বাপা বলেছে, দেশের ভেতরে কৃষিপণ্য সংগ্রহ করতে গেলেই ২ থেকে ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর দিতে হয়। এতে দেশের কৃষি খাত ক্ষতির মুখে পড়ছে।
দেশের কৃষকদের কাছ থেকে কৃষিপণ্য কেনার ক্ষেত্রে অগ্রিম আয়কর কর্তনে অব্যাহতি দাবি করেছে বাংলাদেশ অ্যাগ্রো-প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা)। কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রপ্তানিকারকদের সংগঠনটি বলছে, বেশির ভাগ কৃষিপণ্যের আমদানি পর্যায়ে উৎসে কর অব্যাহতি আছে।
তবে দেশের ভেতরে কৃষিপণ্য সংগ্রহ করতে গেলেই ২ থেকে ৫ শতাংশ অগ্রিম আয়কর দিতে হয়। এর মাধ্যমে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমদানিতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। তাতে দেশের কৃষি খাত ক্ষতির মুখে পড়ছে।
আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রস্তাব দিয়েছে বাপা। একই সঙ্গে সংগঠনটি করপোরেট কর কমানো; নগদ ক্রয়ের সীমা বৃদ্ধি; রুটি, বনরুটি, কেক ও বিস্কুটে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) অব্যাহতির সীমা বৃদ্ধি; শুল্কমুক্ত সুবিধায় মোড়কজাত পণ্য (প্যাকেজিং) আমদানি এবং নগদ সহায়তার মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়ানোসহ বেশ কিছু দাবি জানিয়েছে।
কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য গত কয়েক বছর ধরে দেশের পণ্য রপ্তানিতে আশা দেখাচ্ছে। গত ২০২০-১১ অর্থবছরে এই খাতের রপ্তানি ছিল ৩৩ কোটি ডলার, যা এর পরের ২০২১–২২ অর্থবছরে বেড়ে ১১৬ কোটি ডলারে উঠেছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে অবশ্য এই খাতের রপ্তানি ২৮ শতাংশ কমে ৬৯ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
রপ্তানিকারকেরা বলছেন, কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের চাহিদা দুনিয়াজুড়েই আছে। দিন দিন সেটি বাড়ছে। এই খাতের রপ্তানি বাড়াতে হলে তৈরি পোশাকের মতো বন্ডেড ওয়্যারহাউসের মাধ্যমে শুল্কমুক্ত সুবিধায় প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপকরণ এবং প্যাকেজিং বা মোড়কজাত পণ্য আমদানির সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন। বর্তমানে রপ্তানির বিপরীতে ব্যবহৃত কাঁচামালের ওপর পরিশোধিত শুল্ক-কর ফেরত দেওয়ার বিধান থাকলেও তা সহজে পাওয়া যায় না। ফলে রপ্তানিকারকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
করপোরেট কর ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে সর্বনিম্ন ৩ শতাংশ, সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ করার দাবি বাপার। সংগঠনটি বলছে, বর্তমানে তৈরি পোশাক, বস্ত্র ও পাটজাত পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ এবং পোলট্রি ফিড, ফিশ ফিড, দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদনকারীদের জন্য ৩ থেকে ১৫ শতাংশ করপোরেট কর প্রযোজ্য।
তবে কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যশিল্পকে সরকার অগ্রাধিকারমূলক খাত হিসেবে চিহ্নিত করলেও করপোরেট কর ৩০ শতাংশ ধার্য করা হয়েছে। কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের মূল্য নিশ্চিতকরণ, স্বল্প খরচে উন্নত ও গুণগত মানের পণ্য ভোক্তাদের কাছে সরবরাহ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং শিল্পটির সম্প্রসারণের জন্য করপোরেট কর কমানো প্রয়োজন।
বর্তমানে কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রপ্তানিতে ২০ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়া হয়। সেটির মেয়াদ ৩০ জুন শেষ হচ্ছে। এই সহায়তা বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করার পাশাপাশি আগামী পাঁচ বছর তা অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছে বাপা। সংগঠনটি বলছে, বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দায় কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের রপ্তানি বৃদ্ধির গতি হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে রপ্তানি বাড়াতে নগদ সহায়তা বৃদ্ধি করা দরকার।