|
প্রিন্টের সময়কালঃ ২২ এপ্রিল ২০২৫ ১২:৫০ অপরাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ২১ এপ্রিল ২০২৫ ১২:০০ অপরাহ্ণ

আঃলীগ পরিবার প্রত্যয়নে মামলায় অব্যাহতি, এখন বিএনপির নেতৃত্বে যাওয়ার চেষ্টা


আঃলীগ পরিবার প্রত্যয়নে মামলায় অব্যাহতি, এখন বিএনপির নেতৃত্বে যাওয়ার চেষ্টা


আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-


 

বিএনপির নেতৃত্বে থেকেও ‘আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য’ পরিচয়ে মামলা থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন দুই নেতা। মামলার ভয়ে রাজনীতিতে ছিলেন নিষ্ক্রিয়। কিন্তু জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আবারও বিএনপির নেতৃত্ব পেতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন ‘আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য’ পরিচয়দানকারী ওই ‘নেতারা’। কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি ঘোষণার আগে দলটিতে এমন গুঞ্জন চলছে।
 

‘আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য’ পরিচয়দানকারী দুই বিএনপি নেতা হলেন ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি আজিজুর রহমান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন। তারা দুজনই স্থানীয় নয়াচর বাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। তবে নিজেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই দুই নেতা।
 

স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বিগত কমিটির  সম্পাদকীয় পদে থেকেও আজিজুর ও দেলোয়ার অনেকটাই নিষ্ক্রিয় ছিলেন। চাকরি বাঁচাতে এবং সরকার ও পুলিশের নিপীড়নের ভয়ে তারা আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নেননি। এর মধ্যে ২০২৩ সালে একবার গ্রেফতার হয়ে মামলার আসামি হলে তারা দুজনই স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য পরিচয়ে প্রত্যয়ন নিয়ে মামলার চার্জশিট থেকে নিজেদের নাম সরিয়ে নেন। কিন্তু মামলার আসামি অপর নেতাকর্মীদের রক্ষা করেননি। তবে সরকার পতনের পর মামলাটি রাজনৈতিক হয়রানির উদ্দেশে করা উল্লেখ করে প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন চার্জশিটভুক্ত আসামি আনোয়ার হোসেন।
 

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর কুড়িগ্রামের রাজিবপুর থেকে মাইক্রোবাস যোগে ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশে অংশ নিতে যাচ্ছিলেন আজিজুর রহমান ও দেলোয়ার হোসেনসহ এগারো জন নেতাকর্মী। পথে শেরপুরের শ্রীবরদি থানা এলাকায় পুলিশের তল্লাশিতে আটক হন তারা। তাদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা দিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠায় সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ। তাদের কাছ থেকে পাঁচটি অবিস্ফোরিত ককটেল ও দশটি বাঁশের লাঠি উদ্ধার করে আলামত হিসেবে জব্দ তালিকা প্রস্তুত করে পুলিশ। ওই মামলায় আজিজুর ৩ নম্বর এবং দেলোয়ার ৬ নম্বর আসামি ছিলেন। পরে গ্রেফতার নেতাকর্মীরা জামিনে বের হন।
 

স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের দাবি, আজিজুর ও দেলোয়ার নিজেদের আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য দাবি করে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রত্যয়ন নেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে আওয়ামী পরিবারের সদস্য পরিচয়ে তারা মামলা থেকে নিজেদের নাম সরিয়ে নেন। তাদের দুই জনকে আসামি থেকে বাদ দিয়ে বিএনপির অপর নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় পুলিশ। এখন আজিজুর ও দেলোয়ার আবারও ইউনিয়ন বিএনপির নেতৃত্বে আসার পাঁয়তারা করছেন।
 

মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘আজিজুর ও দেলোয়ার মাস্টার বিএনপির পদে থেকেও মামলা থেকে বাঁচতে ও চাকরি বাঁচাতে আওয়ামী পরিবারের সদস্য পরিচয় দিয়েছেন। কিন্তু তাদের সঙ্গে গ্রেফতার অপর নেতাকর্মীদের মামলা থেকে বাঁচাননি। এখন তারা আবারও পদ-পদবি পেতে মরিয়া হয়েছেন। দলের খারাপ সময় আওয়ামী লীগের পরিচয় দিলেও এখন দলের সুসময়ের বাতাস দেখে পদ পেতে তদবির করছে। এতে ত্যাগী নেতাকর্মীরা বঞ্চিত হবেন।’
 

ওই মামলার চার্জশিটের একটি অনুলিপি এই প্রতিবেদকের কাছে এসেছে। প্রতিবেদনের একটি অংশে তদন্তকারী কর্মকর্তা দাবি করেছেন, গ্রেফতারের দিন বিএনপি নেতাকর্মীদের গাড়িতে আজিজুর ও দেলোয়ার থাকলেও তারা দুজন সেদিন ওই গাড়িতে করে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ময়মনসিংহ যাচ্ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে ওই মামলায় জড়িত থাকার কোনও সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তদন্তকারী কর্মকর্তা চিকিৎসাপত্র ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের প্রত্যয়ন পর্যালোচনা করে তা জানতে পেরেছেন বলে চার্জশিটে উল্লেখ করেছেন। তবে একই চার্জশিটে অপর নয় আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার দাবি করা হয়েছে।
 

চার্জশিট সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি নেতা আজিজুর ও দেলোয়ার বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলা থেকে বাঁচতে রাজিবপুরের মোহনগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একটি প্রত্যয়ন নেন। চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন স্বাক্ষরিত ওই প্রত্যয়নপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আজিজুর ও দেলোয়ার দুই জনই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান। তারা কোনও রাষ্ট্রদ্রোহী কার্যকলাপে জড়িত নন।’
 

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আজিজুর ও দেলোয়ার। তারা দাবি করেছেন, তাদের বংশে কেউ আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত নেই। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কেন এবং কীভাবে তাদের আসামি থেকে বাদ দিয়েছেন তা তাদের জানা নেই। গ্রেফতারের দিন তারা ঢাকার উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। তবে মহাসমাবেশে অংশ নেওয়ার উদ্দেশে নয়।
 

বিএনপি নেতা আজিজুর রহমান বলেন, ‘আমি বিগত কমিটিতে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ছিলাম। আবারও একই পদ প্রত্যাশী। আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য পরিচয়ের বিষয়টি আমার জানা নেই। তদন্তকারী কর্মকর্তা সেটা ভালো বলতে পারবেন। আমার বংশে কেউ আওয়ামী লীগ নাই।’
 

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও শ্রীবরদি থানার তৎকালীন এসআই রিপন চন্দ্র সরকার বলেন, ‘পূর্ব পরিচয়ের সূত্রে ওই দুই আসামি সেদিন চিকিৎসার উদ্দেশে অপর আসামিদের গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন। চিকিৎসাপত্র ও চেয়ারম্যানের প্রত্যয়নপত্রে তেমন তথ্য ছিল। অনেকদিন পূর্বের বিষয় হওয়ায় পুরো বিষয় মনে করতে পারছি না।’
 

তবে মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়া আরেক নেতা দেলোয়ার বলেন, ‘সেদিন আমরা ঢাকার উদ্দেশে যাওয়ার সময় মিথ্যা অভিযোগে গ্রেফতার হই। আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য হিসেবে প্রত্যয়নপত্রটি আমি দেখেছি। তবে সেটির বিষয়ে আমার জানা নেই। আমার বংশে কেউ আওয়ামী লীগ নেই।’
 

‘বিলুপ্ত ঘোষণা করা কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলাম। আবারও একই পদ প্রত্যাশী।’ বিএনপির রাজনীতি করা প্রশ্নে বলেন দেলোয়ার।
 

আওয়ামী লীগ প‌রিবারের সদস্য প‌রিচয়ে প্রত্যয়নপত্র দেওয়ার বিষয়‌টি নি‌শ্চিত করেছেন ইউ‌পি চেয়ারম্যান আনোয়ার হো‌সেন। তি‌নি বলেন, ‘চার্জ‌শিট থেকে নাম কাটতে তাদের প্রত‌্যয়ন দরকার ছিল। আওয়ামী লীগ প‌রিবা‌রের সদস‌্য প‌রিচয় উল্লেখ করে তারাই প্রত‌্যয়ন প্রস্তুত করে এনে‌ছিল। মানবিক দিক বিবেচনা করে আ‌মি সই করে দিয়ে‌ছি।'
 

এ বিষয়ে রাজিবপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘চাকরি রক্ষার স্বার্থে কে কী করলো না করলো ওইটা আমাদের দেখার বিষয় নয়। তারা বিএনপি হিসেবে জেল খেটেছেন। জেল থেকে বের হওয়ার পরও বিএনপিতে ছিলেন। তাদের কেউ বা কারা আওয়ামী পরিবারের সদস্য বানিয়েছে সে তথ্য আমাদের নোটিশে নাই। তারা যদি এমন কিছু করে থাকেন সেটা আমরা ভালোভাবে দেখবো না। কেন তারা এ জায়গায় দুর্বল ছিল তা দেখা হবে।’


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫