কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে সরকার কিন্তু অবকাঠামো উন্নয়নের শূন্য বাজার
প্রকাশকালঃ
১১ জুন ২০২৪ ১১:৩৬ পূর্বাহ্ণ ৬৬৬ বার পঠিত
গত প্রায় ৩০ বছর ধরে বাজারের একটি মহালের সড়কে পড়ে রয়েছে ময়লার ভাগাড়। অপরাপর সড়কে চলাচল দায়। নিষ্কাশনের কোনো পথ নেই। তাই সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। ময়লা আর্বজনা ও কাদায় একাকার। এর মধ্যেই প্রতিদিন বেচাকেনা চলছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী আঠারবাড়ি রায়ের বাজার হাটে। সোমবার সরেজমিনে ওই হাটে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা গেছে।
হাটের কয়েকজন ব্যবসায়ী, ক্রেতা ও হাটের ইজারাদার জানান, ধানসহ বিভিন্ন শাকসবজি, গরু-ছাগল ও গৃহস্থালী পণ্যের জন্য রায়ের বাজার হাটটি প্রসিদ্ধ। প্রতিদিনই এখানে হাট বসে। লাখ লাখ টাকা বেচাকেনা হয়। এটা জেলার সবচেয়ে বড় বাজার। এই হাট থেকে প্রতিবছর কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে সরকার। কিন্তু হাটের উন্নয়নের বিষয়ে সরকার কোনো নজর নেই।
জানা যায়,২০০২ সালে স্থানয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় বিভাগ থেকে জারি করা সরকারি হজাটবাজারের ইজারা পদ্ধতি,ব্যবস্থাপনা ও আয় বন্টন বিষয়ক নীতিমালা অনুযায়ি, হাট ইজারা শতকরা ১৫ টাকা সংশ্লিষ্ট হাটের রক্ষাণাবেক্ষণ ও উন্নয়ন কাজে খরচ করার কথা। তবে যেসব হাটে স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর উন্নয়ন মূলক কাজ করছে সেসব হাটে শতকরা ১৫ টাকার পরিবর্তে শতকরা ২৫ টাকা পর্যন্ত বরাদ্ধ দেওয়া যাবে।
আবার উপজেলার অসব হাটের বিক্রয় ছাউনি, নলকূপ, গণশৌচাগার উন্নয়নের কাজের জন্য ইজারার শতকরা ১০ টাকা উপজেলা উন্নয়ন তহবিলে জমা করতে হবে। এ ছাড়া ইজারারর শতকরা ৫ টাকা হাটটি যে ইউনিয়নে অবস্থিত সে ইউনিয়ন পরিষদকে অতিরিক্ত হিসাবে দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নান্দাইল-কেন্দুয়া আঞ্চলিক সড়কের পাশে ঘেষা এই হাটে রয়েছে স্থায়ী-অস্থায়ী মিলে হাজারের বেশি দোকান। বেশিরভাগ দোকানে নেই কোনো ছাউনি।
কাঁচা তরকারি, হাঁস-মুরগিসহ অস্থায়ী বিক্রেতাদের বসার কোনো সুবিধাও নেই। সরকারি শেডগুলো দখলে রেখেছেন প্রভাবশালী দোকানদার ও ইজারাদার। সকল জায়গাতেই ময়লা-আর্বজনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। বাজারের মূল সড়কসহ অভ্যন্তরীণ সংযোগ সড়কগুলো চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। স্থানীয় সদরঘাট এলাকায় যেতে হয় বাজারের পেঁয়াজ মহাল দিয়ে। সেখানের সড়কটির বেহাল ধসা। অনেকাংশে গত প্রায় ৩০ বছর ধরে পড়ে রয়েছে ময়লার ভাগার। পায়ে চলার সড়কটিও দখলে রয়েছে দোকানদারদের।
বর্তমান সময়ে বৃষ্টি হওয়ায় পানি জনে ময়লা আর্বজনা একাকার। অপর দিকে বাজারের পশ্চিম অংশে রয়েছে ঐতিহ্যবাহি তেলুয়ারি মসজিদ। এই সড়ক দিয়ে বাজারে প্রবেশ করা দায়। খানাখন্দে সড়কটির অবস্থা বেহাল। প্রতিদিনই এই সড়কে যাতায়াত করা যানবাহন দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে। বাজারের শুটকি মহালের কাছেই একটি জামে মসজিদ। তার পাশেই পরিত্যক্ত একটি মাছের সেডের পাশেই ফেলা হচ্ছে বাজারের ময়লা আর্বজনা। ফলে দুর্গন্ধে সয়লাব পুরো এলাকা।
বাজারের ইজারাদার আব্দুল বারিক জানান, গরুর হাট মিলে এই বাজারের চলতি বছর ডাকা হয়েছে একটি ১৩ লাখ। গত বছর ছিল ২ কোটির ও উপরে। এতো রাজস্ব পাওয়ার পর বাজারের কোনো উন্নয়ন নেই।হাটের ব্যবসায়ী ইদ্রিস আলী অভিযোগ করেন, অভ্যন্তরীণ সড়কগুলো সংস্কার না হওয়ার পাশপাশি পানি নিষ্কাশনের জন্য কোনো নালা না থাকায় পুরো বাজরই কাদাপানিতে একাকার হয়ে থাকে। ময়লা আবর্জনা ফেলার জন্য স্থায়ী ডাস্টবিন না থাকায় অনেকেই নিজ নিজ দোকানের আশপাশে ফেলে রাখে।
প্রয়োজনীয় সংখ্যক নলকূপ না থাকায় দোকানিরা পানির কষ্টে ভুগছেন। বর্ষকালে ক্রেতা –বিক্রেতাদের দুর্ভোগ চরমে উঠে। লেপ-তোষক ব্যবসায়ী বিল্লাল মিয়া বলেন, বছরে কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আয় হয় এ হাট থেকে। কিন্তু হাটের কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না। বিষয়টি জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি।
এ বিষয়ে আঠারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুবের আলম রূপক বলেন, ‘ইজারা বাবদ পাওয়া টাকা থেকে মাত্র ১০ শতাংশ বরাদ্দ রয়েছে হাট উন্নয়নের জন্য। এই টাকা দিয়ে সকল কিছু উন্নয়ন সম্ভব না। এ জন্য বিশেষ বরাদ্দ প্রয়োজন। এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তার বলেন, ‘আমি এই উপজেলায় গত সপ্তাহে যোগদান করেছি। তারপরও ওই বাজারে সরেজমিনে গিয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা নিব।’