তীব্র দাবদাহে যা করবেন, যা করবেন না

বর্তমান সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং পরিবেশের ভারসাম্যের কারণে এই বছর এপ্রিল মাস থেকেই সারা দেশে তীব্র দাবদাহ বেড়েই চলছে। এই তীব্র দাবদাহ বেড়ে যাওয়ার ফলে মানবজীবনের দৈনন্দিন কাজ থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রেই স্থবিরতা এবং হঠাৎ করেই অসুস্থতা ও হিট স্ট্রোক, পানিশূন্যতা, ডায়রিয়া, হেপাটাইটিস ও ঠাণ্ডা, সর্দি-কাশি, এলার্জি ও ছত্রাক সংক্রমণ বা ত্বকের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এই অতিরিক্ত গরমের ফলে শিশু, বয়স্ক, ক্রনিক রোগে আক্রান্ত এবং যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম; যেমন—ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ এবং যারা খেটে খাওয়া শ্রমিক বা দিনমজুর তাদের সমস্যা বেশি হচ্ছে। শরীরে দুর্বলতা এবং শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে ঘাম ঝরার ফলে শরীরে পানিশূন্যতা খুব বেশি দেখা দিচ্ছে। অতিরিক্ত গরমে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে এবং অতিরিক্ত দাবদাহ থেকে একটু প্রশান্তি পেতে যা যা করা যায়—
১। বিশুদ্ধ পানি পান ও তরলজাতীয় খাবার, যেমন—ঘরে তৈরি বিভিন্ন ধরনের শরবত, ডাবের পানি ইত্যাদি পান করা যেতে পারে।
২। এই সময় রাস্তার পাশে বিক্রি করা শরবত বা পানি পান না করা সবচেয়ে নিরাপদ। কারণ এতে ডায়রিয়া, কলেরা বা হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
৩। গরমের সময় আমাদের শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ পানি ও ঘাম বের হয়ে যাওয়ার ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সময় পরিমাণমতো খাবার স্যালাইন খেলে তা শরীরকে সুস্থ রাখে। তবে যাদের আবার উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপ্রেশার আছে, তাদের খাবার স্যালাইন খেতে হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
৪। গরমে রেড মিট ও অত্যধিক তেলযুক্ত খাবার অবশ্যই পরিহার করতে হবে। যেমন—গরুর মাংস বা ছাগলের মাংস খাওয়া থেকে আমাদের বিরত থাকতে হবে। বিভিন্ন ধরনের অতিরিক্ত তেলে ভাজা বা মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে।
৫। গরমের সময় শরীরকে সুস্থ ও সতেজ রাখতে প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাক-সবজি খেতে পারেন। সবুজ শাক-সবজিতে অধিক পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল এবং খনিজ উপাদান থাকে বলে সবুজ শাক-সবজি খেলে অতিরিক্ত গরমেও শরীর সুস্থ থাকে।
৬। অতিরিক্ত গরমের সময় প্রতিদিন একবার হলেও গোসল করতে হবে। তবে গোসল করার সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে বাইরে থেকে ঘরে এসেই যেন গোসল না করা হয়। শরীরকে একটু বিশ্রাম দিয়ে তারপর গোসল করতে হবে।
৭। গরমে যথাসম্ভব ঘরে অবস্থান করা উচিত। প্রয়োজন না পড়লে ঘর থেকে অকারণে বের না হওয়াই উত্তম।
৮। গরমে শারীরিক পরিশ্রম সীমিত রাখা উচিত। গরমের সময় অতিরিক্ত ব্যায়াম স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
৯। গরমে পাতলা সুতি সাদা কাপড় পরিধান করা ভালো। সাদা কাপড় তাপ শোষণের পাশাপাশি তাপের প্রতিফলন ঘটায় বলে গরম কম লাগে।
১০। ধূমপান করলে শরীরের তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে বেড়ে যায়। অতিরিক্ত গরমে সুস্থ থাকার জন্য ধূমপান পরিহার করতে হবে।
১১। অতিরিক্ত গরমে চা, কফি বা অ্যালকোহল শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধির মাধ্যমে হিট স্ট্রোকের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই গরমের সময় চা, কফি বা অ্যালকোহল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
১২। অতিরিক্ত গরমে শরীর, মন-মেজাজ অল্পতেই খারাপ হয়। মনকে শান্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে।
লেখক : অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগ ও কোষাধ্যক্ষ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫