সিলিকা জেলকে মাদক ভেবে শিক্ষককে হাতকড়া পরিয়ে হয়রানি
ঢাকা প্রেস
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-
সিলিকা জেলের জন্য শিক্ষককে হাতকড়া পরিয়ে হয়রানি পুলিশের.....
কুড়িগ্রামের রৌমারীতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষককে অকারণে হাতকড়া পরানোর অভিযোগ উঠেছে থানা পুলিশের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে। শিক্ষকের সাথে থাকা ল্যাপটপের ব্যাগের ভেতর সিলিকা জেলের প্যাকেট মাদক দাবি করে ওই শিক্ষককে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করে হাতকড়া পরায় পুলিশ।
গত সোমবার উপজেলার সদর ইউনিয়নের খাটিয়ামারী-বামনের চর সড়কের বাঁশের সেতু সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই শিক্ষক। একই সাথে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ও রৌমারী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বরাবর অভিযোগের অনুলিপি দেওয়া হয়েছে। পরে মঙ্গলবার বিকেলে ইউএনও’র কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষকের কাছে ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেন ওসি ও পুলিশের সংশ্লিষ্ট উপপরিদর্শক।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. মইনুল হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বিষয়টি মীমাংসা হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি।
পুলিশের হয়রানির শিকার ওই শিক্ষকের নাম মো. নজরুল ইসলাম। তিনি উপজেলার বিক্রিবিল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে কর্মরত। তার বাড়ি যাদুরচর ইউনিয়নের গোলাবাড়ি গ্রামে।
অভিযোগপত্রে ওই শিক্ষক উল্লেখ করেছেন, সোমবার রৌমারী সদরের বামনের চর গ্রামে বোনের বাড়ি থেকে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি ফেরার পথে খাটিয়ামারী-বামনের চর সড়কের বাঁশের ব্রিজের কাছে সাদা পোশাকের কয়েকজন পুলিশ সদস্য তার পথরোধ করেন।
নিজের পরিচয় দিয়ে চলে যাওয়ার সময় সামান্য দূরত্বে তিন পুলিশ সদস্য আবার তার পথরোধ করেন। তাদের সেকেন্ড অফিসার না আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেন। তারপর পেছনে থাকা আরো তিন পুলিশ সদস্য গিয়ে ওই শিক্ষকের সাথে থাকা ল্যাপটপের ব্যাগ (ল্যাপটপ ছিল না) তল্লাশি করে। তারা ওই শিক্ষককে মাদক কারবারি বলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। বারবার শিক্ষক পরিচয় দিলেও তারা নিবৃত হননি। এ সময় তারা তাকে হাতকড়া পড়ান।
শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, তারা আমার ল্যাপটপের ব্যাগ তল্লাশি করে একটি ফ্রিজিং তরকারির প্যাকেট ও একটি সিলিকা জেলের প্যাকেট পান। ল্যাপটপের ব্যাগ হওয়ায় সেখানে সিলিকা জেলের প্যাকেটটি ছিল। কিন্তু আমি সেটা জানতাম না। ওই প্যাকেটটি তারা মাদকের প্যাকেট দাবি করে সঙ্গে সঙ্গে আমার হাতে হাতকড়া পড়ান। সকলের সামনে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। আমি নিজের পরিচয় দিয়ে প্রতিবাদ করি।
এরমধ্যে পুলিশ সদস্যরা থানায় ফোন দিয়ে আমাকে নেওয়ার জন্য গাড়ি ডাকেন। উপস্থিত লোকজনের সামনে পরিচয় দিয়ে নিজেকে নির্দোষ এবং মাদকের সাথে জড়িত নই বলে দাবি করতে থাকি। সকলের সামনে প্যাকেটটি খোলার দাবি জানাই। এ সময় উপস্থিত লোকজনের তোপের মুখে পড়ে সেখানে থাকা থানার সেকেন্ড অফিসার প্যাকেটটি খোলেন। সিলিকা জেল নিশ্চিত হয়ে আমার হাতকড়া খুলে দিয়ে চলে যেতে বলেন। কিন্তু ততক্ষণে আমার যতটা সম্মানহানী হওয়ার হয়ে যায়। পুলিশের এমন কাণ্ডে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন ভুক্তভোগী শিক্ষক।
অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া থানার সেকেন্ড অফিসার ও উপপরিদর্শক (এসআই) শাহাদত হোসেন অভিযানে থাকার কথা স্বীকার করলেও শিক্ষককে হাতকড়া পড়ানোর প্রশ্নে ওসির সাথে কথা বলতে অনুরোধ করেন।
এদিকে শিক্ষকের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার বিকালে ইউএনও’র কার্যালয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষককে নিয়ে বৈঠকে বসেন ভারপ্রাপ্ত ইউএনও, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, থানার ওসি ও দুই উপপরিদর্শক। বৈঠকে ওসি ও থানার সেকেন্ড অফিসার (এসআই শাহাদত হোসেন) ঘটনার জন্য ওই শিক্ষকের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।
শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, আমার সামাজিক মার্যাদাহানী করা হয়েছে। থানায় নিলে আমাকে মাদক কারবারি বানিয়ে চালান দেওয়া হতো। পুলিশ ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেছে। বিষয়টি হয়তো মিটে গেছে। কিন্তু আর কোনো শিক্ষক কিংবা নাগরিকদের যেন এভাবে হেনস্থা করা না হয়।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. মইনুল হোসেন বলেন, পুলিশ বলেছে তাদের সোর্স ভুল তথ্য দিয়েছিল বলে এমন ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেছে। ইউএনও স্যারের উপস্থিতিতে বিষয়টি সমাধান হয়েছে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও ভারপ্রাপ্ত ইউএনও রাসেল দিও বলেন, ভুল বোঝাবুঝির কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ দুঃখ প্রকাশ করেছে।
রৌমারী থানার ওসি লুৎফর রহমানকে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫