এ বছরের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে: প্রধান উপদেষ্টা

অনলাইন ডেস্ক:-
২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের মার্চের মধ্যে বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, নির্বাচন আয়োজনের সময়সীমা নির্ভর করছে কাঙ্ক্ষিত সংস্কারের গতির ওপর, যা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে অপরিহার্য।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "যদি দ্রুত সংস্কার করা সম্ভব হয়, তাহলে ডিসেম্বরেই নির্বাচন করা যাবে। তবে সংস্কারের মাত্রা বেশি হলে, কয়েক মাস বেশি সময় লাগতে পারে।"
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গত বছর ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য বলা হলে, ড. ইউনূস প্রথমে বিস্মিত হন। তিনি বলেন, "আমার কোনো ধারণা ছিল না যে আমি সরকারের নেতৃত্ব দেব। আমি এর আগে কখনো কোনো সরকারি কার্যক্রম পরিচালনা করিনি, তবে পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে আমাকে দায়িত্ব নিতে হয়।"
নোবেল বিজয়ী এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, "সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার ছিল আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার ও অর্থনীতি পুনর্গঠন করা।"
গত বছরের আগস্টে ব্যাপক ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেন এবং ভারতে আশ্রয় নেন। এরপর থেকে তিনি সেখানেই নির্বাসনে রয়েছেন। এক নাটকীয় পটপরিবর্তনের ফলে তার সরকারের বিরুদ্ধে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ভয়াবহ সব তথ্য প্রকাশ্যে আসে। হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে এবং দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার চাওয়ার দাবিও উঠেছে।
এই পরিস্থিতিতে ২০২৫ সালের শেষ দিকে নির্বাচন আয়োজনের আশা প্রকাশ করেছেন ড. ইউনূস। তবে ভারতে নির্বাসিত হাসিনা ও তার দল সেই নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা, তা এখনো অনিশ্চিত। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বাংলাদেশ হাসিনাকে ফেরত চাওয়ার দাবিও জানিয়েছে।
বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস বলেন, "তাদের (আওয়ামী লীগ) সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা। নির্বাচন কমিশনই নির্ধারণ করবে কে অংশ নিতে পারবে।"
তিনি আরও বলেন, "শান্তি ও শৃঙ্খলা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আমাদের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া অর্থনীতি বিধ্বস্ত অবস্থায় রয়েছে। যেন গত ১৬ বছর ধরে ভয়াবহ এক টর্নেডোর আঘাতে দেশ বিধ্বস্ত হয়েছে এবং আমরা এখন তার ধ্বংসাবশেষ জড়ো করার চেষ্টা করছি।"
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন এবং পরে কঠোরভাবে দেশ শাসন করেন। তার সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন-পীড়ন, মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে।
তবে গত বছরের ছাত্র-নেতৃত্বাধীন গণআন্দোলনের ফলে তাকে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হতে হয় এবং তিনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। বিক্ষোভকারীদের অনুরোধে ড. ইউনূস দেশে ফিরে অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন।
বাংলাদেশের বর্তমান সংকটের জন্য আগের সরকারকে দায়ী করে ড. ইউনূস বলেন, "আমরা কোনো আদর্শ দেশ হঠাৎ তৈরি করিনি, বরং বহু বছর ধরে চলে আসা একটি বাস্তবতার উত্তরাধিকার পেয়েছি।"
শেখ হাসিনার শাসনের শিকার হওয়া মানুষের ক্ষোভের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, "সাম্প্রতিক মাসগুলোতে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমেছে এবং ছাত্র আন্দোলন দমন-পীড়নের জন্য তার বিচারের দাবি জানিয়েছে।"
বাংলাদেশের একটি আদালত হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে, তবে ভারত এখনো তাকে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
এদিকে, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। শেখ হাসিনার ভার্চুয়াল ভাষণের খবরে কিছু স্থানে আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। আওয়ামী লীগ এই সহিংসতার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে দায়ী করেছে।
এই অভিযোগের বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, "দেশে আদালত, আইন এবং থানা রয়েছে। অভিযোগ থাকলে তারা আইনি ব্যবস্থা নিতে পারে, শুধু বিবিসির কাছে অভিযোগ করলেই চলবে না।"
যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে প্রতি বছর বড় অঙ্কের উন্নয়ন সহায়তা দিয়ে আসছে। তবে বর্তমান সরকার কীভাবে এই ঘাটতি পূরণ করবে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে ড. ইউনূস বলেন, "যখন প্রয়োজন হবে, আমরা তার ব্যবস্থা করব।"
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫