হেনস্তার শিকার মুক্তিযোদ্ধা কানু অবশেষে মুখ খুলেছেন

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪ ০১:১১ অপরাহ্ণ   |   ১১৪ বার পঠিত
হেনস্তার শিকার মুক্তিযোদ্ধা কানু অবশেষে মুখ খুলেছেন

ঢাকা প্রেস নিউজ

 

সম্প্রতি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই ওরফে কানুকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করার ঘটনা দেশজুড়ে তোলপাড় তৈরি করেছে। ঘটনার পরপরই প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস এক বিবৃতিতে এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। রোববার (২২ ডিসেম্বর) রাত ১০টার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে নিন্দার ঝড় ওঠে।
 

ঘটনার পর থেকে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই গা ঢাকা দিয়ে ফেনী শহরে ছেলের বাসায় আশ্রয় নেন। অবশেষে তিনি প্রকাশ্যে এসে এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন।
 

তিনি বলেন, “আমাকে বিবস্ত্র করে ছবি তোলার চেষ্টা করা হয়েছে, লুঙ্গি ধরে টানাটানি করা হয়েছে। এভাবে শুধু আমাকে নয়, পুরো জাতির মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানহানি করার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই, সরকারের কাছে এবং পুরো জাতির কাছে।”
 

মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই আরও বলেন, “আমার তাদের সঙ্গে কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতা নেই। আমার একমাত্র ‘অপরাধ’ হতে পারে আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ ধারণ করি, আর এই আদর্শের প্রতি তাদের আক্রোশ থাকতে পারে।”
 

ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, “শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থ বোধ করায় বাজারের ফার্মাসিতে গিয়ে ডায়াবেটিস ও প্রেশার পরীক্ষা করাচ্ছিলাম। হঠাৎ আবুল হাশেম মজুমদার মোটরসাইকেল থেকে নেমে এসে আমার গলা ধরে টান দেয় এবং অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করতে থাকে। সে বলে, ‘আজকে তোকে ছাড়ব না, জীবনের শিক্ষা দিব।’ এরপর আমাকে জোর করে কুলিয়ারা স্কুল মাঠের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়।”
 

সাংবাদিকদের কাছে মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই সত্য উদঘাটনের দাবি জানিয়ে বলেন, “তারা আমাকে ৫টার মধ্যে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলেছে। হাশেম বলেছে, স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দে, না হলে তোকে টুকরো টুকরো করব। এমনকি ছুরি বের করে ভয় দেখিয়েছে।”
 

তিনি বিচার দাবি করে বলেন, “আমি চাই লুটতরাজের বিচার হোক। এই সরকারের সময়ে যদি ভালো মানুষরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে তারা কোথায় দাঁড়াবে? আমি কোথায় দাঁড়াব?”
 

এ সময় মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানু আরও প্রশ্ন তোলেন, “আমার মতো একজন প্রবীণ মুক্তিযোদ্ধাকে কেন এইভাবে মাঠে হেনস্তা করা হলো? কেন আমাকে লাথি-ঘুষি দেওয়া হলো? কেন পানিতে চুবানোর হুমকি দেওয়া হলো? কেন জুতার মালা গলায় পরানো হলো?”
 

ঘটনার সময় হাশেমের সঙ্গে ওহিদুর রহমান মজুমদার, রাসেল, নয়ন মজুমদারসহ আরও কয়েকজন ছিলেন বলে তিনি জানান।
 

উল্লেখ্য, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানু চৌদ্দগ্রাম উপজেলার লুদিয়ারা এলাকার বাসিন্দা এবং তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দীর্ঘ ৮ বছর ধরে তিনি সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের বিরোধিতার কারণে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন।