কুড়িগ্রামের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চলছে এক চিকিৎসকে

আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকসহ মারাত্মক জনবল সংকটে স্থবির হয়ে পড়েছে চিকিৎসা কার্যক্রম। অথচ চিকিৎসকরা রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে নিয়মিত বেতন উত্তোলন করছেন। সুযোগ-সুবিধা নেয়ার জন্য প্রেষনে রয়েছেন অন্য হাসপাতালে। উপজেলার আড়াই লাখ মানুষের জন্য মাত্র একজন চিকিৎসক দিয়েই পুরো হাসপাতালের আউটডোর-ইনডোরের রোগীদের চিকিৎসা সেবা চলছে। চিকিৎসা সেবা না পাওয়ায় ফেরত যাচ্ছে প্রতিদিন শত শত রোগী। ভোগান্তির কারণে হাসপাতাল বৈমুখ হচ্ছে মানুষজন।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অবকাঠামোগতভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, আবাসিক মেডিকেল অফিসার, জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেসথেশিয়া), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনী) সহ মোট ২১ জন চিকিৎসক থাকার কথা। কাগজে-কলমে ৫ জন মেডিকেল অফিসার থাকলেও এর মধ্যে ২ জন মাতৃত্বকালীন ছুটিতে এবং ১ জন জেলা কারাগারে ডেপুটেশনে রয়েছেন। এছাড়া ৪ জন জুনিয়র কনসালট্যান্টের মধ্যে ১ জন রয়েছেন ডেপুটেশনে কুড়িগ্রামের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সরকারি হাসপাতালে এবং ১ জন রয়েছেন হজ্বব্রতের কাজে সৌদি আরবে। ফলে ২ জন মেডিকেল অফিসার, ২ জন জুনিয়র কনসালট্যান্ট এবং ১ জন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মিলিয়ে মোট ৫ জন রয়েছেন রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এর মধ্যে যিনি রাতে ডিউটি করেন, পরদিন তার অফ ডে থাকে। আবার কেউ ছুটিতে গেলে আরও টানাপোড়েন শুরু হয়। এছাড়া দিনে যিনি ডিউটি করেন, রাতে তার ডিউটি থাকে না। আন্তঃবিভাগ ও বহিঃবিভাগ মিলে মাত্র ১ জন চিকিৎসক থাকায় চিকিৎসা সেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
অন্যদিকে নেই আবাসিক মেডিকেল অফিসার। চিকিৎসক, স্টাফ নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট, ডেন্টাল, ইপিআই টেকনিশিয়ান, সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারসহ অর্ধশতাধিক পদ শূন্য থাকায় স্থবির হয়ে পড়েছে রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। অপারেটরের অভাবে আলট্রাসনো মেশিন থাকা সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে কার্যক্রম। তাছাড়াও রয়েছে ওষুধের অপ্রতুলতা।
জরুরি বিভাগে একজনও ওয়ার্ড বয় না থাকায় প্রাথমিক চিকিৎসাটুকুও সঠিকভাবে পাচ্ছেন না জনসাধারণ। মেডিকেল অফিসার ডা. মনিষা বলেন হাসপাতালের আউটডোর ও ইনডোরের রোগীদের এতো চাপ। যে কারণে এ্যার্মাজেন্সিতে মূমূর্ষ রোগীদের সঠিকভাবে চিকিৎসা দেয়া যাচ্ছে না। সঠিকভাবে কোন রোগীকে না দেখে প্রেসক্রিপসন দিতে পারছি না। আমি একাই কিভাবে হাসপাতালের এতোগুলো রোগীর চিকিৎসা দেই।
এদিকে চিকিৎসক না থাকায় প্রায় আড়াই বছর ধরে উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়নে অবস্থিত রতিগ্রাম স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রের চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। উপজেলার উমরমজিদ ও পাঁঙ্গা উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসা সেবা চলছে ফার্মাসিস্ট দিয়ে। একজন স্যাকমো (উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার) পরিচালনা করছেন নাজিমখান ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র।
ফলে প্রায় আড়াই লক্ষ জনসংখ্যা অধ্যুষিত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রগুলোতে জনসাধারণ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিশেষ করে উন্নত চিকিৎসাসেবা গ্রহণে যাদের সামর্থ্য নেই, সেসব নিম্নবিত্ত অসহায় মানুষগুলো চরম বিপাকে পড়েছেন।
রাজারহাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা ডা. গোলাম রসুল রাখী বলেন- চিকিৎসক সহ প্রায় অর্ধশতাধিক পদ শুন্য থাকায় হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা মারাত্বকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বার বার চিকিৎসক চেয়েও কোন চিকিৎসক পাচ্ছি না। অনেকে ডিপুটেশনে অন্যত্র রয়েছেন।
বৃহস্পতিবার(৪জুলাই) রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল ইমরান বলেন, জেলার সব হাসপাতালেই একই অবস্থা। অনেক চিকিৎসক বেতন নেন রাজারহাট থেকে প্রেষনে রয়েছে অন্য হাসপাতালে। যেখান থেকে যিনি বেতন নেন, সেখানে তার অবস্থান হওয়া উচিত। তাহলে চিকিৎসা ব্যাহত হত না।
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫