যে নারী ছিলেন হাদিস গবেষকদের শিক্ষক

আয়েশা বিনতে মুহাম্মদ বিন আবদুল হাদি (রহ.) ছিলেন খ্রিস্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীর বিখ্যাত নারী মুহাদ্দিস ও হাদিস গবেষক। হাদিসশাস্ত্রে তিনি এতটাই দক্ষতা অর্জন করেন যে সময়ের বিখ্যাত হাদিস গবেষকরা নানা বিষয়ে তাঁর শরণাপন্ন হতেন। আয়েশা বিনতে মুহাম্মদ (রহ.) খ্রিস্টীয় চতুর্দশ শতাব্দীর শুরুর ভাগে (রমজান ৭২৩ হিজরি) দামেস্কে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন অভিজাত বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য।
তাঁর পরিবার সমকালীন জ্ঞানচর্চায় বিশেষ মর্যাদার অধিকারী ছিল। মাত্র চার বছর বয়সে তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয়। হাফেজ আল হাজ্জার (রহ.)-এর কাছ থেকে তিনি সহিহ বুখারি, সহিহ মুসলিম ও সিরাতে ইবনে হিশামের পাঠ গ্রহণ করেন। তবে তাঁর কাছে যাওয়ার আগেই তিনি হাদিসশাস্ত্র সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান অর্জন করেছিলেন।
এ ছাড়া তিনি একাধিক পণ্ডিত ব্যক্তিত্বের কাছ থেকে জ্ঞানার্জন করেন। তাঁদের বেশির ভাগই তাঁর পিতার বন্ধু ছিলেন। আয়েশা বিনতে মুহাম্মদ (রহ.) আলেপ্পো, হামা, নাবলুস ও হেবরন অঞ্চলের একাধিক আলেমের কাছ থেকে হাদিস ও সিরাতশাস্ত্র পাঠদানের অনুমতি লাভ করেন। তবে গবেষকরা এই বিষয়ে নিশ্চিত নন যে তিনি হাদিসের পাঠ নিতে এসব মুহাদ্দিসের কাছে সফর করেছিলেন, নাকি তাঁরা দামেস্কে এলে তাঁদের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছিলেন।
আয়েশা বিনতে মুহাম্মদ (রহ.) তাঁর সময়ের বহু নারী ও পুরুষকে হাদিসের পাঠদানের অনুমতি দিয়েছিলেন। হাদিসের জ্ঞানান্বেষণে যারা দামেস্কে আসত, তারাই তাঁর কাছে হাদিসের পাঠ গ্রহণ করত। পুরুষের পাশাপাশি তিনি ৩৫ জন নারীকে হাদিসের পাঠদানের অনুমতি দিয়েছিলেন। তিনি আমৃত্যু দ্বিনি শিক্ষা বিস্তারে কাজ করে যান। হাফেজ আল হাজ্জার (রহ.)-এর সান্নিধ্য তাঁকে হাদিস গবেষকদের কাছে জনপ্রিয় করে তুলেছিল।
যদিও আয়েশা (রহ.) মাত্র চার বছর বয়সে তাঁর প্রথম সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন। তাঁর শিক্ষকের বয়স ছিল ১০৩ বছর। শিক্ষক ইন্তেকাল করার আগ পর্যন্ত তাঁদের যোগাযোগ অব্যাহত ছিল।
হাফেজ আল হাজ্জার (রহ.) ছাড়াও তিনি আবদুল্লাহ বিন হাসান, ইবনুজ-জাররাদ ও ইসমাইল বিন ওমর বিন হামাভি ও আবদুল কাদের বিন মুলুক (রহ.)-এর কাছ থেকে হাদিসের পাঠ গ্রহণ করেন। অন্যদিকে ফিকহশাস্ত্রে (ইসলামী আইনশাস্ত্রে) আয়েশা (রহ.)-এর শিক্ষকদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন ইয়াহইয়া বিন ফাদলুল্লাহ, বোরহান জা’বারি, আবুল হাসান বান্দানিজি, আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মদ বিন ইউসুফ, শরফ বিন বারেজি, ইয়াহইয়া বিন সালিহ (রহ.)।
আয়েশা বিনতে মুহাম্মদ (রহ.) বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। তবে হাদিসশাস্ত্রই ছিল তাঁর মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু। পারিবারিক অবস্থান, বাবার সহযোগিতা, নিজের প্রখর স্মৃতিশক্তি, মেধা ও বুদ্ধিমত্তা, দীর্ঘ জীবনকাল তাঁকে সময়ের অন্যতম প্রধান হাদিসবিশারদ হতে সাহায্য করেছিল। যদিও তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিষ্ঠানে পাঠদান করেননি, তবে সমকালীন আলেম ও বুদ্ধিজীবী মহলে তাঁর বিশেষ মূল্যায়ন ছিল। অবশ্য শেষ জীবনে তিনি দামেস্কের জামে মসজিদে হাদিসের পাঠদানের অনুমতি পেয়েছিলেন। তাঁর ও ইমাম বুখারি (রহ.) মধ্যে মাত্র আটজন মাধ্যম বা হাদিস বর্ণনাকারী ছিলেন। হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) তাঁর থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন এবং তাঁর কাছে একাধিক গ্রন্থের পাঠ গ্রহণ করেছেন। বিখ্যাত মুহাদ্দিস খতিব ইবনে আবি ওমর হাম্বলি (রহ.)-ও তাঁর ছাত্র ছিলেন।
আয়েশা বিনতে মুহাম্মদ (রহ.)-এর মৃত্যু তারিখ নিয়ে অনেক মতভেদ রয়েছে। কারো কারো মতে তিনি রবিউল আউয়াল ৮১৬ হিজরিতে ইন্তেকাল করেন। এ হিসাবে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। আবার কারো মতে তিনি ৮৪ বছর জীবন লাভ করেছিলেন। আল্লাহ তাঁর কবরকে শীতল করুন। আমিন।
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫