|
প্রিন্টের সময়কালঃ ০৬ মে ২০২৫ ০৬:১১ পূর্বাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ০৫ মে ২০২৫ ০৩:৪৩ অপরাহ্ণ

তিতাসে ছেলের শ্বাশুড়ীর মামলার ভয়ে মায়ের আত্মহত্যা: প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে দালালচক্রের অপচেষ্টা


তিতাসে ছেলের শ্বাশুড়ীর মামলার ভয়ে মায়ের আত্মহত্যা: প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে দালালচক্রের অপচেষ্টা


আবুল কালাম আজাদ, কুমিল্লা প্রতিনিধিঃ-


কুমিল্লার তিতাসে ছেলের শ্বাশুড়ীর দায়ের করা মামলার ভয়ে মায়ের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। গেলো ১লা মে উপজেলার কড়িকান্দি ইউনিয়নের বন্দরামপুর গ্রামের নয়াপাড়া মুন্সি বাড়ীতে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত পারভীন বেগম (৪৭) ওই এলাকার ভাড়াটিয়া ও মুরাদনগরের পাঁচপুকুরিয়া গ্রামের মৃত মোস্তাক মিয়ার স্ত্রী।


এই আত্মহত্যার ঘটনায় প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগে ৪জনের নামে মামলা হলেও প্রকৃত জড়িতরা মামলা থেকে বাদ পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর শুরু থেকে দুই পরিবারের এই ঘটনা নিয়ে ফায়দা নেয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে একটা দালালচক্র এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর।


সরেজমিনে গেলে এলাকাবাসী ও এজাহার সূত্রে জানা যায়, বিগত ৫মাস পুর্বে হোমনার ভাষানিয়া ইউনিয়নের মোহনপুর গ্রামের প্রবাসী কাবিলের মেয়ে আখি আক্তারের (২০) সাথে বিয়ে হয় মুরাদনগরের পাঁচপুকুরিয়া গ্রামের মৃত মোস্তাকের ছেলে ফয়সালের।


তবে ফয়সালের বাবা মারা যাবার পর থেকেই তিতাসের বন্দরামপুরে নানা কামাল উদ্দিন কাজী মোল্লার বাড়ীর পাশে মুন্সি বাড়ীতে ভাড়া থাকতো। এখানেই ফয়সাল ও আখির বিয়ে হয় এবং বিয়ের এক মাসের মাথায় ফয়সালের বিরুদ্ধে পরকিয়ার অভিযোগ তুলে রাগ করে বাপের বাড়ীতে চলে যায় আখি আক্তার।
এই ঘটনায় নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পরপুরুষের সাথে পালিয়ে যাবার পাল্টা অভিযোগ তুলে একাধিকবার গ্রাম্য শালিসের আয়োজন করেন ফয়সালের পরিবার।


তবে গ্রাম্য শালিসকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে স্থানীয় একটা দালালচক্রের যোগসাঁজসে গত মার্চ মাসের ৬তারিখে আখির মা শিউলী আক্তার বাদী হয়ে তিতাস থানায় মামলা নং-৪ দায়ের করেন। ওই মামলায় ভিকটিম পারভীনসহ ৯জনকে অভিযুক্ত করে এবং অজ্ঞাত ২/৩জনকে আসামী করা হয়।


মামলার পর বিবাদীগণ বিজ্ঞ আদালত থেকে জামিন লাভ করে বাড়িতে এসে উপজেলা বিএনপি'র আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক যুবদল নেতা তোফায়েল খানের মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তির শর্তে প্রথমে তাকে ২০হাজার ও পরে ৫০হাজার টাকা দেয়া হয় এবং এই টাকা দেয়ার পরও আরো টাকা লাগবে বলে পারভীন বেগমকে মানসিকভাবে চাপ দেয়া হয় বলে ওই যুবদল নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী পরিবার।


এদিকে পারভীন বেগমসহ একই পরিবারের ৯জনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলার ভয় অন্যদিকে আরো টাকা দেয়ার জন্য যুবদল নেতার মানসিক চাপ, এসব সইতে না পেরে অবশেষে ক্ষোভে-দুঃখে বিষাক্ত কেড়ির ট্যাবলেট খেয়ে আত্মহত্যা করেন পারভীন বেগম (৪৭)।


মৃত্যুর পর নিহতের লাশের ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফনের মাধ্যমে ঘটনা ধামাচাপা দিতে ফের মরিয়া হয়ে উঠে ওই যুবদল নেতা এবং নিহতের স্বজনদের খুঁজতে থাকেন এবং প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন "তিনি থানার কাজ শেষ করে চলে এসেছেন"।


স্থানীয় সাংবাদিকরা এসব ঘটনার তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে তিনি প্রথমে বাধা প্রদান করে মেজাজ হারান এবং তাদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।


তবে সাংবাদিকদের সরব উপস্থিতির কারণে তিনি ব্যর্থ হন এবং লাশের ময়না তদন্ত করতে বাধ্য হন।
তবে পারভীন বেগমের আত্মহত্যার ঘটনায় নিহতের বোন বাদী হয়ে স্থানীয় প্রতিবন্ধী যুবক মোঃ শাহ পরান ও তার ভাই সজিবকে অভিযুক্ত করে হত্যায় প্ররোচণার মামলা দায়ের করায় আবারো বিতর্কের সৃষ্টি হয়।

 

যুবদল নেতা তোফায়েল আহমেদ খানের বিরুদ্ধে দুই দফায়  টাকা নেয়া ও মানসিক চাপ দেয়ার অভিযোগ তুলে বক্তব্য দিলেও মামলায় কেনো তার নাম নেই এমন প্রশ্নের জবাবে নিহতের বোন ও মামলার বাদী হোসনেয়ারা বেগম বলেন, গতকাল আমার মাথা ঠিক ছিলো না। আজকে যাদেরকে দোষি মনে করেছি; তাদের বিরুদ্ধেই মামলা করেছি। বাকিটা পুলিশ তদন্ত করে দেখবে।


প্ররোচণা মামলার ১নং বিবাদী শাহ পরাণের স্ত্রী লিপি আক্তার বলেন, আমার স্বামী একজন অঙ্গ প্রতিবন্ধী মানুষ। সে প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে গত ১৬বছর আমরা গ্রামেই যাই না, বাজারে দোকানের পাশেই ভাড়া বাসা নিয়ে থাকি। প্রতিহিংসা ও শত্রুতা বসত আমার স্বামী ও দেবরকে এই মামলায় জড়ানো হয়েছে। অথচ পুরো গ্রামবাসীর উপস্থিতে যুবদল নেতা তোফায়েলের বিরুদ্ধে টাকা নেয়া ও হুমকি-ধমকির অভিযোগ করেছিলো। এখন আপনারা তদন্ত করে সত্যটা তুলে ধরুন।


অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কয়েকজন সাংবাদিকের নাম উল্লেখ্য করে উপজেলা যুবদলের সাবেক নেতা তোফায়েল খান বলেন, "ওদেরকে জিজ্ঞেস করে নিউজ করো। আমাকে জিজ্ঞেস করে তো নিউজ করবা না।" স্থানীয় বিএনপি'র নেতাদের ইঙ্গিত করে বলেন, "তারা বাচ্চাগরে উল্ডা বুঝাইয়া, একটা প্যাচগোছ লাগাইতে চাইছে। আমাদের এখানে বিএনপি'র পদপ্রার্থী দাঁড়াইছে দু-তিন জন কেন্ডিডেট।" তবে টাকা লেনদেনের প্রশ্নে তিনি বলেন, "এসব ডাহা মিথ্যা।" পরে ফোন কেটে দেন।

 

টাকা লেনদেনের বিষয়ে তিতাস থানার অফিসার ইনচার্জ শহিদ উল্যাহ কিছুই জানেন না বলে জানান এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আই.ও) ট্রেনিং-এ থাকায় ও ভিকটিম মহিলা হওয়ায় তিনি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়ে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করেন। পারভীন বেগম ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা রয়েছে এবং তারা সবাই জামিনে রয়েছে বলে তিনি জানান। বিবাদীদের মধ্যে বয়সের সমস্যা থাকায়, তিনি সন্দেহ থেকে মামলাটি নিজে তদন্ত করে চার্জশীট গঠনের জন্য বিবাদীদের বাড়িতে গিয়েছেন বলেও জানান। তোফায়েল খান সম্পর্কে তিনি বলেন, তোফায়েলের সাথেও আমাদের কোন প্রকার, কোন কথা বার্তা হয় নাই, বরং সে (তোফায়েল) সকালে এসে আরো ঘটনা অন্য রকম বলে আমাদের শাসিয়ে যায়।


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫