শতবর্ষী ঐতিহ্যের ধারায় চুনারুঘাটের বৈশাখী মেলা, কৃষিপণ্যের বাহারে মুখরিত পীরের বাজার

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ১৫ এপ্রিল ২০২৫ ০৬:১০ অপরাহ্ণ   |   ১১০ বার পঠিত
শতবর্ষী ঐতিহ্যের ধারায় চুনারুঘাটের বৈশাখী মেলা, কৃষিপণ্যের বাহারে মুখরিত পীরের বাজার

ঢাকা প্রেস-নিউজ ডেস্ক:-

 

শতবর্ষের গর্বিত ঐতিহ্য ধারণ করে চুনারুঘাট উপজেলার পীরের বাজারে শুরু হয়েছে বর্ণাঢ্য বৈশাখী মেলা—স্থানীয়ভাবে যা 'বান্নি' নামে সমাধিক পরিচিত। বাংলা নববর্ষকে কেন্দ্র করে আয়োজিত এ মেলা এখন শুধু চুনারুঘাট নয়, গোটা সিলেট বিভাগের অন্যতম বৃহৎ বৈশাখী আয়োজন হিসেবে পরিচিত।
 

মঙ্গলবার সকাল থেকে জমে ওঠা এ মেলার মূল আকর্ষণ কৃষিপণ্যের বিশাল সমাহার। ঐতিহ্যবাহী লাঙল, জোয়াল, দা, কাঁচি, মই, মাছ ধরার সরঞ্জামের পাশাপাশি রয়েছে মাটির তৈরি হাঁড়ি-পাতিল, খেলনা, হস্তশিল্প ও মনিহারি সামগ্রীর বাহার। সেসব পণ্যে রীতিমতো চোখ ধাঁধিয়ে যায়।
 

ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিবছর দেশের নানা প্রান্ত থেকে—হবিগঞ্জ ছাড়াও ঢাকা, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নরসিংদী এবং উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে—বিক্রেতারা এসে যোগ দেন এই ঐতিহ্যবাহী আয়োজনে।
 

চুনারুঘাট পৌরসভার সাবেক মেয়র নাজিম উদ্দিন সামছু বলেন, “এই মেলার শিকড় কৃষিজীবী মানুষের মধ্যে। কৃষকরা এখান থেকেই বছরের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম সংগ্রহ করতেন।”
 

তবে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির বিকাশে ঐতিহ্যবাহী কৃষি উপকরণের ব্যবহার কমে যাওয়ায় মেলার পূর্বের জৌলুশ কিছুটা ম্লান হয়েছে বলে মনে করেন অনেকেই। পাশাপাশি, আশপাশে গড়ে ওঠা ঘরবাড়ির কারণে মেলার পরিসরও কিছুটা সীমিত হয়েছে।
 

তবুও মেলার আবেদন কমেনি একটুও। চুনারুঘাটের ইউএনও মোহাম্মদ রবিন মিয়া জানান, “মেলায় অংশ নিতে দেশের নানা জায়গা থেকে দর্শনার্থীরা আসছেন।” মেলা ঘিরে সার্বিক নিরাপত্তায় রয়েছে পুলিশ বাহিনী, জানালেন চুনারুঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ নুর আলম।
 

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে, এই মেলার সূচনা ঘটেছিল প্রায় এক শতক আগে, একটি পূজা আয়োজনের মধ্য দিয়ে। সময়ের পরিক্রমায় তা রূপ নেয় বিশাল জনসমাগমের প্রাণবন্ত উৎসবে।
 

শুধু কেনাকাটার জায়গা নয়, অনেকের জন্য এ মেলা এক টুকরো শৈশব স্মৃতি। বহু মানুষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করছেন তাদের নস্টালজিক অভিজ্ঞতা। মেলার মঞ্চে চলছে লোকসংগীত, পালাগান, আর গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক পরিবেশনা।
 

এই বৈশাখী মেলা শুধু একটি উৎসব নয়—এটি চুনারুঘাট তথা এ অঞ্চলের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও কৃষিভিত্তিক জীবনের এক জীবন্ত প্রতিচ্ছবি।