ফরিদপুরে পৌর আওয়ামী লীগের ছয়টি সমাবেশই বন্ধের নির্দেশ জেলা কমিটির

প্রকাশকালঃ ২৮ মে ২০২৩ ০৬:১৮ অপরাহ্ণ ১৮০ বার পঠিত
ফরিদপুরে পৌর আওয়ামী লীগের ছয়টি সমাবেশই বন্ধের নির্দেশ জেলা কমিটির

রিদপুরে বিবদমান পৌর আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষের উদ্যোগে আজ রোববার বিকেলে একই সময়ে কাছাকাছি দূরত্বে পৃথকভাবে ছয়টি সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছিল। তবে সব কটি সমাবেশ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। গতকাল শনিবার রাত ১১টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক ও সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক যৌথ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

ওই চিঠিতে কর্মসূচিগুলো বন্ধ ঘোষণা করে নেতা–কর্মীদের নিজ নিজ অভিযোগ আজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার মধ্যে শহরের থানা রোডের দলীয় কার্যালয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অথবা সাধারণ সম্পাদক বরাবর লিখিত আকারে জানাতে বলা হয়েছে।

জানতে চাইলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক প্রথম আলোকে বলেন, সমাবেশগুলো নিয়ে যেতে সমস্যা না হয়, এ জন্য কেন্দ্রীয় নেতারা ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগ যোগাযোগ করে যাচ্ছে।


সমাবেশের আহ্বানকারীরা জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেনি দাবি করে ইশতিয়াক বলেন, ‘আজকাল রাজনীতি কেউ কম বোঝে না। আমরা কাউকে সভা আহ্বানের জন্য মদদ দিইনি। জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সব কটি সমাবেশ বন্ধ করে তাঁদের নিজ নিজ অভিযোগগুলো লিখিত আকারে জানানোর জন অনুরোধ করেছি।’

এদিকে দেশব্যাপী বিএনপির নৈরাজ্য, সন্ত্রাস ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় আকস্মিকভাবে পাঁচটি সমাবেশের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর আগে ২৩ মে পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মনিরুল হাসান–সমর্থিত অংশ শহরের ব্রাহ্মসমাজ সড়কে আজ বিকেলে সমাবেশের ডাক দেয়। ওই সমাবেশকে কেন্দ্র করে পূর্বনির্ধারিত স্থানে গতকাল সকাল থেকেই মঞ্চ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। তবে অন্য পাঁচটি সমাবেশের কোনো প্রস্তুতি দেখা যায়নি।


ব্রাহ্মসমাজ সড়ক থেকে আনুমানিক ১০০ মিটার দূরে অম্বিকা ময়দানে আকস্মিকভাবে একই দাবিতে সমাবেশ ডেকেছে পৌর আওয়ামী লীগের ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক সহিদউদ্দিন আহমেদ–সমর্থিত অংশ।  এ ছাড়া সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের মাঠে পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নামে, এর পাশে তিন রাস্তার মোড়ে চাঁদনী বিউটি পারলারের পাশে পৌর যুব মহিলা আওয়ামী লীগের নামে, ফরিদপুর প্রেসক্লাব চত্বরে পৌর শ্রমিক লীগের নামে এবং জনতা ব্যাংকের মোড়ে পৌর মহিলা আওয়ামী লীগের নামে সমাবেশ আহ্বান করা হয়েছে।


তবে আজ সকাল ১০টা থেকে জনতা ব্যাংকের সামনের এলাকা, ফরিদপুর প্রেসক্লাব, অম্বিকা ময়দান, রাজেন্দ্র কলেজসংলগ্ন তিন রাস্তার মোড় ও ব্রাহ্মসমাজ সড়ক ঘুরে এই পাঁচটি সমাবেশের কোনো আয়োজন দেখা যায়নি। তবে মনিরুল হাসান-সমর্থিত অংশের ডাকা সমাবেশের ব্যাপক প্রস্তুতি দেখা গেছে। সড়কের সিংহভাগ অংশজুড়ে ইতিমধ্যে প্যান্ডেল নির্মাণ করা হয়েছে। প্যান্ডেলের নিচে চেয়ার বসানোর কাজ চলছে।

জেলা আওয়ামী লীগের চারজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগ বর্তমানে দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। এর মধ্যে এক পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জেলা আওয়ামী লেীগের সভাপতি শামীম হক। তাঁর সঙ্গে আছেন সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ইশতিয়াক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস। অপর অংশের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বিপুল ঘোষ। তাঁর পক্ষে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি এ কে আজাদ, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফারুক হোসেন প্রমুখ।


এর মধ্যে গত ১৭ মে ফরিদপুরের একটি হোটেলে শহর আওয়ামী লীগের একটি সভা হয়। এতে মনিরুল হাসানের বিরোধী নেতা-কর্মীরা সমবেত হয়ে মনিরুল হাসানকে বহিষ্কার করে ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক সহিদ উদ্দিন আহমেদকে পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হিসেবে ঘোষণা দেয়। ওই সভায় অংশ নেওয়া নেতা–কর্মীরা দাবি করেন, ৬৩ সদস্যবিশিষ্ট পৌর আওয়ামী লীগের ৪২ জন সদস্যের সমর্থন নিয়ে তাঁরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই বিভাজনের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে মনিরুল হাসানের আজকের সমাবেশ নিয়ে। এ সামবেশকে বানচাল করতে এবং প্রশাসন যেন ১৪৪ ধারা জারি করেন, এ জন্য হঠাৎ করে গতকাল পাঁচটি সমাবেশ আহ্বান করা হয়েছে বলে ধারণা করছেন তাঁরা।

আজকে বিকেলে ডাকা সমাবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে পৌর আওয়ামী লীগের একাংশের নেতা সহিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা সমাবেশ করব কি না, এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেইনি। তবে নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরে বিষয়টি জানানো হবে।’

কেন্দ্রীয় নেতা বিপুল ঘোষ (মনিরুল হাসানের সমর্থক) প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের পূর্বনির্ধারিত সমাবেশ যেন বাতিল হয়, এ জন্য একই সময়ে পাঁচটি সমাবেশ ডাকা হয়েছে, যেন প্রশাসন সব সমাবেশ বন্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি করেন। তবে সে সুযোগ নেই। যথারীতি আমরা আমাদের সমাবেশ করব। তবে যারা আমাদের সমাবেশ বানচাল করতে পাঁচটি জায়গায় সমাবেশ ডেকেছে, তাদের পায়ের নিচে মাটি নেই, এটা প্রমাণ হয়ে গেছে।’