|
প্রিন্টের সময়কালঃ ০৮ জুন ২০২৫ ১১:৩৫ অপরাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ১৩ ডিসেম্বর ২০২৩ ০২:৩৩ অপরাহ্ণ

ডলার সংকটে কমল ঘাটতি


ডলার সংকটে কমল ঘাটতি


দেশের সার্বিক অর্থনীতির বৈদেশিক অংশের স্থিতিপত্রের বা ব্যালেন্স অব পেমেন্টের বিভিন্ন খাতে ঘাটতি বেশ খানিকটা কমেছে। এর মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও ব্যয়ের মধ্যকার ব্যবধান কমে আসায় চলতি হিসাবে ঘাটতি কমেছে রেকর্ড পরিমাণ। ব্যাপকভাবে আমদানি নিয়ন্ত্রণ ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় বৈদেশিক বাণিজ্যেও কমেছে ঘাটতি। এর বিপরীতে সেকেন্ডারি আয় খাতের মধ্যে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ায় সার্বিকভাবে স্থিতিপত্রে ঘাটতি কমেছে। তবে সেবা ও প্রাইমারি আয়ে ঘাটতি বেড়েছে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের তৈরি বাংলাদেশ ব্যালেন্স অব পেমেন্টস শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্তের আলোকে প্রতিবেদনটিকে অনেক সমৃদ্ধ করে এবার প্রকাশ করা হয়েছে।

 

সূত্র জানায়, বৈদেশিক খাতে ঘাটতি কমার মূল কারণ হচ্ছে ডলার সংকট। মুক্ত অর্থনীতিতেও ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে আমদানি কমানো হয়েছে। বিভিন্ন খাতে বৈদেশিক মুদ্রার খরচ কমানো হয়েছে। ফলে সার্বিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় কমেছে। অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এতে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স কিছুটা বেড়েছে। এছাড়া অন্যান্য খাতেও আয় কিছুটা বেড়েছে। এগুলোর প্রভাবে সার্বিকভাবে সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিপত্রে ঘাটতি বেশ খানিকটা কমেছে। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণের ফলে বিভিন্ন খাতে বৈদেশিক মুদ্রার খরচ কমানোয় ঘাটতি কমেছে গড়ে ৮৫ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংক অধ্যাদেশ অনুযায়ী, সরকারকে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ব্যয়ের সার্বিক চিত্র টাকায় হিসাব করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হয়। এ কারণে বৈদেশিক মুদ্রার আয়ব্যয়ের স্থিতিপত্র কেন্দ্রীয় ব্যাংক টাকায় প্রকাশ করেছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক খাতের হিসাবনিকাশ ডলারে করে থাকে।

প্রতিবেদন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, গত পাঁচ অর্থবছরের তুলনায় গত অর্থবছরেই চলতি হিসাবে ঘাটতি সবচেয়ে বেশি কমেছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চলতি হিসাবে ঘাটতি হয়েছিল ১৬ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। এর পরের বছর থেকে ঘাটতি বেড়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ ঘাটতি বেড়ে সর্বোচ্চ ১ লাখ ৫৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা হয়েছে। গত অর্থবছরে ঘাটতি হয়েছে ২১ হাজার ৬৮০ কোটি টাকা। গত এক বছরের ব্যবধানে এ ঘাটতি কমেছে ৮৫ শতাংশ।

 

আলোচ্য সময়ে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে প্রায় ২৭ শতাংশ। প্রধানত টাকার মান কমায় ডলারের হিসাবে টাকার অঙ্কে ঘাটতি বেশ কমেছে। কারণ, ডলার কিনতে হচ্ছে বেশি টাকা দিয়ে। এর বিপরীতে ডলারের আয় বৃদ্ধি পাওয়া ও ব্যয় কমানোর ফলেও ঘাটতি কমাতে সহায়তা করেছে। তবে ডলারের হিসাবে ঘাটতি কমেছে। ডলারের হিসাবে ঘাটতি কম কমেছে, টাকার হিসাবে বেশি কমেছে। ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণেই এমনটি হয়েছে।

 

একই সঙ্গে গত তিন অর্থবছরের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি সবচেয়ে বেশি কম হয়েছে গত অর্থবছরে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছিল ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। এরপর তা ২ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। গত অর্থবছরে তা আবার ২ লাখ কোটি টাকার নিচে নেমে আসে। গত অর্থবছরেও ঘাটতি হয়েছে ১ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। গত এক বছরের ব্যবধানে ঘাটতি কমেছে সাড়ে ৪১ শতাংশ। ২০২১-২২ অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ বাণিজ্য ঘাটতি হয়েছিল ২ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। মূলত ডলার সংকটের কারণে ব্যাপকভাবে আমদানি নিয়ন্ত্রণ করায় আমদানি কমেছে। এর বিপরীতে রপ্তানি বেড়েছে। এসব কারণে বাণিজ্য ঘাটতি কমেছে।

প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০২১-২২ অর্থবছরের তুলনায় গত অর্থবছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। এছাড়া সেকেন্ডারি খাতের অন্যান্য আয়ও বেড়েছে। এসব কারণে ব্যালেন্স পেমেন্টে ঘাটতি কমেছে।

তবে আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে সেবা ও প্রাইমারি আয়ে ঘাটতি বেড়েছে। কারণ, এ দুই খাতে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হয়েছে। চলতি অর্থবছরে সরকারের বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিপত্রে ঘাটতি আরও কিছুটা কমবে বলে প্রতিবেদনে আশা প্রকাশ করা হয়েছে।

 


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫