|
প্রিন্টের সময়কালঃ ২৬ নভেম্বর ২০২৫ ০১:৪৭ অপরাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ২৬ নভেম্বর ২০২৫ ১২:২৪ অপরাহ্ণ

কুড়িগ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিলে কাঁচা কলা সরবরাহ, খাওয়ার যোগ্য হতে লাগবে কয়েকদিন


কুড়িগ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিলে কাঁচা কলা সরবরাহ, খাওয়ার যোগ্য হতে লাগবে কয়েকদিন


আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-

 

মিড-ডে মিল কর্মসূচি চালুর প্রথম সপ্তাহেই কুড়িগ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে নিম্নমানের খাবার সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার কয়েকটি বিদ্যালয়ে খাবারের অনিয়ম ও মানহীনতা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। অভিযোগ রয়েছে, রুটিন অনুযায়ী খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে না এবং বেশ কিছু স্কুলে এমনকি কাঁচা কলাও বিতরণ করা হয়েছে, যা খাওয়ার উপযোগী হতে কয়েকদিন সময় লাগবে।

 


 

সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শিক্ষার্থীদের পুষ্টি নিশ্চিত ও বিদ্যালয়ে উপস্থিতি বাড়াতে সপ্তাহে পাঁচ দিন বনরুটি, সিদ্ধ ডিম, প্যাকেটজাত দুধ, ফোর্টিফায়েড বিস্কুট ও মৌসুমি ফল সরবরাহের কথা। তবে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান শিক্ষা বিভাগের সঙ্গে কোনো সমন্বয় ছাড়াই কার্যক্রম শুরু করায় শুরু থেকেই দেখা দিয়েছে চরম অব্যবস্থাপনা।
 

রৌমারী উপজেলা শিক্ষা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, উপজেলার ১১৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৮ হাজার ৯৯৮ জন শিক্ষার্থী এই কর্মসূচির আওতায় রয়েছে। কিন্তু যাদুরচর, চর বারবান্দা, দক্ষিণ বাউশমারীসহ বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিয়মিত খাবার দেওয়া হয়নি এবং যা দেওয়া হয়েছে তাও নিম্নমানের। সর্বশেষ মঙ্গলবার অনেক স্কুলে একেবারে কাঁচা কলা বিতরণ করা হয়েছে।
 

চর বারবান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. লুৎফর হক বলেন,
“আমার বিদ্যালয়ে ৯৪ জন শিক্ষার্থী। ১৮ নভেম্বর ৭০ জনের জন্য ডিম ও রুটি পেয়েছি, ১৯ নভেম্বর শুধু রুটি। এরপর আজ পর্যন্ত আর কোনো খাবার দেওয়া হয়নি।”

 

যাদুরচর নতুন গ্রাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছাঃ মনোয়ারা বেগম জানান,
“১৮ নভেম্বর রুটি ও কলা সরবরাহ করা হলেও পরিমাণে কম ছিল। ১৯ নভেম্বর শুধু রুটি, আর আজ দেওয়া হয়েছে সম্পূর্ণ কাঁচা কলা, যা খেতে কমপক্ষে আরও ৭ দিন সময় লাগবে। ঠিকাদারের প্রতিনিধি জানিয়েছেন, প্রাক্কলিত মূল্যের চেয়ে ৩০% কম দর পাওয়ায় সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে।”

 

রৌমারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. মঈনুল হোসেন বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,
“সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশের কপি না দিয়েই খাবার দেয়। কিছু স্কুলে কাঁচা কলা সরবরাহের পর আমরা অবহিত হই। তারা জানিয়েছে ১ ডিসেম্বর থেকে আবার যথাযথভাবে খাবার সরবরাহ শুরু হবে। মান না হলে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।”

 

সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান আইসল্যান্ড ট্রেডিং-এর প্রতিনিধি মোঃ রায়হান জানান,
“খুব অল্প সময়ে কার্যাদেশ পাওয়ায় যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হয়নি। ১ ডিসেম্বর থেকে নিয়মিত ও মানসম্পন্ন সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।”

 

জেলা শিক্ষা অফিসার স্বপন কুমার রায় চৌধুরী বলেন,
“ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমাদের সঙ্গে কোনো সমন্বয় করেনি এবং চুক্তিপত্রও সরবরাহ করেনি। বিষয়টি আমরা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।”

 

প্রসঙ্গত, দেশের ৬২ জেলার ১৫০টি উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড-ডে মিল চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কুড়িগ্রামের উলিপুর ও ফুলবাড়ী বাদে বাকি ৭ উপজেলায় প্রায় ১ লাখ ২৮ হাজার শিক্ষার্থী এই সুবিধা পাওয়ার কথা রয়েছে।


শিক্ষক ও অভিভাবকদের দাবি, দ্রুত অনিয়ম দূর করে শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্পন্ন ও পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করুক কর্তৃপক্ষ।


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫