৪০০ বছরের মসজিদ দেখতে আসে দূর-দূরান্তের মানুষ

আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
প্রাচীন এবং ক্ষুদ্র আয়তনের মসজিদের মধ্যে এটি হলো কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার মসজিদেরপাড় এলাকার দুই কাতার/তিন গম্বুজ মসজিদ। প্রাচীনকালের সাক্ষী ওই মসজিদের নামানুসারে গ্রামের নাম রাখা হয়েছে মসজিদেরপাড় গ্রাম। মসজিদটির বিভিন্ন জায়গায় মোগল আমলের স্থাপত্যশিল্পের ছাপ অঙ্কিত ছিল। এটি কত সালে নির্মিত, সে সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এটির স্থাপত্যশৈলীসহ বিভিন্ন দিক থেকে ধারণা করা হয় এটি সাড়ে ৪০০ বছর পূর্বের মোগল আমলের একটি স্থাপনা।
বৃহস্পতিবার সরেজমিন উপজেলা শহর থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার উত্তরে মসজিদেরপাড় গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ধূসর বর্ণের পাথরে অসাধারণ নির্মাণশৈলীর তিন গম্বুজের এই মসজিদটি। উত্তর-দক্ষিণে ৪০ ফুট ও পূর্ব-পশ্চিমে ২০ ফুট আয়তনের তিন গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদের সামনে তিনটি দরজা এবং উত্তর ও দক্ষিণমুখো দুটি জানালা আছে। দরজা ও জানালা থেকে বোঝা যায় এটির দেয়ালগুলো প্রায় ৫ ফুট চওড়া। দেয়ালের গাঁথুনিতে ব্যবহার করা হয়েছে পাতলা ধরনের ইট ও টালির সঙ্গে চুন-সুরকি। চুন-সুরকির সঙ্গে এক ধরনের ডালও মেশানো হয়েছে বলে অনেকের ধারণা। ভেতরের দেওয়ালে আঁকা ছিল নানা ধরনের লতাপাতা ও ফুলের কারুকাজ যা প্রায় নষ্ট হয়ে যাওয়ার পথে।
মসজিদের সামনে ছিল বিশালাকৃতির একটি কূপ। কূপের গাঁথুনিও ছিল পাতলা আকৃতির ইট ও টালি যা চুন-সুরকি দিয়ে আটকানো। বালতি দিয়ে কূপ থেকে পানি তুলে ওজু করতেন নামাজের জন্য আসা মুসল্লিরা। মসজিদটির ভেতরে দুই কাতারে ৪০জন একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন।
এলাকায় মুসল্লির সংখ্যা বাড়তে থাকায় মসজিদে জায়গা সংকুলান হচ্ছিল না। এজন্য ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে এলাকাবাসী উদ্যোগ নিয়ে পুরাতন মসজিদের সঙ্গে মিল রেখে সামনে প্রায় ৩০ ফুট বৃদ্ধি করেন।
প্রাচীন এই মসজিদটিতে জিনের অবস্থান ছিল বলেও অনেকের ধারণা। আজান দিতে আসা দুই মুয়াজ্জিনকে থাপ্পড় মেরে অজ্ঞান করার মতো ঘটনাও ঘটেছে বলে অনেকে জানান। প্রাচীন মসজিদ এবং মসজিদকে ঘিরে নানা অলৌকিক ঘটনা কথিত থাকায় জটিল রোগ থেকে মুক্তি ও কাজে সফলতার জন্য এ মসজিদে মানতের প্রচলন অনেক দিনের। আর সে কারণে মানতে বিশ্বাসীরা অনেক দূরদূরান্ত থেকে বিভিন্ন প্রকার মানত সামগ্রী নিয়ে প্রতি শুক্রবার এখানে আসেন।
মসজিদেরপাড় মসজিদ সংলগ্ন বাসিন্দা মোঃ মোন্তাজ আলী (৮৫), চা-বিস্কুট বিক্রেতা জানান, মসজিদটি পুরাতন হওয়ায় এখানে শুক্রবারের নামাজ পড়তে অনেক মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন। এর মধ্যেই অনেকের সঙ্গে বিভিন্ন প্রকার মানতের সামগ্রী দেখতে পাওয়া যায়। বাবার মুখে শুনেছি, মসজিদটির বয়স প্রায় সাড়ে ৪০০ বছর।
মোঃ সাহেব আলী (৫৫) জানান, এই এলাকার প্রবীণ মানুষ আমার জ্যাঠা ইমাম উদ্দিন। বর্তমানে তার বয়স ১০৬ বছর। তার নিকট মসজিদ সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম। তিনি আমাকে জানিয়েছেন, আমাদের দাদার নিকট মসজিদের জন্ম কথা জানতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তিনিও এর সম্পর্কে কিছু জানতেন না। তবে কারুকাজ এবং বিভিন্ন দিক বিবেচনায় এটি সাড়ে ৪০০ বছর আগের মোগল আমলের হতে পারে বলে তারা জানান।
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫