বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সংকটে নয়, বরং একধরনের অর্থনৈতিক চাপে: পরিকল্পনামন্ত্রী

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সংকটে নয়, বরং একধরনের অর্থনৈতিক চাপের মধ্যে রয়েছে। সরকার এই চাপের কথা স্বীকার করে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থাও নিচ্ছে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে মন্ত্রী বলেন, ‘অর্থনৈতিক সংকট কথাটার সঙ্গে আমি একমত নই। সংকট থাকলে বেতন দিতে পারতাম না। বৈশাখী ভাতা দিতে পারতাম না। ঈদ বোনাস দিতে পারতাম না। তবে হ্যাঁ, আমরা বারবার বলছি, অর্থনৈতিক চাপ আছে। আমরা এই চাপের কথা স্বীকারও করছি।’
আগারগাঁওয়ে পরিসংখ্যান ভবন মিলনায়তনে বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২২-এর ফলাফল প্রকাশের অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি ছিলেন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার ইকোনমাইজ বা খরচ কমানোর কৌশল নিয়েছে জানিয়ে এম এ মান্নান বলেন, ঘরে চাল কমে গেলে মা যেমন বিভিন্ন কৌশল করে, তেমনভাবে বর্তমান সরকারপ্রধান অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানোর কৌশল নিয়েছেন।
এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি কমাতে সরকার কাজ করছে জানিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের কষ্ট হচ্ছে, এটা সরকারপ্রধান ভালোই বোঝেন। সেটা বুঝেই এই বাজেটে কৌশল নেওয়া হয়েছে। আমি বলব আপনারা আস্থা রাখেন।’
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিন। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) পরিমল চন্দ্র বসু।
প্রকল্পে অর্থের অপচয়
অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রকল্পের মাধ্যমে কিছু অর্থসম্পদের অপচয় হয়। কারণ, এখানে অনেক ফাঁকফোকর থাকে। দেশে ঢালাওভাবে কিছু হলেই একটা প্রকল্প নেওয়া হয়। এটা ঠিক না। এই প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।
তিনি আরও বলেন, পরিসংখ্যানের মতো সরকারের সাধারণ কাজের জন্য প্রকল্প কেন নিতে হবে। নানা ধরনের প্রকল্প ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। এগুলোকে গুছিয়ে আনেন। এগুলোকে রেভিনিউভিত্তিক করেন এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করেন।
‘করোনার প্রভাবের চিত্র উঠে এসেছে’
বিবিএসের স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকসে দেখা গেছে, ২০২২ সালে জন্মহার বৃদ্ধি পেয়েছে। বিপরীতে কমেছে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারকারীর হার।
এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, ‘করোনার সময়ে আমাদের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়েছে তার একটি চিত্র উঠে এসেছে এই প্রতিবেদনে। যেমন জন্মহার বৃদ্ধির ক্ষেত্রে করোনার সময়ের প্রচ্ছন্ন প্রভাব থাকতে পারে। এ ছাড়া জন্মনিরোধক উপকরণের (কন্ট্রাসেপটিভ) দাম আগের তুলনায় বেড়েছে। এটিরও প্রভাব থাকতে পারে। এগুলো সবই অনুমান।’
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘গবেষকেরা এসব প্রবণতার কারণ গবেষণা করে বের করতে পারবেন। তবে জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনায় আমাদের আরও মনোযোগ দেওয়া উচিত।’
এ ছাড়া শিশু মৃত্যুহার ও বাল্যবিবাহের হার উদ্বেগজনক জানিয়ে শামসুল আলম বলেন, এসবের কারণ অনুসন্ধান করে দেখতে হবে।
‘মেধা পাচার নিয়ে আলোচনা কম’
বিবিএসের জরিপে দেখা গেছে, গত বছর আন্তর্জাতিক অভিবাসন অর্থাৎ দেশ থেকে চলে যাওয়ার হার দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০২১ সালে প্রতি হাজারে অন্য দেশে গিয়েছেন ৩ জন। ২০২২ সালে সেই সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৬ দশমিক ৬ জন হয়েছে।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মনে করছেন, এই আন্তর্জাতিক অভিবাসন প্রক্রিয়ায় দেশের অনেক মেধাবী লোকজনও বিদেশে চলে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পুঁজি বা অর্থ পাচার নিয়ে অনেক কথা হয়। কিন্তু মেধা পাচারের বিষয়টি আলোচনায় কম আসে। এভাবে যদি মেধাবীরা দেশ ছেড়ে চলে যায়, তাহলে জ্ঞানভিত্তিক স্মার্ট বাংলাদেশ কীভাবে গড়ব? ভবিষ্যতে এটা দেশের জন্য ভয়াবহ ফলাফল দেবে।
অনুষ্ঠানে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব শাহনাজ আরেফিন বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য বিবিএসের কর্মীদের পাশাপাশি পরিবার পরিকল্পনা বিভাগসহ সরকারি অনেক লোক কাজ করেন। তাদের কাজকে একটি প্ল্যাটফর্মের মধ্যে আনা গেলে অর্থ ও সম্পদের অপচয় রোধ করা সম্ভব হবে।
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫