চট্টগ্রামে প্রকাশ্যে একের পর এক গুলিবর্ষণ, আতঙ্কে নগরবাসী
অনলাইন ডেস্ক:
চট্টগ্রাম নগরীতে প্রকাশ্যে একের পর এক গুলিবর্ষণের ঘটনায় জনমনে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সশস্ত্র তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় প্রার্থী ও সাধারণ মানুষের মধ্যেও উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে। চাঁদা দাবি থেকে শুরু করে নির্বাচনি গণসংযোগ—বিভিন্ন ঘটনায় শুটারদের প্রকাশ্য উপস্থিতি উদ্বেগজনক রূপ নিয়েছে। অধিকাংশ ঘটনায় জড়িত শুটাররা এখনো অধরা থাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার দাবি করেছেন, নগরীতে পুলিশ ছাড়া অন্য কোনো সশস্ত্র বাহিনীকে তৎপর থাকতে দেওয়া হবে না। শুটারদের গ্রেপ্তারে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এক দিনে দুই স্থানে গুলিবর্ষণ
সাম্প্রতিক সময়ে এক দিনে নগরীর দুই এলাকায় প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণের ঘটনায় ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। গত ১৪ ডিসেম্বর মধ্যরাতে বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন কুলগাঁও এলাকায় ছাত্রদলের এক সাবেক নেতার বাড়ির সামনে সন্ত্রাসীরা অস্ত্র উঁচিয়ে ফাঁকা গুলি ছোড়ে। মুহুর্মুহু গুলির শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। স্থানীয়দের অভিযোগ, শীর্ষ সন্ত্রাসী ছোট সাজ্জাদের অনুসারীরা এ ঘটনায় জড়িত। তবে ছয় দিন পেরিয়ে গেলেও শুটারদের কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
গুলিবর্ষণের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ঘটনাটি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। স্থানীয়রা জানান, উত্তর কুলগাঁও এলাকায় সীমানা দেয়াল নির্মাণকে কেন্দ্র করে বিরোধের জেরে ওই বিএনপি নেতার পরিবারের কাছে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। চাঁদা না পেয়ে চার শুটার মধ্যরাতে বাড়ির সামনে গিয়ে ১৫ থেকে ২০ রাউন্ড গুলি ছুড়ে পালিয়ে যায়।
বায়েজিদ বোস্তামী থানার ওসি জসিম উদ্দিন বলেন, ঘটনাটি সম্পর্কে পুলিশ অবগত রয়েছে। থানায় লিখিত অভিযোগ না পেলেও ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে জড়িতদের শনাক্তে অভিযান চালানো হচ্ছে।
পাঁচলাইশে দিনের বেলায় সন্ত্রাসী হামলা
একই দিনে ১৪ ডিসেম্বর নগরীর পাঁচলাইশ থানাধীন হামজারবাগ এলাকায় ব্যস্ত সড়কে আরেকটি গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। মুরাদপুর-অক্সিজেন সড়কের পাশে একটি নির্মাণাধীন ভবনে চাঁদা দাবিকে কেন্দ্র করে সন্ত্রাসীরা অস্ত্র উঁচিয়ে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এ সময় আতঙ্কিত শ্রমিকরা দৌড়ে পালিয়ে যান। ঘটনার ১ মিনিট ৫৯ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ১৭ ডিসেম্বর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
স্থানীয়দের ফোনে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও সন্ত্রাসীরা ততক্ষণে পালিয়ে যায়। পরে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে গত ১৮ ডিসেম্বর দিদার (৩৬) নামে একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পাঁচলাইশ থানার ওসি মোহাম্মদ সোলাইমান জানান, গ্রেপ্তার দিদারের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, ম্যাগাজিন, ১২ রাউন্ড গুলি ও ৯টি শটগানের কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে। তার দেওয়া তথ্যে একটি পরিত্যক্ত ভবন থেকে আরও অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।
নির্বাচনি সহিংসতার ছায়া
নগরীতে শুটারদের প্রকাশ্য তৎপরতা শুরু হয় গত ৫ নভেম্বর। ওই দিন বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন চালিতাতলী এলাকায় বিএনপির চট্টগ্রাম-৮ আসনের প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর গণসংযোগ চলাকালে গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে। এতে তিনি ও আরও পাঁচজন গুলিবিদ্ধ হন। ওই ঘটনায় শীর্ষ সন্ত্রাসী সারোয়ার হোসেন বাবলা নিহত হলেও মূল শুটার এখনো শনাক্ত বা গ্রেপ্তার হয়নি।
একের পর এক গুলিবর্ষণের ঘটনায় নগরবাসীর মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের তৎপরতা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫