|
প্রিন্টের সময়কালঃ ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ১১:৪৮ অপরাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৫:৪১ অপরাহ্ণ

বাংলাদেশে ‘জওয়ান’ সিনেমা মুক্তি পাওয়ায় ঝুঁকিতে দেশীয় সিনেমা


বাংলাদেশে ‘জওয়ান’ সিনেমা মুক্তি পাওয়ায় ঝুঁকিতে দেশীয় সিনেমা


শাহরুখ খান অভিনীত হালের আলোচিত হিন্দি সিনেমা ‘জওয়ান’ বৃহস্পতিবার বিকেলে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ড থেকে ছাড়পত্র পেয়েছে। এরপর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্টার সিনেপ্লেক্সের কয়েকটি শাখায় ও যমুনা ব্লকবাস্টারস সিনেমাসে মুক্তি পেয়েছে।  শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে দেশের প্রায় ৫০টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ছবিটি।

এদিকে ভারত থেকে আমদানি করা এই ছবির কারণে পিছু হটেছে দেশীয় সিনেমা। শুক্রবার ‘অন্তর্জাল’, ‘দুঃসাহসী খোকা’ ও ‘সুজন মাঝি’ নামের তিনটি বাংলা সিনেমা মুক্তি পাওয়া কথা ছিল। কিন্তু একই দিনে ‘জওয়ান’ মুক্তির খবরে ‘অন্তর্জাল’ ও ‘দুঃসাহসী খোকা’ ছবি দুটির মুক্তি পিছিয়ে গেছে।  

শীয় ছবির এই পিছু হটাকে কেউ কেউ ভালো চোখে দেখছেন না। তাঁদের আশংকা, বলিউডের নামী শিল্পী–কলাকুশলীদের বড় বাজেটের ছবির সঙ্গে দেশীয় ছবি কুলিয়ে উঠতে পারবে না। তাঁদের ধারণা এভাবে এক–দুই মাস অন্তর এ ধরনের বড় বাজেটের ছবি মুক্তি দেশীয় ছবির জন্য ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে। তবে বিষয়টি নিয়ে চলচ্চিত্র–সংশ্লিষ্টদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া আছে। কেউ কেউ বলছেন, ঈদ উৎসব ছাড়া দেশীয় সিনেমা দেখতে প্রেক্ষাগৃহে দর্শক আসছেন না। এমন পরিস্থিতিতে আমদানি করা ভারতীয় সিনেমা হল সারা বছরে মালিকদের জন্য ভরসা। এতে সারা বছর দর্শক হলমুখী হওয়ার একটি চর্চাও তৈরি হবে। একসময় দেশীয় সিনেমাতেও এর ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।


‘জওয়ান’-এর কারণে ‘অন্তর্জাল’ ছবির মুক্তি পিছিয়ে যাওয়ার কথা স্বীকার করে ছবির পরিচালক দীপংকর দীপন বলেন, ‘আমরা নিজ থেকেই যে ছবিটির মুক্তি পিছিয়েছি, ব্যাপারটি তা–ও নয়। হলমালিকেরাও আমাদের ছবিটি পেছানোর অনুরোধ করেছেন। কারণ, তারা “অন্তর্জাল” ভালোভাবে চালাতে চান। এ জন্য দুই সপ্তাহ পেছানোর অনুরোধ ছিল তাদের।’

তে করে দেশীয় সিনেমা ঝুঁকির মুখে পড়ল কি না, এ ব্যাপারে এই পরিচালক বলেন, ‘সেটি বড় বিষয় নয়, বড় বিষয় আমদানির ছবি আসুক, সেটি নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। কারণ, এটি সরকারিভাবে সিদ্ধান্ত। তবে আমদানির ছবিগুলো আগেভাগে মুক্তির সময় জানালে আমাদের জন্য ভালো হয়। তাহলে আমদানির ছবির কথা মাথায় রেখে আমাদের দেশীয় ছবির মুক্তির দিন ঠিক করতে পারি। এভাবে হুটহাট আমদানির ছবি মুক্তির ঘোষণা এলে তো একধরনের ক্ষতি হতেই পারে বা ঝুঁকির মধ্যে পড়তেই পারে বাংলা সিনেমা।’


তবে দেশীয় সিনেমার ঝুঁকি এড়াতে দুটি বিষয়ে গুরুত্ব রেখে পরিচালক দীপংকর দীপন আরও বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট ব্যক্তদের প্রতি দুটি বিষয় আমার অনুরোধ থাকবে—প্রথমত, আমদানি করা সিনেমা সময় নিয়ে মুক্তির তারিখ ঘোষণা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে ভারতীয় ছবির সঙ্গে দেশীয় ছবির শোর সংখ্যা সমান রাখতে যেন চেষ্টা থাকে। যদিও এটি একটি ব্যবসায়িক ব্যাপার। তারপরেও বাংলা সিনেমার স্বার্থে এই বিষয় দুটির দিকে কিছুটা হলেও যেন নজর থাকে।’  

আমদানি করা ছবির কারণে দেশীয় সিনেমা কোনো ঝুঁকিতে পড়বে না বলে মনে করেন ‘জাওয়ান’ ছবির অন্যতম আমদানিকারক অনন্য মামুন, ‘ছবি যে ভাষারই হোক, দর্শক হলমুখী হলে একটা পর্যায়ে গিয়ে দেশীয় ছবির জন্য ইতিবাচক হবে। গত ঈদে দুটি ছবি ভালো যাওয়ার কারণে ঈদের আর বাকি ছবিগুলোও দর্শক দেখেছেন। সিনেমা একটা উৎসবের ব্যাপার। আমদানির এ ছবিটি ভালো গেলে এর জোয়ারে পরে যেসব দেশীয় ছবি মুক্তি পাবে, সেগুলোও ভালো যাবে। এটাই সিনেমার বাস্তবতা। সুতরাং আমদানি করা ভারতীয় ছবির কারণে দেশীয় সিনেমায় কোনো ঝুঁকি তৈরি করবে না।’


অনন্য মামুন আরও বলেন, ‘যেসব ছবি পেছানোর কথা বলা হচ্ছে, এর আগেও তো এই ছবির মুক্তির তারিখ পিছিয়েছে। তখন তো “জওয়ান” মুক্তির তারিখ ছিল না। অন্য কোনো হিন্দি ছবি ছিল না। সুতরাং সব ধরনের ছবিই থাকবে, দর্শক সব ধরনের ছবিই উপভোগ করবেন।’

বিষয়টি নিয়ে চলচ্চিত্রের ১৯ সংগঠনের মোর্চা সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী হায়াত বলেন, ‘দেশীয় ছবি ঝুঁকির মধ্যে পড়বে কি না, সেটা এখনই বোঝা যাচ্ছে না। তবে আমি শুনেছি, ঈদের ছবিগুলোর চলার পর গত কয়েকটি সপ্তাহ ধরে দেশের অনেকগুলো হল ছবির অভাবে বন্ধ আছে। কারণ, ভালো ছবি নেই। সিনেমা তৈরি হচ্ছে, মুক্তিও পাচ্ছে; কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। কারণ, সেসব সিনেমা চলছে না। এখন হলের মালিকদের তো এটি ব্যবসা। দিনের পর দিন যদি এভাবে হল বন্ধ রাখতে হয়, তাহলে বড় রকমের লোকসানের মুখে পড়বেন তাঁরা।’

কাজী হায়াত বলেন, ‘তারপরেও আমরা বিষয়টির দিকে নজর রাখছি। এভাবে যদি আমদানি করা ভারতীয় সিনেমার কারণে দেশীয় সিনেমা বারবার মুক্তি আটকে যায়, আমরা যদি বুঝতে পারি দেশীয় সিনেমা ক্ষতি হচ্ছে, তখন আমদানি বন্ধে আবার নতুন করে সিদ্ধান্তে আসা যাবে। সম্মিলিত চলচ্চিত্র পরিষদ আবার বিবেচনা করে ভারতীয় সিনেমা আমদানি বন্ধের ব্যবস্থা করবে। কারণ, আমাদের আবেদনই তো আমদানি শুরু হয়েছে। তবে দেশীয় সিনেমার দিকেও ভালোভাবে নজর দিতে হবে। প্রতি মাসেই অনন্ত একটি দেশীয় সিনেমা যাতে দর্শক সমৃদ্ধ হয়,সেভাবে সিনেমা বানাতে হবে।’


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫