প্রকাশকালঃ
১০ মার্চ ২০২৪ ১২:১৫ অপরাহ্ণ ২১০ বার পঠিত
কয়েক মাসের টানাপড়েনের পর এবার রওশন এরশাদের নেতৃত্বে ভাঙল জাতীয় পার্টি (জাপা)। এ নিয়ে সপ্তমবারের মতো ভাঙল হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের গড়া এই দলটি। গতকাল শনিবার দলের জাতীয় সম্মেলনে রওশনের নেতৃত্বে নতুন কমিটি ঘোষণা দেওয়া হয়। নতুন কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন রওশন এরশাদ। দলের জ্যেষ্ঠ নেতা কাজী মামুনুর রশীদকে মহাসচিব নির্বাচিত করা হয়েছে। এ ছাড়া এরশাদের ছেলে রাহগীর আল মাহি এরশাদ ওরফে সাদ এরশাদকে দলের অন্যতম কো-চেয়ারম্যান করা হয়। রওশনের অবর্তমানে সাদ দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন।
দলের অন্যান্য পদের মধ্যে কাজী ফিরোজ রশীদ নির্বাহী চেয়ারম্যান, আবু হোসেন বাবলা সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান এবং সাহিদুর রহমান টেপা, শফিকুল ইসলাম, সাদ এরশাদ, গোলাম সরোয়ার ও সুনীল শুভরায়কে কো-চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয়েছে। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে গতকাল রওশনের নেতৃত্বাধীন জাপার জাতীয় সম্মেলনে এই আংশিক কমিটি গঠন করা হয়। নতুন কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে রওশন এরশাদ বলেন, ‘আদালতের রায় অনুযায়ী লাঙল আমার।’ তবে রওশনের নেতৃত্বাধীন কমিটিকে অনুমোদন দেয়নি নির্বাচন কমিশন। এরশাদের প্রতিষ্ঠিত জাতীয় পার্টি ছাড়াও দলটি ভেঙে জন্ম নেওয়া জেপি, বিজেপি ও বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি নামে তিনটি নিবন্ধিত দল রয়েছে।
জাতীয় পার্টি (জাফর) নামে আরেকটি অনিবন্ধিত দল সক্রিয় রয়েছে। অতীতে সক্রিয় ছিল জাতীয় পার্টি (জা-মো) এবং জাতীয় পার্টি (না-ফি) নামের দুটি অংশ। সম্মেলনের প্রতিক্রিয়ায় জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সাংবাদিকদের বলেন, এই সম্মেলন গঠনতন্ত্রবিরোধী। জি এম কাদেরের জাপাই মূলধারা। রওশন এরশাদ এখনো জি এম কাদেরের অংশের জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক পদে আছেন। সাদ এরশাদ আছেন যুগ্ম মহাসচিব। তাঁদের জাপা থেকে অব্যাহতি দেননি জি এম কাদের।
সম্মেলনে একমাত্র চমক ছিল জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপার উপস্থিতি। তিনি ছাড়া অন্য নেতারা আগে থেকেই রওশনের সঙ্গে রয়েছেন জি এম কাদের নেতৃত্বাধীন অংশ থেকে পদ হারিয়ে। জাপার ১৩ এমপির কেউ রওশনের সম্মেলনে আসেননি। কাউন্সিলে ছিলেন না রওশন এরশাদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা, দলের জ্যেষ্ঠ নেতা গোলাম মসীহ, এস এম এম আলম, ইকবাল হোসেন রাজুসহ অনেকে। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির দাবি, সারা দেশ থেকে ১২ হাজার কাউন্সিলর ও ডেলিগেট এসেছিলেন। সম্মেলন উপলক্ষে মৎস্য ভবন মোড় থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটক পর্যন্ত ছিল রওশনপন্থীদের শোডাউন। সম্মেলন ঘিরে ছিল পুলিশ ও র্যাবের নিরাপত্তা।
আমন্ত্রণ করা হলেও আওয়ামী লীগের কেউ রওশনপন্থীদের সম্মেলনে আসেননি। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষক শ্রমিক জনতা পার্টির সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, জেপির মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলামসহ কয়েকটি দলের নেতারা। ছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনের সহকারী রাষ্ট্রদূত ফেং জিজিয়া এবং কয়েকটি দেশের দূতাবাসের কর্মকর্তারা। গত ২৮ জানুয়ারি জি এম কাদেরকে অব্যাহতি দিয়ে নিজেকে জাপার চেয়ারম্যান ঘোষণা করেন রওশন। এরশাদের জীবদ্দশা থেকেই জাপায় রওশন এরশাদ এবং জি এম কাদেরের দ্বন্দ্ব ছিল।
দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে মাত্র ১১ আসন পেয়েছে জাপা। ভোটের পর দলটিতে ফের অস্থিরতা শুরু হয়। লাঙলের পরাজিত প্রার্থীরা সভা করে অভিযোগ তোলেন, জি এম কাদের ভোটে গিয়ে টাকা পেলেও অন্যদের দেননি। আওয়ামী লীগের কাছ থেকে আসন ছাড় না পাওয়া, ছাড় পেয়েও হেরে যাওয়া নেতারা জি এম কাদেরের সমালোচনায় মুখর হন। তাঁদের একটি অংশ যোগ দিয়েছে রওশনের সঙ্গে। আবার কয়েকজন ফিরে গেছেন জি এম কাদেরের জাপায়।সম্মেলনে রওশন এরশাদের নেতৃত্বাধীন অংশকে মূলধারা দাবি করেন রওশন এরশাদ। তিনি বলেন, সম্মেলন না হলে দল হারিয়ে যেত।
রওশন বলেন, ‘১৯৯৬ সালের নির্বাচনের পর লাঙল প্রতীক ধরে রাখতে আদালতে দাঁড়াতে হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট সেই সময়ে এরশাদ ও আমাকে লাঙল প্রতীক দিয়েছিলেন। এখনো তা জাতীয় পার্টির আছে। আগামী দিনেও থাকবে। এরশাদের জাতীয় পার্টিতে বিভেদ নেই। অতীতে যারা পার্টি ছেড়ে গেছে তারা কেউ এরশাদের নীতি আদর্শ নিয়ে যায়নি। তাই জাতীয় পার্টি ভেঙেছে বলে মনে করি না।’ রওশনের কমিটির অনুমোদন দেয়নি ইসি সম্মেলনের মাধ্যমে জাপা চেয়ারম্যান ও মহাসচিব নির্বাচন করে আংশিক কমিটি গঠনের বিষয়টি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) চিঠি দিয়েছিল রওশন এরশাদপন্থীরা। তবে এই নেতৃত্ব গঠনতন্ত্র অনুযায়ী হয়নি উল্লেখ করে তা অনুমোদন দেয়নি ইসি। গতকাল ইসির উপসচিব মো. মাহবুবুল আলম শাহ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানা গেছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে তাঁদের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী না হওয়ায় রওশনপন্থীদের আবেদন ইসিতে নামঞ্জুর হয়েছে। ইসিতে পাঠানো রওশনপন্থী অংশের মহাসচিব কাজী মো. মামুনুর রশীদ স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, জাতীয় পার্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা এবং একাদশ জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের গুলশানের বাসায় দলটির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের জরুরি বর্ধিত সভায় সর্বসম্মতিক্রমে পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে তাদের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
গতকালকের সম্মেলনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ‘জাতীয় পার্টির একটি অংশ বর্তমান কমিটির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের পরিবর্তন চেয়ে চিঠি দিয়েছিল। তাদের দাবি দলটির গঠনতন্ত্রের সঙ্গে বিরোধ রয়েছে। তাই আমরা তাদের দাবি নামঞ্জুর করেছি। এই বিষয়ে তারা যদি উচ্চ আদালত থেকে তাদের পক্ষে রায় নিয়ে আসে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’