে যাবেন? কোথায় থাকবেন?


পদ্মহেম ধাম ভ্রমন গাইড! কিভাবে যাবেন? কোথায় থাকবেন?


ফকির লালন সাই’ নিজের ‘মানব প্রেমের বাণী’ গানের মাধ্যমে সকলের মাঝে ছড়ানোর চেষ্টা করেছেন আধ্যাত্মিক এই সাধক। ধর্ম বর্ণ সব কিছুর উর্ধ্বে উঠে তিনি পরমাত্মার কথা সারাজীবন বলে গেছেন। বিভেদ ভুলে মানুষকে মানুষের পাশে দাঁড়াতে বলেছেন। সময়ের পরিক্রমায় তার দর্শন ছড়িয়ে পরেছে দেশ থেকে দেশান্তরে। বিভিন্ন জায়গায় হয়েছে তার আশ্রম, এমনই এক আশ্রমের নাম পদ্মহেম ধাম।

 

মজার বিষয় হলো সাইজী কিন্তু কখনও এখানে আসেননি, তবে এসেছে তার দর্শন। পদ্মহেম ধাম মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলা সদর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দূরে একবারে নিরেট গ্রামীণ পরিবেশে অবস্থিত। গ্রামীণ আবহের চেয়েও বেশি আকর্ষনীয় হলো তিন দিকের নদী বেষ্টিত মনোরম পরিবেশ। ইছামতি নদীর এই খানটাতে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়। এমন মনোমুগ্ধ পরিবেশ খুব কমই চোখে পড়ে। এখানকার কোলাহলমুক্ত পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য  ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। কেবল এখানে আসলেই বুঝা যাবে, এখানকার নিরবতার মুগ্ধতা কত গভির। মুন্সিগঞ্জ জেলার অন্তর্গত এই এলাকার নাম দোসরপাড়া।

 

 

পদ্মহেম ধামের ইতিহাস কিন্তু খুব বেশিদিনের নয়। ২০০৪ সালে ফটো সাংবাদিক কবির হোসেন লালন প্রেমের দর্শন সকলের মাঝে ছড়িয়ে দিতে গড়ে তুলেছেন সাইজীর এই বারামখানা, গাছগাছালি ঘেরা আর প্রকৃতির নির্জনতায় ইছামতীর একদম সাথেই গড়ে তোলা হয়েছে এই আশ্রম। প্রতিবছর অগ্রহায়ণের পূর্ণিমা তিথিতে এখানে লালন উৎসব ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লালন অনুরাগী ও ফকিরেরা একসাথে জড়ো হোন তখন এখানে। উৎসবের সময় সারারাত ধরে চলে বাউল গান, গানের পাশাপাশি চা-পিঠার আয়োজন তো আছেই। প্রকৃতির সাথে সংগীতের কি এক অদ্ভুত সম্মিলন ঘটে এখানে তখন, তা কেবল সশরীরে উপস্থিত হলেই আপনি টের পাবেন। ইছামতীর খুব কাছে বসেই শীতের হিমেল হাওয়ার সাথে বাউল গান আপনাকে নিয়ে যাবে অন্য এক পৃথিবীতে। প্রথম দিকে অতটা জনসমাগম না হলেও আস্তে আস্তে লোকমুখে প্রচারিত হতে হতে এখন বেশ বড়সড় আকারেই সাধুসঙ্গ হয় এখানে। গত কয়েক বছর ধরে তো বিদেশ থেকেও অনেকে আসছে এখানে। মুখরোচক খাবার, শিশুদের জন্য খেলনাসহ আরও নানান নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকান বসে মেলায়।

 

তবে শুধু সাধুসঙ্গের সময় নয়, বছরের যেকোনো সময় যে কেউ এখানে গিয়ে আশ্রয় নিতে পারেন।  সাম্প্রতিক সময়ে অনেকে ক্যাম্পিংয়ের উদ্দেশ্যে এখানে যাচ্ছেন। নদীতে দাপাদাপি করে আশ্রমের সাথে মাঠেই ক্যাম্পিং করে কাটিয়ে দিতে পারেন একটা দিন। আশপাশ থেকে বিরক্ত করার মতও তেমন কেউ নেই। তবে যদি সেখানে থাকতে না চান মুন্সিগঞ্জ সদরে চলে আসতে পারেন সেখানে মোটামুটি মানের বেশ কিছু হোটেল পেয়ে যাবেন। খাওয়া দাওয়া করতে চাইলে আশ্রমের ভেতরেই খাওয়ার ব্যবস্থা আছে তবে মুন্সিগঞ্জের স্থানীয় কিছু বিখ্যাত খাবার যেমন চিত্তর দই, আনন্দর মিষ্টি, খুদের বোউয়া, ভাগ্যকুলের মিষ্টি এগুলোও একবার চেখে দেখে আসতে পারেন।

 

 

কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে মুন্সিগঞ্জ জেলার দূরত্ব মাত্র ২৩ কিলোমিটার। ঢাকার গুলিস্থান, আবদুল্লাপুর ও মিরপুর থেকে মাওয়াগামী বাসে চড়ে মুন্সিগঞ্জে যেতে পারবেন। মুন্সিগঞ্জ জেলা সদর থেকে বাইক/সিএনজি নিয়ে সিরাজদিখান উপজেলা থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত পদ্মহেম ধাম আশ্রম পৌঁছাতে পারবেন। সবচেয়ে সুবিধাজনক উপায় হচ্ছে, ঢাকার পোস্তগোলা থেকে ৩০ টাকা সিএনজি ভাড়ায় মোল্লার বাজার চলে আসুন। মোল্লার বাজার এসে নদী পাড় হতে হবে বালুচর যাওয়ার জন্য। নদীর অন্য পাড়ে যেতে জনপ্রতি ৫ টাকা ভাড়া নিবে। নদী পাড় হয়ে সিএনজিতে নিয়ে সরাসরি পদ্মহেম ধামে যাওয়া যায়। সম্পূর্ণ সিএনজি ভাড়া লাগবে প্রায় ২০০ টাকা। আর সিএনজি ঠিক করতে দরদাম করে নিন। এছাড়া গুলিস্থানের গোলাপ শাহ মাজারের পাশ থেকে বেতকা, টঙ্গিবাড়ী বা সোনারংগামী বাসে সরাসরি সিরাজদিখান বাজারের গোয়ালবাড়ি নামক স্থানে নেমে অটো/সিএনজিতে চড়ে লালনের আশ্রম পদ্মহেম ধামে যেতে পারবেন। আবার যানজট এড়িয়ে নদীপথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে মুন্সিগঞ্জ যাওয়া যায়। ঢাকা সদর ঘাট থেকে লঞ্চে মুন্সিগঞ্জ যেতে ২ ঘণ্টার মত সময় লাগে।

 

 

কোথায় থাকবেন
ঢাকা জেলার কাছাকাছি অবস্থানের কারণে ঢাকা থেকে সকালে রওনা দিয়ে সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরে আসতে পারবেন। চাইলে স্থানীয়দের সাহায্য নিয়ে আশ্রমের বিশাল সবুজ মাঠে ক্যাম্পিং করে থাকতে পারবেন। এছাড়াও রাত্রিযাপনের প্রয়োজনে মুন্সিগঞ্জ জেলা সদরে অবস্থিত হোটেল থ্রি স্টার ও হোটেল কমফোর্ট সহ আরও কিছু সাধারন মানের আবাসিক হোটেল পাবেন।

 

কোথায় খাবেন
পদ্মহেম ধাম আশ্রমের ভিতরে খাওয়া-দাওয়ার জন্য হোটেল রয়েছে। এছাড়া শহরে অবস্থিত রিভার ভিউ ও মুন্সির ঘরোয়া হোটেলের খাবার বেশ ভালমানের। মুন্সিগঞ্জের জনপ্রিয় খাবারের মধ্যে চিত্তর দই, আনন্দর মিষ্টি, খুদের বৌউয়া, ভাগ্যকুলের মিষ্টি অন্যতম।


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫