ঢাকা প্রেস
সিরাজুল ইসলাম রতন,স্টাফ রিপোর্টার:-
গাইবান্ধা পলাশবাড়ী উপজেলার সাব রেজিস্ট্রার অফিসে ভূমি রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে নিয়মনীতি উপেক্ষা করে দলিল লেখক সমিতির অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও বেপরোয়া চাঁদাবাজি ব্যাপক হারে বৃদ্ধির অভিযোগ উঠেছে। সমিতির হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার জমির ক্রেতা-বিক্রেতারা।
দলিল রেজিস্ট্রেশন করতে গেলে সরকারি নিয়মনীতি উপেক্ষা করে সমিতির নামে একটি নির্ধারিত হারে চাঁদা আদায় করছে। ভূমি রেজিস্ট্রেশনের যাবতীয় খরচের টাকা আদায়ও হচ্ছে সমিতির মাধ্যমে। সাধারণ দলিল লেখকরাও জিম্মি হয়ে পড়েছেন সমিতির নেতাদের কাছে। তারা সমিতির বাইরে গিয়ে কোনো ভূমি রেজিস্ট্রেশন করতে পারছেন না।
রেজিস্ট্রি অফিসকে জিম্মি করে সরকারি নির্ধারিত ফিসের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে সমিতি। সাধারণ ও নিরীহ মানুষ অতিরিক্ত টাকা দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। জমির ক্রেতা ও বিক্রেতাদের জিম্মি করে আদায়কৃত টাকা ভাগ করে নিচ্ছেন সমিতির নেতারা থেকে শুরু করে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ও স্থানীয় কিছু নেতৃবৃন্দ।
সরেজমিন গিয়ে পলাশবাড়ী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সমিতির কাছে জমির দাতা ও গ্রহীতাদের জিম্মি দশার ভয়াবহ চিত্র পাওয়া গেছে। সমিতির বিনা অনুমতিতে সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে কোনো জমি রেজিস্ট্রি হয় না বলে ব্যাপক অভিযোগ আছে।
সাধারণ দলিল লেখকদেরও সমিতির বিনা অনুমতিতে দলিল করার সেই ক্ষমতা নেই। দলিল লেখার যাবতীয় টাকা দিতে হয় সমিতিকে। তারপর সমিতির গোপনীয় একটি সাংকেতিক চিহ্ন ব্যবহার করার পরই দলিল যায় সাব-রেজিস্ট্রারের টেবিলে।
সেখানেও প্রতি টেবিলে দলিল প্রতি ১০০ থেকে ২০০ টাকা এবং ভূমির শ্রেণী পরিবর্তন ও কাগজের ত্রুটি থাকলে সংশ্লিষ্ট করণিক সাব-রেজিস্ট্রারের সঙ্গে শলাপরামর্শ করে প্রকারভেদে আদায় করেন লাখ টাকা পর্যন্ত। এমনটাই বলছেন ভুক্তভোগী ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক দলিল লেখক।
চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত
প্রায় ৩ হাজার দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছে এ অফিসে। আরও জানা যায়, এ অফিসে সনদপ্রাপ্ত দলিল লেখক রয়েছেন ৯২ জন। সমিতিভুক্ত রয়েছেন ৯২ জন
আইন অনুযায়ী দলিল লেখকরা দলিল লেখার বিনিময়ে প্রতি পৃষ্ঠা বাবদ ও সরকারি ফি’র হার নির্ধারণ করে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সামনে একটি করে তালিকা টানিয়ে রাখার নির্দেশনা রয়েছে। এ ছাড়া লাইসেন্সধারী কোনো দলিল লেখক আইন লঙ্ঘন করলে সাব-রেজিস্ট্রার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবেন। কিন্তু পলাশবাড়ীতে এসব নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। সাব-রেজিস্ট্রারও সমিতির অনিয়ম, দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির সঙ্গে অনেকটা তাল মিলিয়ে চলছেন।
দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম রানা জানান, ‘কোনো অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয় না। তবে দলিল প্রতি সমিতির জন্য ৫০০ থেকে ১৫০০ টাকা করে নিয়ে থাকেন বলে স্বীকার করেন।’
ভুক্তভোগীরা দলিল লেখক সমিতির সীমাহীন অনিয়ম দুর্নীতি বন্ধে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্রনালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
