আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি এনসিপির

  প্রিন্ট করুন   প্রকাশকালঃ ২২ মার্চ ২০২৫ ১২:২৭ অপরাহ্ণ   |   ৯৭ বার পঠিত
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি এনসিপির

ঢাকা প্রেস নিউজ

 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে ‘জুলাই গণহত্যার’ দায়ে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটি আওয়ামী লীগকে সংগঠন হিসেবে বিচারের মুখোমুখি করারও আহ্বান জানিয়েছে।
 

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বাংলামটরের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এ দাবি জানান।
 

সরকারের অবস্থান ও এনসিপির প্রতিক্রিয়া

গত বৃহস্পতিবার ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের সঙ্গে বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানান, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। এ বক্তব্যকে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ বলে উল্লেখ করে নিন্দা জানান উপদেষ্টার পদ ছেড়ে এনসিপির দায়িত্ব নেওয়া নাহিদ।
 

প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যের পর এনসিপির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লেখেন, সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী, সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপসকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের প্রচেষ্টা চলছে। তিনি একে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ আখ্যা দিয়ে দাবি করেন, ১১ মার্চ এ প্রস্তাব ক্যান্টনমেন্ট থেকে এসেছে।
 

রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সেনাবাহিনীর ভূমিকা

সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ বলেন, ‘বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। সেনাবাহিনী রাজনৈতিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। রাজনীতিবিদরাই রাজনীতি নির্ধারণ করবেন।’
 

তিনি আরও জানান, ১১ মার্চের বৈঠকে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ উপস্থিত ছিল এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। তাদের কাছে ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার থাকায় এটি রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বলে মনে হচ্ছে।
 

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত থাকবে

নাহিদ দাবি করেন, ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের নাম, প্রতীক ও আদর্শ—তিনটিই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও কোনো এজেন্সির অপপ্রয়াস সাধারণ মানুষ মেনে নেবে না।
 

এনসিপির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কি জুলাই গণহত্যার জন্য অনুশোচনা করেছে? গণহত্যার দায় স্বীকার করেছে? আগে এর বিচার হতে হবে। দল হিসেবেও বিচার হতে হবে। এরপর অন্য কোনো আলোচনা হতে পারে।’
 

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন জানান, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ চলবে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা।
 

ক্যান্টনমেন্ট থেকে পুনর্বাসন প্রস্তাব

হাসনাত আবদুল্লাহ দাবি করেন, ১১ মার্চ দুপুর আড়াইটায় ক্যান্টনমেন্ট থেকে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়, আসন সমঝোতার বিনিময়ে তারা যেন প্রস্তাব মেনে নেয়।
 

ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আমাদের জানানো হয়—একাধিক রাজনৈতিক দলও এ প্রস্তাবে রাজি হয়েছে। তাদের মতে, একটি বিরোধী দলের চেয়ে দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধী দল থাকাই ভালো।’
 

অন্যান্য রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়া

এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনের দায়িত্ব বিএনপি নেয়নি। বিএনপি ১৭ বছর রাজপথে লড়াই করেছে, নিজেদের পুনর্বাসনই এখন আমাদের কাজ।’ তবে বিএনপি দলীয়ভাবে জানিয়েছে, তারা কোনো রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের পক্ষে নয়।
 

জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান তার ভেরিফায়েড ফেসবুকে লেখেন, আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন জনগণ মেনে নেবে না। জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মো. তাহের বলেন, ‘আগে জুলাই হত্যার বিচার হতে হবে এবং পাচার হওয়া অর্থ ফেরানো দরকার। এরপর রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।’
 

‘রিফাইন্ড’ আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া

আওয়ামী লীগের আত্মগোপনে থাকা নেতারা নতুন নেতৃত্বের গুঞ্জন নাকচ করেছেন। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ‘নতুন নেতৃত্বের প্রশ্নই আসে না। যদি হাসনাত আবদুল্লাহ ১১ মার্চ আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের প্রস্তাব পেয়ে থাকেন, তাহলে এতদিন চুপ ছিলেন কেন?’
 

সারাদেশে বিক্ষোভ

ছাত্র আন্দোলনের দাবিতে ২২ অক্টোবর ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হয়। ছাত্ররা আওয়ামী লীগের জন্যও একই পরিণতি চান। এ দাবিতে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল হয়। এ ছাড়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ হয়েছে।