অনলাইন ডেস্ক:-
২০২৪ সালে মিয়ানমারে আদমশুমারি করতে গিয়ে হামলার শিকার হন কর্মীরা। অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে বারংবার বিদ্রোহীদের আক্রমণে পড়েন আদমশুমারি কর্মী ও তাদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সেনা সদস্যরা। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের মিয়ানমার উপদেষ্টা রিচার্ড হর্সি জানান, আদমশুমারি অনেকাংশেই ব্যর্থ হয়েছে, তবে জান্তা সরকার সাফল্য দাবি করছে।
বিশ্বের কোনো রাষ্ট্রে আদমশুমারি একটি সাধারণ প্রক্রিয়া, কিন্তু গৃহযুদ্ধের কবলে থাকা মিয়ানমারের জন্য এটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। জান্তা সরকার আদমশুমারি করেছে মূলত ২০২৫ সালের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি হিসেবে। ২০২১ সালে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক জান্তা ক্ষমতায় আসে, যার পর থেকেই দেশে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। বিরোধীরা আশঙ্কা করছে, এই নির্বাচন দিয়ে সামরিক জান্তা ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে চায়।
ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের মুখপাত্র জ কিঅ বলেছেন, "এই নির্বাচন শুধুই প্রহসন, লোক দেখানো।" তিনি আল জাজিরাকে জানান, সেনাবাহিনী এই নির্বাচন দিয়ে কিছু দেশের কাছে বৈধতা পেতে চাচ্ছে, কিন্তু এতে দেশে কোনো স্থিতিশীলতা আসবে না, বরং আরও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হবে।
জান্তা সরকার ২০২০ সালের নির্বাচনের ভোটার তালিকাকে সঠিক না বলে দাবি করেছে এবং ২০২৪ সালের আদমশুমারির মাধ্যমে নতুন তালিকা তৈরি করতে চাচ্ছে। তবে প্রগ্রেসিভ ভয়েজের প্রতিষ্ঠাতা খিন ওমার বলেছেন, "এটি একটি প্রহসন, বহু এলাকা বাদ গেছে এবং বিদ্রোহীদের কব্জায় থাকা এলাকার জনগণ এই আদমশুমারিতে অন্তর্ভুক্ত হয়নি।"
মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গৃহযুদ্ধের কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং ২০২৩ সালের শেষে বিদ্রোহীরা ৯১টি শহর এবং ১৬৭টি সেনা ঘাঁটি দখল করেছে। ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের মুখপাত্র বলেন, "সেনাবাহিনী এখন মিয়ানমারের ইতিহাসে সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় রয়েছে।"
এমন পরিস্থিতিতে, জান্তা সরকার নির্বাচনের আয়োজন করতে চাইলেও সমালোচকরা এটি বাস্তবতার সাথে অমিল মনে করছেন। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের রিচার্ড হর্সি মন্তব্য করেন যে, সরকারের ভেতরেই ক্ষমতার পরিবর্তনের চাপ রয়েছে এবং সেনাবাহিনী চায় না যে, জেনারেল মিন অং হ্লাইং দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকুন।
এদিকে, চীনের পক্ষ থেকেও জান্তা সরকারের নির্বাচন আয়োজনের চাপ রয়েছে, কারণ চীন মনে করে, এই নির্বাচন মিন অং হ্লাইংয়ের ক্ষমতার পরিধি কমাবে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আসিয়ান দেশগুলোর সংগঠনও মিয়ানমারের নির্বাচন বিরোধিতা করেছে, তাদের মতে গৃহযুদ্ধের এই অবস্থায় নির্বাচন আয়োজন উপযুক্ত নয়।
জান্তা সরকারের ক্ষমতায় থাকার জন্য নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাবনা যদিও রয়েছে, তবে বিদ্রোহী গোষ্ঠী পিপলস ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ) নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে এবং তাদের মতে, নির্বাচনের মাধ্যমে জান্তা সরকার বৈধতা পাওয়ার চেষ্টা করলে সশস্ত্র সংগ্রাম আরও তীব্র হবে।
পিডিএফের মুখপাত্ররা জানিয়েছেন, যারা জান্তা সরকারকে নির্বাচনে সহায়তা করবে, তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিদ্রোহীরা বিশ্বাস করছে, সেনাবাহিনীর পতন সন্নিকটে এবং এই নির্বাচন তার খড়কুটো আঁকড়ে বাঁচার শেষ চেষ্টা।