রোববার ২৫ ক্যাডারের পূর্ণদিবস কর্মবিরতি

ঢাকা প্রেস নিউজ
ফেসবুকে লেখালেখির কারণে ২৫ ক্যাডারের ১২ জন কর্মকর্তাকে দেওয়া বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার এবং আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনের দাবিতে আগামীকাল রোববার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন ২৫ ক্যাডারের কর্মকর্তারা। আজ শনিবার রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষি তথ্য সার্ভিসের সম্মেলন কক্ষে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ তথ্য জানান।
ড. মুহম্মদ মফিজুর রহমান বলেন, "২৫ ক্যাডার রোববার সারাদেশে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করবে। জরুরি সেবা ছাড়া সব সেবা বন্ধ থাকবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্যার সমাধান না পেলে আমরা আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো। আশা করছি, সংশ্লিষ্টরা সমস্যার সমাধানে পদক্ষেপ নেবে।"
রোববার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত কর্মকর্তারা নিজ নিজ দপ্তরের সামনে কালো ব্যাজ পরে ব্যানারসহ অবস্থান করবেন বলেও সভায় জানানো হয়।
এসব দাবি আদায়ে গত ২৫ ফেব্রুয়ারির অর্ধদিবস কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল ২৫ ক্যাডার। তবে সেদিন জাতীয় শহীদ সেনা দিবসের কর্মসূচি থাকায় অর্ধদিবস কর্মবিরতি স্থগিত করা হয়।
২৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে সবার সাময়িক বরখাস্তের আদেশ ও বিভাগীয় মামলা প্রত্যাহার না হলে এবং আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনের কার্যকর উদ্যোগ দৃশ্যমান না হলে রোববার পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করার ঘোষণা আগেই দিয়েছিল ২৫ ক্যাডার।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক মুহম্মদ মফিজুর রহমান বলেন, "জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনে ২৫টি ক্যাডারের পক্ষ থেকে পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা এবং উপসচিব পদে কোটা বাতিলের প্রস্তাব করা হয়েছিল। সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে সিভিল সার্ভিসে পেশাদারিত্বকে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছিল। অথচ জনদাবি উপেক্ষা করে সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে ক্ষমতাধর একটি গোষ্ঠীর নিরঙ্কুশ ক্ষমতা আরও বৃদ্ধির প্রয়াস লক্ষ্য করা গেছে।"
তিনি বলেন, "এ রিপোর্ট পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে রাষ্ট্র সংস্কারের প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে এবং প্রশাসনিক ফ্যাসিজম আরও শক্তিশালী হবে।"
সভায় আরও বলা হয়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে ক্যাডারবহির্ভূত করার প্রস্তাব থেকে সরে এসে কৌশলে নিয়োগের প্রক্রিয়ায় ভিন্নতা রাখা হয়েছে, যেন ধীরে ধীরে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যকে মূলধারা থেকে বের করা যায়। এছাড়া পরিবার পরিকল্পনা ক্যাডারের বিষয় সংস্কার প্রস্তাবে না রাখা এবং পরিসংখ্যান ক্যাডারকে অযৌক্তিকভাবে সার্ভিসের বহির্ভূত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এর ফলে এসব সেক্টরে মেধাবীরা কম আকৃষ্ট হবে এবং এসব সেক্টর মেধাশূন্য হয়ে পড়বে।
এছাড়া বলা হয়, গাণিতিক দক্ষতা মেধা যাচাইয়ের অন্যতম মাপকাঠি, অথচ গণিত বাদ দিয়ে অন্য বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে মুখস্থ করার প্রবণতা তৈরি করা হয়েছে, যা মেধা মূল্যায়নের অন্তরায়। বিচার বিভাগের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, জেলা পরিষদকে বিলুপ্ত করে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি, বাস্তবতা বিবর্জিত প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থার প্রস্তাবও জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্র গঠনে অন্তরায়।
সভায় পরিষদের পক্ষ থেকে পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন, উপসচিব পদে কোটা বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ, সব ক্যাডারের সমতা, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্যাডারসহ সব ক্যাডারকে একই কমিশনের আওতায় রাখা, পরিবার পরিকল্পনা ও পরিসংখ্যান ক্যাডারকে সার্ভিসে অব্যাহত রাখা, সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিসে প্রবেশের পর শুধু প্রশাসন ক্যাডারের জন্য পূর্বের সার্ভিসে ফেরার সুবিধার প্রস্তাব বাতিল এবং জেলা কমিশনারকে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব বাতিল করার দাবি জানানো হয়।
এ সময় জানানো হয়, সম্প্রতি ফেসবুকে লেখালেখির মতো তুচ্ছ কারণে ২৫ ক্যাডারের ১৩ জন কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে, অথচ একই ধরনের কাজ প্রশাসন ক্যাডারের সদস্যরা করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এই বৈষম্যপূর্ণ ব্যবস্থা প্রশাসন ক্যাডার গ্রহণ করেছে, যাতে ২৫ ক্যাডারের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কৃষিবিদ মো. আরিফ হোসেন। এ সময় আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়করা উপস্থিত ছিলেন।
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫