উপড়ানো হয়েছে দুই চোখ, অন্ধকারে শাজাহান মিন্টিজের জীবন

চরফ্যাসন (ভোলা) প্রতিনিধি:-
ভোলার চরফ্যাসনের চর আরকলমী গ্রামে এক নারকীয় হামলায় দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন শাজাহান মিন্টিজ। আত্মীয়র বাসা থেকে ধরে নিয়ে একদল সংঘবদ্ধ যুবক তাঁকে নির্মমভাবে পিটিয়েছে। শুধু মারধর করেই ক্ষান্ত হয়নি তারা; বরং তুলে নেওয়া হয়েছে তাঁর দুই চোখ এবং কেটে ফেলা হয়েছে ডান হাতের একটি আঙুল। প্রচণ্ড নির্যাতনের ফলে বুকের হাড় ভেঙে গেছে, মেরুদণ্ডেও গুরুতর আঘাত লেগেছে।
কয়েকটি হাসপাতালে ঘুরে বর্তমানে মিন্টিজ চিকিৎসাধীন আছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। তাঁর স্ত্রী ফাতেমা বেগম অভিযোগ করেছেন, জমি-সংক্রান্ত বিরোধের জেরেই এই বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়েছে। স্বামীকে রক্ষা করতে বারবার ৯৯৯-এ ফোন করেও কোনো সাড়া পাননি তিনি। এমনকি এখনও পুলিশ মামলা নেয়নি বলে অভিযোগ তার।
গত রোববার সকালে চর আরকলমী গ্রামে এ হামলার ঘটনা ঘটে। সেদিন শাজাহান মিন্টিজ তাঁর বোনের বাসায় দাওয়াত খেতে গিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে ২০-২৫ জন যুবক চুরির অভিযোগ তুলে তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। এরপর তাঁকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় ফেলে রাখা হয় একটি পরিত্যক্ত পুকুরপাড়ে। স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল ও পরে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মোস্তাক আহাম্মদ জানান, মিন্টিজের চোখের ভেতর থেকে বালি ও ইটের গুঁড়া পাওয়া গেছে, যা তাঁর চোখ পুরোপুরি নষ্ট করে দিয়েছে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে চোখের ভেতরের সব কিছু বের করতে হয়েছে, ফলে তিনি চিরতরে দৃষ্টিশক্তি হারানোর আশঙ্কায় আছেন।
মিন্টিজের ভাই শাহিন অভিযোগ করে বলেন, তাদের বাবার জমি স্থানীয় মাদ্রাসা অধ্যক্ষ মাওলানা লোকমান হোসেনের নামে রেকর্ড হয়ে যাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের হয়রানি করা হচ্ছিল। রোববার মাওলানা লোকমানের ছেলে নাইম, হাসিব ও সাকিবের নেতৃত্বে একদল যুবক মিন্টিজকে তুলে নিয়ে নির্মমভাবে নির্যাতন চালায়। বর্তমানে মিন্টিজের চিকিৎসার জন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন, যা জোগাড় করা তাঁদের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে।
এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, হামলার নেতৃত্বে ছিলেন চর ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও নজরুল নগর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মাওলানা লোকমান হোসেনের ছেলে মো. সাকিব, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মী নাঈম হাসিব এবং চর কলমী ইউনিয়নের বিএনপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি পল্লি চিকিৎসক জাহাঙ্গীর।
তবে অভিযুক্ত সাকিব দাবি করেন, তাঁদের সঙ্গে জমি বা ব্যক্তিগত কোনো বিরোধ নেই। এলাকাবাসীর গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন মিন্টিজ। হামলার নেতৃত্বে থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
অপর অভিযুক্ত নাঈম হাসিব দাবি করেন, তিনি ঢাকার মিরপুরে থাকেন এবং এ ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। তবে এলাকাবাসীর বক্তব্য অনুযায়ী, তিনি হামলার সময় উপস্থিত ছিলেন। এই অভিযোগের জবাবে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।
স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। দক্ষিণ আইচা থানার ওসি এরশাদুল হক ভূঁইয়া জানান, শাজাহান মিন্টিজের বিরুদ্ধে ছয়টি চুরির মামলা রয়েছে এবং তিনি আগেও গ্রেপ্তার হয়েছেন। তবে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় কেউ অভিযোগ করতে আসেননি বলেও জানান তিনি। তাঁর মতে, মামলা গ্রহণে পুলিশের কোনো অনীহা নেই।
শাজাহান মিন্টিজের ওপর নির্মম হামলার ঘটনায় এখনো মামলা দায়ের না হওয়া এবং পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ভুক্তভোগীর পরিবার ন্যায়বিচার এবং যথাযথ চিকিৎসার জন্য সাহায্য চাইলেও এখনো কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা এই ঘটনার ন্যায়বিচার পাওয়ার ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন এলাকাবাসী।
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫