ইরানে নারীদের পোশাকবিধি নিশ্চিত করতে ডিজিটাল নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ১৫ মার্চ ২০২৫ ০২:৩২ অপরাহ্ণ   |   ১৩৪ বার পঠিত
ইরানে নারীদের পোশাকবিধি নিশ্চিত করতে ডিজিটাল নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে

অনলাইন ডেস্ক:-

 

জাতিসংঘের এক তদন্ত প্রতিবেদনে জানা গেছে, ইরানে নারীদের বাধ্যতামূলক হিজাব পরিধান নিশ্চিত করতে ড্রোন, নজরদারি ক্যামেরা এবং বিশেষ মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারীদের পোশাকবিধি লঙ্ঘন ঠেকাতে এবং ভিন্নমত দমন করতে সরকার উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়িয়েছে।
 

তদন্তে জানানো হয়েছে, ইরানের নিরাপত্তা বাহিনী সাধারণ জনগণকে উৎসাহিত করছে যেন তারা নারীদের পোশাকবিধি লঙ্ঘনের তথ্য সরবরাহ করে।
 

প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, ইরানে নারীদের হিজাব পরিধান নিশ্চিত করতে বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যাপক নজরদারি চালানো হচ্ছে। ড্রোন এবং সিসিটিভি ক্যামেরা দিয়ে শহরের প্রধান রাস্তায় নারীরা হিজাব পরছেন কি না, তা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তেহরানের আমিরকবির বিশ্ববিদ্যালয়ে বসানো হয়েছে ফেসিয়াল রিকগনিশন সফটওয়্যার, যা শিক্ষার্থীদের চেহারা স্ক্যান করে এবং তাদের পোশাক পরীক্ষা করে। এছাড়া, নাজার (Nazer) নামক একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করেছে ইরানি পুলিশ, যার মাধ্যমে নাগরিকরা নারীদের পোশাকবিধি লঙ্ঘনের তথ্য জানাতে পারবেন।
 

বিশেষ নজরদারি চালানো হচ্ছে জনসাধারণের যানবাহনে, যাতে বাস, মেট্রো, ব্যক্তিগত গাড়ি এবং অ্যাম্বুলেন্সে কোনো নারী হিজাব পরছেন কি না, তা শনাক্ত করা যায়।
 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাজার অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা নির্দিষ্ট নারীদের বিষয়ে পুলিশকে তথ্য দিতে পারেন, এবং এরপর সংশ্লিষ্ট যানবাহনের মালিককে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়। একাধিকবার আইন লঙ্ঘিত হলে গাড়ি জব্দ করারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
 

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, হিজাববিধি লঙ্ঘন করলে নারীরা গ্রেপ্তার, মারধর এবং এমনকি পুলিশি হেফাজতে যৌন সহিংসতার শিকার হতে পারেন।
 

২০২২ সালে নীতি পুলিশের হেফাজতে ২২ বছর বয়সী কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুর পর ইরানে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, পুলিশি নির্যাতনের কারণেই তার মৃত্যু হয়, তবে ইরানের সরকার এ অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছে, মাসার মৃত্যু হৃদ্‌রোগজনিত কারণে ঘটেছে।
 

জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন জানায়, ২০২২ সালের বিক্ষোভের দুই বছর পরেও ইরানের নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইরানি কর্তৃপক্ষ নাগরিকদের নজরদারির কাজে যুক্ত করছে, যা ব্যক্তিগত গোপনীয়তার লঙ্ঘন।
 

এই প্রতিবেদনটি ১৮ মার্চ জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে উপস্থাপন করা হবে, যেখানে প্রায় ৩০০ জন ভুক্তভোগী নারী ও প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষাৎকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
 

বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইরানের এই বাধ্যতামূলক হিজাবনীতি ও কঠোর নজরদারি ব্যবস্থার বিরুদ্ধে নিন্দা জানিয়েছে এবং নারীদের অধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

সূত্র: বিবিসি