দেশের সবচেয়ে বড় আম

বাপরে, একটা আমের ওজন চার কেজি! গত বছর ঢাকার খামারবাড়িতে জাতীয় ফলমেলায় অমন পেল্লাই আকারের একটি আম দেখে চমকে গিয়েছিলাম। বছর দশেক আগে এ জাতের আম বাংলাদেশে এসেছে সুদূর ব্রুনেই থেকে। আম ফলের রাজা। কিন্তু এই আম যেন মহারাজা, অন্তত আকারের দিক থেকে। জানামতে, এর চেয়ে বড় আকারের আর কোনো আমের দেখা পাওয়া যায়নি।
এক ফলমেলায় আরাজান গুটি নামে একটি জাতের আমের দেখা মিলেছিল। এবড়োখেবড়ো খোসা আর অসম আকৃতির সবুজ রঙের সে জাতের আমের সর্বোচ্চ ওজন ছিল ২ কেজি ২০০ গ্রাম। তখন ভাবতাম, ওটাই দেশের বৃহত্তম আম। এর আগে ভাবতাম ফজলিকে, যার গড় ওজন প্রায় এক কেজি।
আশ্বিনা জাতের আমও বড়, তবে ফজলির চেয়ে ছোট। সুরমাই ফজলি জাতের আম ফজলির চেয়ে ছোট, নাক ফজলিও ফজলির চেয়ে আকারে ছোট; আমের ঠোঁটটা শুধু নাকের মতো কিছুটা উঁচু। ব্রুনেই থেকে মহারাজা আকারের আমটি এসেছে, তাই এর নাম রাখা হয়েছে ‘ব্রুনেই কিং’।
পাতাগুলো বেশ বড়, লম্বা-চওড়া। পাতার ফাঁকে ফাঁকে শোভা পাচ্ছে কাঁচা আমগুলো। রং হালকা সবুজ, আকার লম্বাটে চ্যাপটা। একটা মঞ্জরিডাঁটিতে সরু বোঁটায় দেড়-দুই কেজি ওজনের এক জোড়া আম কীভাবে যে ঝুলে আছে!
ফলমেলায় ব্রুনেই কিং আম এসেছিল মাগুরা হর্টিকালচার সেন্টার থেকে। সেখানে এ জাতের কলম করে দেশের অন্যান্য হর্টিকালচার সেন্টারেও লাগানো হয়।
এ বছর বৈশাখের শেষে যশোরের খয়েরতলায় হর্টিকালচার সেন্টারে ঢুকেই প্রথমে চোখে পড়ল ফল ধরা সেই ব্রুনেই কিং আমের গাছটা। একটা গাছে গোটা তিরিশেক আম ধরে আছে। গাছের বয়স চার-পাঁচ বছর, সাত-আট ফুট উঁচু। ছড়ানো ডালপালা ঝোপ করে রেখেছে। পাতাগুলো বেশ বড়, লম্বা-চওড়া। পাতার ফাঁকে ফাঁকে শোভা পাচ্ছে কাঁচা আমগুলো। রং হালকা সবুজ, আকার লম্বাটে চ্যাপটা। একটা মঞ্জরিডাঁটিতে সরু বোঁটায় দেড়-দুই কেজি ওজনের এক জোড়া আম কীভাবে যে ঝুলে আছে! বোঁটার কী মহাশক্তি! প্রকৃতির শক্তির কথা ভাবলে বিস্মিত হতে হয়।
যশোর হর্টিকালচার সেন্টারের উপপরিচালক দীপংকর দাশ জানালেন, যশোর হর্টিকালচার সেন্টারে মোট ৩০ জাতের আমগাছ আছে। এই জাতের গাছটি নতুন। বছর তিনেক আগে সীমাখালীর এক নার্সারি থেকে চারা এনে এখানে লাগানো হয়। দুই বছর ধরে গাছে ফল ধরছে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফলের সংখ্যাও বাড়ছে। গত বছর গাছটি থেকে সর্বোচ্চ তিন কেজি ওজনের আম পাওয়া গিয়েছিল। সেন্টারে এই জাতের চারা তৈরি করা হচ্ছে, বিক্রিও হচ্ছে।
ছাদেও এ জাতের আমগাছ লাগানো যায়। আমিনুল ইসলামের ধারণা, এটিই বিশ্বের বৃহত্তম আম।
প্রথম কবে ও কীভাবে ব্রুনেই কিং এ দেশে এল, তা নিয়ে কথা হলো সে সময়ে মাগুরা হর্টিকালচার সেন্টারে থাকা কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানালেন, মাগুরার শালিখায় শতখালী গ্রামের জনৈক নার্সারিকর্মী আতিয়ার তাঁর নার্সারিতে ২০১০-১১ সালের দিকে এ জাতের আম লাগিয়ে ফল ধরাতে সক্ষম হন। তাঁর এক ভাগনে চাকরি করতেন ব্রুনেইয়ে। সেখান থেকে গাছের একটি ডাল তিনি এনে তাঁকে দেন। সেটির কলম করে নার্সারিতে লাগানো হয়েছিল। সে গাছে পাঁচ কেজি ওজন পর্যন্ত আম ধরানো গেছে।
আতিয়ারের কাছ থেকে ২০১৩ সালে এক টুকরা ডাল নিয়ে মো. আমিনুল ইসলাম মাগুরা হর্টিকালচার সেন্টারে কলম করে গাছ তৈরি করেন। সে গাছে ২০১৬ সালে প্রথম আম ধরে। সে গাছে তিনি সর্বোচ্চ সাড়ে চার কেজি ওজনের আম পেয়েছেন। তাঁর অভিজ্ঞতা হলো স্বাভাবিক সময়েই গাছে মুকুল আসে, কিন্তু পাকে শ্রাবণ-ভাদ্র মাসে। আম বছরে একবারই ধরে। কাঁচা আমের স্বাদ তত টক নয়। পাকা আম টক নয়, খুব মিষ্টিও নয়। আমের খোসা পুরু বলে পোকা তেমন ধরে না।
ছাদেও এ জাতের আমগাছ লাগানো যায়। আমিনুল ইসলামের ধারণা, এটিই বিশ্বের বৃহত্তম আম।
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫