কুড়িগ্রামের ৭২ বছর বয়সী ফাতেমা বেগম ভুল বয়সের কারণে ভাতা থেকে বঞ্চিত

ঢাকা প্রেস
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর গোরকমণ্ডল আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা ফাতেমা বেগম। বয়সের ভারে ঠিকমতো হাঁটতে পারেন না ফাতেমা বেগম। শরীরের গঠন অনুযায়ী তার বয়স সত্তরের উপরে। কিন্তু ভোটার তালিকা প্রস্তুতকারী তার বয়স কমপক্ষে ১০ বছর কমিয়ে দেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। এরই মারপ্যাঁচে বয়স্ক ভাতা থেকে বঞ্চিত হন ফাতেমা। আর চেয়ারম্যান, মেম্বার ও সমাজসেবা অফিসের অবহেলায় বাদ পড়েন বিধবা ভাতা থেকেও।
অসহায় এই ফাতেমা বেগম থাকেন কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার গোরকমণ্ডল আবাসন প্রকল্পে। এনআইডি কার্ড অনুসারে তার বয়স ৬২ বছর। তিনি গোরকমণ্ডল গ্রামের মৃত সোবাহান আলীর স্ত্রী।
দরিদ্র পরিবারের সন্তান ফাতেমা। দেশ স্বাধীনের পূর্বে ধরলা তীরবর্তী গোরকমণ্ডল গ্রামের ছোবহানের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় তার। বিয়ের পর সংসার জীবন ভালোই চলছিল তাদের। কিন্তু হঠাৎ ধরলার ভাঙনে ভিটেমাটি বিলীন হয়ে যায়। ঠাঁই হয় অন্যের জমিতে। এর মধ্যে ফাতেমার কোলজুড়ে আসে এক কন্যা সন্তান। নাম রাখেন আপিনা। আপিনার বয়স যখন ১২ থেকে ১৩ বছর, তখন ফাতেমার স্বামী সোবাহানের মৃত্যু হয়। এরপর অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ শুরু করেন ফাতেমা। ঝিয়ের কাজ করেই অনেক কষ্টে মেয়ের বিয়ে দেন।
মেয়ের বিয়ের পরও ঝিয়ের কাজ করে কোনো রকমে চলছিল তার সংসার। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের বল-শক্তিও কমতে থাকে। ঠিকমতো কাজ করতে না পারায় এক সময় ঝিয়ের কাজও বন্ধ হয়ে যায়। বাঁচার তাগিদে শুরু করেন ভিক্ষাবৃত্তি। নিজের কুঁড়েঘরটি ভেঙে পড়ায় ঠাঁই হয় মেয়ে জামাইয়ের সঙ্গে সরকারি আবাসনের ঘরে।
ফাতেমা দূরের কাউকে চিনতে পারেন না। কাছের লোকদেরও অচেনা লাগে তার। চোখ বড় বড় হলেও লালচে হয়ে গেছে চোখের রং। কোমর হেলে হাঁটেন। পরনের কাপড়টিও ছেঁড়া-ফাটা। শক্তি নেই শরীরে। পথ চলেন লাঠির ওপর ভর করে। শতভাগ বিধবা ও বয়স্ক ভাতা প্রদানের সরকারি নির্দেশনা থাকলেও অসহায় ফাতেমার ভাগ্যে জোটেনি কোনো ভাতা। দু’মুঠো ভাতের জন্য হাঁটতে হয় এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে। যেদিন ভিক্ষা পান সেদিন ভাত জোটে, না হলে মেয়ে জামাইয়ের ওপর নির্ভর করতে হয় তাকে।
ফাতেমা বেগম বলেন, মোর কোনো কার্ড নাই বাবা। মেম্বার-চেয়ারম্যানের পিছনে ঘুরতে ঘুরতে মুই হইরান হয়ে গেছি। সবাই কয় এখন না, পরে আসেন।
ফাতেমার মেয়ে-জামাই মোন্নাফ আলী জানান, জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও বয়স্ক কিংবা বিধবা ভাতার তালিকায় নাম ঢুকাতে পারিনি। সবাই বলে তার বয়স কম।
গোরকমণ্ডল গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আনছার আলী বলেন, ফাতেমার বয়স অনেক। ভোটার তালিকার সময় নিবন্ধনকারী অনুমানের ভিত্তিতে তার বয়স কমিয়ে লিখেছেন। কিন্তু বয়স্ক ভাতা না দিলেও তাকে বিধবা ভাতা দেওয়া উচিত ছিল।
নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাছেন আলী জানান, বরাদ্দ কম, চাহিদা বেশি। ফাতেমা বেগমের ভাতা আছে কিনা জানা নেই। তারপরও খোঁজখবর নিয়ে ভাতার ব্যবস্থা করা হবে।
ফুলবাড়ী উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রায়হানুল ইসলাম জানান, তিনি অনলাইনে আবেদন করলে বরাদ্দ সাপেক্ষে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫