|
প্রিন্টের সময়কালঃ ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০২:৩৪ পূর্বাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৭:৪৭ অপরাহ্ণ

শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ছাত্রদল নেতা অবরুদ্ধ


শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ছাত্রদল নেতা অবরুদ্ধ


আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-


 

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের শতাধিক শিক্ষার্থীর তৃতীয় বর্ষ ফাইনাল পরীক্ষার ফরম পূরণের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে কলেজ শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান আকাশকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর থেকে কলেজের বিজয় ২৪ ছাত্রাবাসের নিচ তলার একটি কক্ষে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়।

 


 

খবর পেয়ে সদর থানা পুলিশ ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখাসহ (ডিবি) কলেজ শিক্ষকরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তারা শিক্ষার্থীদের অভিযোগের সত্যতা পান। পরে আকাশের বড় ভাই আরিফুজ্জামান আপেল কলেজ ছাত্রাবাসে পৌঁছে শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। তবে ফরম পূরণ না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আকাশকে অবরুদ্ধ করে নিজেদের জিম্মায় রাখার সিদ্ধান্ত নেন। মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ছাত্রদল নেতাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা।
 

এদিকে কলেজ ছাত্রদল আহ্বায়ক আসাদুজ্জামান আকাশের এমন কর্মকাণ্ডে অভিযোগ তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগঠনটি। তবে অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা আকাশ গণমাধ্যমের সামনে নিজ থেকে নেওয়ার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাকে টাকা দেওয়া হয়েছে এমন প্রমাণ দাবি করেছেন।
 

কলেজ ছাত্রাবাসে গিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের তৃতীয় বর্ষের ফরম পূরণ করার কথা বলে শতাধিক শিক্ষার্থীর কাছে টাকা নেন আকাশ। তার অনুসারী কয়েকজন শিক্ষার্থী এই টাকা উত্তোলন করেন। এর মধ্যে বিজয় ২৪ হলের ১৪ শিক্ষার্থীসহ ৫৪ জনের ফরম আকাশকে জমা দেওয়া হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন ছাত্রাবাসের আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীসহ ১০৭ জনের কাছ থেকে ফরম পূরণের টাকা নেওয়ার অভিযোগ পেয়েছেন কলেজ কর্তৃপক্ষ ও শিক্ষার্থী প্রতিনিধিরা। প্রতিজনের কাছে চার হাজার থেকে ৪২০০ টাকা করে চার লক্ষাধিক টাকা উত্তোলন করেন আকাশ। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফরম পূরণ করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু ২৫ ফেব্রুয়ারি ফরম পূরণের শেষ দিনেও টাকা দেওয়া কোনও শিক্ষার্থীর ফরম পূরণ না হওয়ায় তারা আকাশকে প্রশ্ন করেন।
 

আকাশ দুপুর ২টার মধ্যে ফরম পূরণ করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে ফরম পূরণ না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আকাশকে বিজয় ২৪ আবাসিক হলে ডেকে নিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখেন। তারা নিজেদের টাকা ফেরত দাবি করেন। খবর পেয়ে পুলিশ, গোয়েন্দা সংস্থা ও কলেজ প্রশাসন ঘটনাস্থলে যায়। তারা আকাশের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পান।
 

দর্শন তৃতীয় বর্ষের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মশিউর বলেন, ‘আমাদের ফরম পূরণ ফি ৪৮০০ টাকা। আমি ও আমার সহপাঠী মিলে ৮০০০ টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু আজ শেষ দিনেও আমাদের ফরম পূরণ হয়নি। আকাশ ভাই অনেক শিক্ষার্থীর টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। আমরা এর বিহিত চাই।’
 

বিজয় ২৪ হলের একাধিক ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী মাকসুদ মিয়ার মাধ্যমে আকাশকে টাকা দিয়েছেন। মাকসুদ সেই টাকা আকাশকে দিয়েছেন।
 

শিক্ষার্থীদের কাছে টাকা উত্তোলনের কথা স্বীকার করেছেন মাকসুদ। তিনি বলেন, ‘এই ছাত্রাবাসের ১৪ জন গরিব শিক্ষার্থীর টাকা তুলে আকাশকে দিয়েছি। তিনি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের কম টাকায় ফরম পূরণ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করার কথা বলে টাকা নিয়েছেন।’
 

আকাশকে অবরুদ্ধ করার খবরে তার বড় ভাই আরিফুজ্জামান আপেল কলেজ ছাত্রাবাসে পৌঁছে শিক্ষার্থী, পুলিশ ও কলেজ প্রশাসনকে শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন। তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণের ব্যবস্থা করে দেবো। এ জন্য সবার সহযোগিতা চাই। আর আকাশের কর্মকাণ্ডের জন্য তার প্রাপ্য শাস্তি সে পাবে।’
 

তবে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেননি অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা আকাশ। তিনি বলেন, ‘ওরা কেউ বলতে পারবে না আমি টাকা নিয়েছি।’
 

এ সময় শিক্ষার্থী মাকসুদকে আকাশের মুখোমুখি করা হলে আকাশ তাকে টাকা দেওয়ার প্রমাণ দেওয়ার দাবি জানান। এ সময় শিক্ষার্থীরা আবারও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন।
 

ঘটনাস্থলে উপস্থিত সদর থানার ওসি হাবিবুল্লাহ বলেন, ‘আকাশ আগে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করলেও সাংবাদিকদের ক্যামেরার সামনে অস্বীকার করছে। শিক্ষার্থীরা লিখিত অভিযোগ দিলে আমরা তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবো।’
 

কলেজের উপাধ্যক্ষ অধ্যাপক আতাউল হক খান চৌধুরী বলেন, ‘আকাশের ভাই ৫৪ শিক্ষার্থীর ফরম পূরণ করে দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর প্রতিনিধির সঙ্গে যাতে পুলিশ উপস্থিত থেকে ফরম পূরণের ব্যবস্থা নেওয়া হয় সে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সে পর্যন্ত আকাশ পুলিশের জিম্মায় থাকবে।’
 

কুড়িগ্রাম জেলা ছাত্রদল সভাপতি আমিমুল ইহসান বলেন, ‘কলেজ ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ শুনেছি। এ বিষয়ে তদন্ত করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫