|
প্রিন্টের সময়কালঃ ০৮ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:০৫ অপরাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ০৮ নভেম্বর ২০২৫ ০২:২১ অপরাহ্ণ

শহীদ মিনারে প্রাথমিক শিক্ষকদের অবস্থান, তিন দফা দাবিতে অনড় আন্দোলন


শহীদ মিনারে প্রাথমিক শিক্ষকদের অবস্থান, তিন দফা দাবিতে অনড় আন্দোলন


দশম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। শনিবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হওয়া এই লাগাতার কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে এসে অংশ নিয়েছেন কয়েক হাজার শিক্ষক।
 

ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার অলহরী দুর্গাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ফাতমা শবনম বলেন,

“প্রতিমাসে বেতন তুলতে যাই উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে। সেখানে অফিস সহকারী ১২তম গ্রেডে, আর আমি শিক্ষক হয়েও পাই ১৩তম গ্রেডে। ফলে আমাদের প্রাপ্য সম্মানও পাই না। আমি একজন গ্রাজুয়েট শিক্ষক হয়ে কি একজন অফিস সহকারীকে ‘স্যার’ ডাকব?”

তিনি আরও বলেন,

“অসম্মানের এই প্রতিবাদে এসেছি শহীদ মিনারে। আমাদের আয় রিকশাওয়ালার চেয়েও কম। বাজারে গিয়ে ভালো একটা মাছও কিনতে পারি না। ঈদের বোনাসে ঈদ হয় না, কোরবানিও দিতে পারি না।”

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার পূর্ব পুনাইখারকান্দী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. ইয়াছিন মিয়া বলেন,

“সরকারি গাড়িচালকরা ১২তম গ্রেডে, আর আমরা শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে বেতন পাই। এই দেশে চালকদের চেয়েও শিক্ষকদের মর্যাদা কম! অথচ দেশের প্রধান উপদেষ্টা থেকে সচিব—সবাই প্রাথমিক শিক্ষার হাত ধরেই আজকের অবস্থানে। তাদের আমরা পড়িয়েছি।”

শিক্ষকরা জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই অবস্থান কর্মসূচি চলবে।


তিন দফা দাবি

১️⃣ দশম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ
২️⃣ ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড জটিলতার সমাধান
৩️⃣ শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি বাস্তবায়ন


প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’-এর ব্যানারে চারটি সংগঠন এই আন্দোলন পরিচালনা করছে—

  • বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (কাশেম-শাহিন)

  • বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতি

  • বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি (শাহিন-লিপি)

  • সহকারী শিক্ষক দশম গ্রেড বাস্তবায়ন পরিষদ

ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগের তৃতীয় ধাপে নিয়োগপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা আন্দোলনে যোগ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (শাহিন-লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি বলেন,

“হাজার হাজার শিক্ষক এখন শহীদ মিনারে অবস্থান নিয়েছেন। আমাদের দাবি স্পষ্ট—দশম গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেড ও পদোন্নতির অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। আলোচনায় কোনো অগ্রগতি হয়নি, এবার রাজপথেই দাবি আদায় করব।”


শিক্ষক সমাজের ক্ষোভ ও বাস্তবতা

শিক্ষিকা ফাতমা শবনম বলেন,

“আমাদের প্রতিদিন টিফিন ভাতা মাত্র ৬ টাকা। ৬ টাকায় এক কাপ চা কেনা যায় না, বিষও না।”

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, দেশে ৬৫ হাজারের বেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে, যেখানে কর্মরত শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার
২৪ এপ্রিল সরকার প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১১তম থেকে ১০ম গ্রেডে এবং সহকারী শিক্ষকদের ১৩তম থেকে ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে সহকারী শিক্ষকরা এতে সন্তুষ্ট নন।

বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন,

“বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, নার্স, কৃষি কর্মকর্তা, পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর, এমনকি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা স্নাতক ডিগ্রি নিয়েই ১০ম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন। অথচ আমরা স্নাতক ডিগ্রির পাশাপাশি সিএনএড, বিপিএড ও বিটিপিটি কোর্স সম্পন্ন করেও ১৩তম গ্রেডে আছি। এটা চরম বৈষম্য।”


অন্যদিকে, প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের আরেক অংশ ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে একাদশ গ্রেডে বেতন ও পদোন্নতির দাবিতে সরকারকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময় দিয়েছে। তাদের দাবি না মানা হলে ২৩-২৪ নভেম্বর অর্ধদিবস, ২৫-২৬ নভেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ২৭ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।


সংক্ষেপে:
শিক্ষকদের ভাষায়—“আমরাই জাতি গড়ি, অথচ আমাদের প্রাপ্য সম্মান ও ন্যায্য বেতন আমরা পাই না।”
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সেই ন্যায্যতার লড়াইয়ে আজ একত্র হয়েছেন দেশের প্রাথমিক শিক্ষকরা।


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫