ঢাকা প্রেস নিউজ
হিন্দু মহাজোটের গোলটেবিল বৈঠক
বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের মহাসচিব ড. গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক বলেছেন, দেশের সংখ্যালঘু সমস্যাটি মূলত রাজনৈতিক, তাই এর সমাধানও রাজনৈতিক উপায়ে করতে হবে। তিনি স্থানীয় এবং জাতীয় পর্যায়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সঠিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য তাদের জন্য পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থার প্রবর্তনের আহ্বান জানান।
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত "বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সুরক্ষায় করণীয়" শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা উঠে আসে।
আলোচনার মূল প্রবন্ধে ড. প্রামাণিক বলেন, "আমরা বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই। সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিকভাবে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে যারা দেশে ও বিদেশে মৌলবাদী প্রচার করছে এবং দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে, তাদের কার্যক্রম বন্ধ করা প্রয়োজন। এটা সম্ভব পৃথক নির্বাচন পদ্ধতি পুনঃপ্রবর্তনের মাধ্যমেই।"
তিনি আরও বলেন, সংখ্যালঘুদের জনসংখ্যানুপাতে আসন সংরক্ষণ করতে হবে। প্রতিটি দল তাদের প্রাপ্ত ভোটের ভিত্তিতে মনোনয়ন দেবে এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটাররা সরাসরি ভোট দিয়ে নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগ এখনও সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে, যা দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে। তারা মনে করেন, পৃথক নির্বাচন ব্যবস্থা চালু থাকলে এমন পরিস্থিতি এড়ানো যেত। ১৯৪৭ সালে হিন্দুদের সংখ্যা ছিল দেশের মোট জনসংখ্যার ৩৩ শতাংশ, যা ২০২৩ সালে কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭.৯৫ শতাংশে। তারা আশঙ্কা করেন, বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০-২২ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে হিন্দু সম্প্রদায় বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
বক্তারা আরও জানান, বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ উভয়েই তাদের শাসনামলে সংখ্যালঘুদের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব দেয়নি। এছাড়া, অন্যান্য রাজনৈতিক দল থেকেও সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত নয়। ফলে ভবিষ্যতেও জাতীয় সংসদে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব শূন্য থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বক্তারা আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের মান-মর্যাদাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। হাজার বছরের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশকে মৌলবাদী ও জঙ্গিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। ধর্ম অবমাননার অজুহাতে গত ১৫ বছরে দেশের বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বসতবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, এবং এই সব ঘটনায় আওয়ামী লীগের জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির সহ আন্তর্জাতিক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, জামায়াতে ইসলামীর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব যোবায়ের, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশ্রাফ আলী আকন, আইনজীবী আবু হেনা রাজ্জাকী, শ্রীকৃষ্ণ সেবা সংঘের সভাপতি নকুল সাহা, সাংবাদিক রাজীব আহমেদ, এবং হিন্দু মহাজোটের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।