প্রকাশকালঃ
১০ জুলাই ২০২৪ ০১:০৯ অপরাহ্ণ ৩৭৪ বার পঠিত
বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে ভ্রমণ চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। বাণিজ্য, পর্যটন, শিক্ষাসহ নানা উদ্দেশ্যে দুই দেশের মধ্যে আকাশপথে যোগাযোগও বাড়ছে। বাড়তি ভ্রমণ চাহিদা মেটাতে দেশীয় এয়ারলাইনসগুলো ফ্লাইট বাড়াচ্ছে। একই সঙ্গে একের পর এক চীনা এয়ারলাইনস বাংলাদেশে ফ্লাইট চালু করছে।
গুয়াংজুর পর এবার আকাশপথে সংযোগের নতুন রুট হিসেবে চালু হচ্ছে বেইজিং। বাংলাদেশ থেকে বেইজিং রুটে প্রথমবারের মতো ফ্লাইট পরিচালনা করতে যাচ্ছে চীনের প্রধান ও পতাকা বহনকারী জাতীয় বিমান পরিবহন সংস্থা এয়ার চায়না এবং দেশটির আরেক বেসরকারি বিমান সংস্থা চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনস। নতুন রুট বাংলাদেশ ও চীনের রাজধানীকে সরাসরি সংযুক্ত করবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশিদের মধ্যে চীনা নাগরিকরাই শীর্ষে অবস্থান করছেন।
অনুমতি নিয়ে কাজ করতে আসা চীনা নাগরিকের সংখ্যা ছয় হাজারের বেশি হলেও প্রকৃত সংখ্যা আরো কয়েক গুণ বেশি বলে মনে করে অনেকে। বিভিন্ন খাত মিলিয়ে বর্তমানে প্রায় ৭০০ চীনা কম্পানি কাজ করছে বলে জানিয়েছে দেশটির সরকার। অন্যদিকে বাংলাদেশের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী চীনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন। এভিয়েশন খাত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমানে ঢাকা-গুয়াংজু গন্তব্যটি লাভজনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এই গন্তব্যে বিমানের টিকিটের চাহিদাও বেশি। বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও শিক্ষার্থী ছাড়া চীনের নাগরিকরাও এই গন্তব্যে যাতায়াত করে থাকেন। বর্তমানে ঢাকা থেকে গুয়াংজুতে সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনা করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস ও চীনের চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনস। আগামী ১৫ জুলাই থেকে ঢাকা-বেইজিং সরাসরি ফ্লাইট চালুর ঘোষণা দিয়েছে চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনস। আজ বুধবার থেকে ঢাকা-বেইজিং ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করছে চীনের জাতীয় পতাকাবাহী এয়ারলাইনস এয়ার চায়না।
এয়ার চায়নার উদ্বোধনী ফ্লাইটটি আজ রাতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে যাবে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এর উদ্বোধন করবেন; যার মধ্য দিয়ে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘সংযোগের মাধ্যমেই উন্নয়ন আসে। আমরা সংযোগ স্থাপনে বিশ্বাস করি। চীন বাংলাদেশের উন্নয়ন সহযোগী এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আরো চীনা বিনিয়োগ আসবে। ঢাকা ও বেইজিংয়ের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করবে।’ তিনি বলেন, ‘যেহেতু চীনে প্রচুর পর্যটক রয়েছে, আমরা ভবিষ্যতে কক্সবাজার ও কুনমিং বিমানবন্দরের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালুর বিষয়টি পর্যালোচনা করছি।’
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক-জনসংযোগ মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা মহামারির মধ্যেও গুয়াংজুতে বাংলাদেশের একমাত্র এয়ারলাইনস হিসেবে ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস ফ্লাইট চালিয়ে গেছে। এই গন্তব্যে যাত্রী চাহিদা বাড়ায় আমরা সপ্তাহের সাত দিনই ফ্লাইট পরিচালনা করছি। আরো বড় উড়োজাহাজ ব্যবহার করে ভবিষ্যতে বেইজিংসহ চীনের অন্যান্য প্রদেশেও ফ্লাইট চালুর পরিকল্পনা আছে ইউএস বাংলার।’
বাংলাদেশের এয়ার চায়নার কান্ট্রি ম্যানেজার আন মিং বলেন, ‘আমরা এই নতুন রুট চালু করায় চীন ও বাংলাদেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের গভীরতা আরো বাড়বে। এই নতুন সার্ভিস শুধু ভ্রমণকে সহজ করবে না, বরং আমাদের দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য, পর্যটন এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়কেও উন্নীত করবে।’ এয়ার চায়না এই রুটে প্রতি সপ্তাহে চারটি ফ্লাইট পরিচালনা করবে—মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার। ফ্লাইটগুলো ঢাকা থেকে রাত ১০টা ১০ মিনিটে ছেড়ে যাবে এবং এই সরাসরি ফ্লাইটটি বেইজিংয়ের রাজধানী বিমানবন্দরে (পিইকে) পৌঁছতে পাঁচ ঘণ্টার কিছু বেশি সময় নেবে।
বাংলাদেশের এয়ার চায়নার জেনারেল সেলস এজেন্ট (জিএসএ) আরভিং এভিয়েশন লিমিটেড। আরভিং গ্রুপের চেয়ারম্যান এইচ বি এম লুত্ফুর রহমান বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি যে এই রুট মানুষের মাঝের সম্পর্ককে উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াবে এবং আমাদের দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক দৃঢ় করবে।’
১৫ জুলাই থেকে ঢাকা-বেইজিং রুটে ফ্লাইট
ঢাকা থেকে সরাসরি বেইজিং রুটে ফ্লাইট পরিচালনার ঘোষণা দিল চীনের চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনস। আগামী ১৫ জুলাই থেকে ঢাকা-বেইজিং সরাসরি ফ্লাইট চালু করছে চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন্স। প্রতি সপ্তাহের সোমবার ও শনিবার ঢাকা থেকে বেইজিংয়ের উদ্দেশে যাত্রা করবে চায়না সাউদার্ন।
চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনস বাংলাদেশের মহাব্যবস্থাপক জি কাংজিয়া বলেন, ‘চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনস এশিয়ার বৃহত্তম এয়ারলাইনস হিসেবে প্রতিদিন তিন হাজারটিরও বেশি ফ্লাইট পরিচালনা করছি, যা যাত্রীদের বিশ্বজুড়ে ২০০টিরও বেশি গন্তব্যে সংযুক্ত করছে। গত বছর আমরা এক লাখ ২০ হাজারেরও বেশি যাত্রী নিয়ে ঢাকা থেকে চীনে গিয়েছি। এই বছরের প্রথমার্ধে সংখ্যাটি এরই মধ্যে ৪০ হাজারের কাছাকাছি।’
এফবিসিসিআই সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘যোগাযোগই সব কিছু, যোগাযোগ ছাড়া এ বিশ্বে কিছুই করা যায় না। যোগাযোগ বাড়লে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যও বাড়বে। বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ বিদ্যমান এবং চীনা কোনো প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ব্যবসা শুরু করতে চাইলে এফবিসিসিআই চীনা বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের সহায়তা দেবে।’