রিফাইন্ড আ.লীগের জন্য চাপ দেওয়ার বিষয়টি আমাকে মনে হয়নি: সারজিস আলম

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ২৩ মার্চ ২০২৫ ০১:২৮ অপরাহ্ণ   |   ১১৬ বার পঠিত
রিফাইন্ড আ.লীগের জন্য চাপ দেওয়ার বিষয়টি আমাকে মনে হয়নি: সারজিস আলম

ঢাকা প্রেস নিউজ


সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সেনানিবাসে সেনাপ্রধানের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে সম্প্রতি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহর স্ট্যাটাসের পর, নিজের অবস্থান তুলে ধরেছেন এনসিপির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম।

 

রোববার দুপুরে, সারজিস আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ওই বৈঠক সম্পর্কে বিস্তারিত পোস্ট করেছেন।
 

ফেসবুক স্ট্যাটাসে সারজিস আলম বলেছেন:

১১ মার্চ সেনাপ্রধানের সাথে সাক্ষাৎ নিয়ে কিছু সংশোধন, সংযোজন ও বিয়োজন:

সেদিন হাসনাত ও আমি সেনাপ্রধানের সাথে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলাম। আমাদের দলের আরেক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য আসার কথা ছিল, কিন্তু কিছু ব্যক্তিগত কারণে তিনি আসতে পারেননি। প্রথমেই আমি স্পষ্ট করতে চাই, আমাদের সেনানিবাসে ডাকা হয়নি। বরং সেনাপ্রধানের মিলিটারি এডভাইজারের সঙ্গে প্রয়োজনের সময়ে ম্যাসেজের মাধ্যমে কিছু প্রশ্ন ও উত্তর আদান-প্রদান হয়েছিল।

 


 

যেদিন সেনাপ্রধান পিলখানা হত্যাকাণ্ড দিবসে কড়া ভাষায় বক্তব্য রেখেছিলেন এবং বলেছিলেন, 'এনাফ ইজ এনাফ', তখন আমি সেনাপ্রধানের মিলিটারি এডভাইজারকে প্রশ্ন করেছিলাম, “আপনাদের দৃষ্টিতে কি কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু রয়েছে?” সেনাপ্রধানের বক্তব্য বেশ সরাসরি এবং কঠিন মনে হচ্ছিল। তিনি বলেছিলেন, "তোমরা কি এ বিষয়ে সরাসরি কথা বলতে চাও?" আমি বললাম, "হ্যাঁ, বলা যেতে পারে।” এরপর আমাদের সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। সেনাভবনের সেই রুমে আমরা তিনজনই ছিলাম: সেনাপ্রধান, হাসনাত এবং আমি।

 


 

প্রত্যেক ব্যক্তি একে অপরের অভিমত ভিন্নভাবে গ্রহণ করে। হাসনাত সেদিন সেনাপ্রধানের বক্তব্যকে যেভাবে রিসিভ করেছে এবং ফেসবুকে লিখেছে, আমার কিছুটা দ্বিমত আছে। আমি মনে করি, আমি সেদিনের বক্তব্যকে সরাসরি ‘প্রস্তাব’ হিসেবে দেখি না, বরং এটি ছিল ‘অভিমত প্রকাশ’। 'অভিমত প্রকাশ' এবং 'প্রস্তাব দেওয়া' দুটি ব্যাপার আলাদা। যদিও সেনাপ্রধান সেদিন অনেকটা সরাসরি এবং দৃঢ় ভাষায় কথা বলেছিলেন।

 


 

এছাড়া, “রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের জন্য চাপ দেওয়া” বিষয়টি আমি ততটা অনুভব করিনি। বরং, সেনাপ্রধান এই বিষয়ে বলছিলেন যে, যদি রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ না আসে, তবে দীর্ঘমেয়াদে দেশের পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে সমস্যার সৃষ্টি হবে, সে ব্যাপারে তিনি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন।
 

হাসনাতের ফেসবুক স্ট্যাটাসে যে বিষয়গুলো এসেছে, যেমন “রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ, সাবের হোসেন, শিরিন শারমিন চৌধুরী, সোহেল তাজ” ইত্যাদি, সেগুলোর মধ্যে আলোচনা হয়েছিল। তবে, আমি মনে করি, এই কনভারসেশনটি ততটা এক্সট্রিম ছিল না। তবে, অন্য যে কোনো দিনের তুলনায়, এটি অনেকটা সরাসরি এবং আত্মবিশ্বাসী ছিল।
 

হাসনাত তার বক্তব্যে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করেছে, যেখানে একজন প্রতিপক্ষ তাকে বলেছেন, “ইউ পিপল নো নাথিং। ইউ ল্যাক উইজডোম অ্যান্ড এক্সপিরিয়েন্স। উই আর ইন দিজ সার্ভিস ফর এটলিস্ট ফোর্টি ইয়ার্স।” এই কনভারসেশন সত্যি হলেও, যখন সেনাপ্রধান রুম থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন, তখন এটি হয়েছিল। সেনাপ্রধান রেগে গিয়ে এমন কথা বলেননি, বরং সিনিয়র কেউ জুনিয়রদের অভিজ্ঞতার গুরুত্ব বোঝানোর চেষ্টা করেছেন।
 

এছাড়া, "হাসনাত না ওয়াকার" এই ন্যারেটিভ এবং স্লোগান আমি প্রত্যাশা করি না। জাতীয় নাগরিক পার্টি এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে একে অপরের বিপরীতে দাঁড় করানো কখনোই উচিত নয়। সেনাপ্রধানের পদত্যাগ বিষয়ে যে কথাবার্তা উঠেছে, তা আমাদের বক্তব্য নয়।
 

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়, দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাথে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর যোগাযোগ রক্ষা করা হয়ে থাকে। আমাদের সেদিন সেনাপ্রধানের সঙ্গে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তা নিয়ে আমরা দলের ফোরামে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম। তবে, ফেসবুকে বিষয়গুলো প্রকাশ করা আমাদের জন্য অনুচিত মনে হয়েছে, কারণ এতে পরবর্তীতে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় আস্থা সংকট দেখা দিতে পারে।
 

অবশেষে, আমি বিশ্বাস করি যে, আমাদের আত্মসমালোচনা এবং বিবেকবোধই আমাদের সঠিক পথে পরিচালিত করবে। যেভাবে আমরা অতীতে দেশের স্বার্থে লড়াই করেছি, ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।
 

নোট: আমাদের লড়াই হবে 'আওয়ামী লীগের যেকোনো ভার্সন' বাংলাদেশে রাজনীতিতে প্রবেশের বিরুদ্ধে।