ঢাকা, ১৩ জুলাই ২০২৫ (ঢাকা প্রেস):
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ভেঙে দুটি পৃথক বিভাগ গঠনের পেছনে থাকা অধ্যাদেশে কিছু মৌলিক ত্রুটি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি জানিয়েছেন, এ অধ্যাদেশ সংশোধনের সুপারিশ করবে সরকার গঠিত উপদেষ্টা কমিটি।
আজ সকালে সচিবালয়ে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প, বন্দর ও রাজস্ব আদায় কার্যক্রমকে গতিশীল করার লক্ষ্যে গঠিত পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটির প্রধান তিনি।
আলোচনায় সম্মতি, তবে শর্ত রয়েছে
সংবাদ সম্মেলনে ফাওজুল কবির জানান, এনবিআরকে বিভক্ত করার বিষয়ে আয়কর ও শুল্ক-ভ্যাট ক্যাডারের কর্মকর্তারা সম্মতি দিলেও তারা দাবি তুলেছেন যে, নতুন দুটি বিভাগে নিয়োগ হবে কেবল তাদের ক্যাডার থেকেই। তবে উপদেষ্টা পরিষ্কার করে জানান, এই দাবি পুরোপুরি গ্রহণযোগ্য নয়, আবার প্রশাসন ক্যাডারের একক নিয়ন্ত্রণও মেনে নেওয়া হবে না।
নীতি নির্ধারণে সুপারিশ আসছে
তিনি বলেন, "দুটি নতুন বিভাগে সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা তৈরি করার প্রস্তাব দেবে কমিটি। সেই নীতিমালায় স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা হবে, কী ধরনের যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি এসব পদে নিয়োগ পেতে পারেন।"
অধ্যাদেশের অস্পষ্টতা ও কৌশল নিয়ে প্রশ্ন
ফাওজুল কবির অভিযোগ করেন, এনবিআর বিভক্তির অধ্যাদেশ তৈরিতে কিছুটা ‘কৌশলের আশ্রয়’ নেওয়া হয়েছে। যেমন, সচিব নিয়োগে বলা হয়েছে ‘উপযুক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তি’—কিন্তু যোগ্যতার ধরণ ব্যাখ্যা করা হয়নি। একইভাবে অধ্যাদেশের ৭(৩) ধারায় বলা হয়েছে, ‘রাজস্ব আহরণ সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা’ থাকতে হবে, কিন্তু সেটি কোন ধরনের রাজস্ব—তা স্পষ্ট নয়।
“এটা কি ভূমি রাজস্ব, না কি পাসপোর্ট ফি? এই অস্পষ্টতা দূর করতেই আমাদের সুপারিশ আসবে,” বলেন উপদেষ্টা।
‘এনবিআর’ নাম বাতিলের ইঙ্গিত
তিনি আরও বলেন, “আমরা মনে করি, এনবিআর নামটি এখন একটি নেতিবাচক প্রতীক হয়ে উঠেছে। জনগণের মধ্যে হাস্যরসের জন্ম দেয়। তাই এনবিআর নামটি না রাখার পক্ষেই মত দিয়েছেন অধিকাংশ সদস্য।”
‘গো-স্লো’ আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি
উপদেষ্টা বলেন, এখনও খবর পাওয়া যাচ্ছে—কিছু কর্মকর্তা কাজের গতি কমিয়ে দিয়েছেন। রাজস্ব আদায়ে এই 'গো-স্লো' আন্দোলনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতে। চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় ধাক্কা লেগেছে।
তিনি আরও জানান, আন্দোলনের সময় ও পরবর্তী সময়ে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কেমন ছিল—তা মাঠপর্যায়ে গিয়ে যাচাই করবে উপদেষ্টা কমিটি।
হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সরকারবিরোধী অবস্থান!
এক জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, আন্দোলনকারীরা একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করে সেখানে সরকারবিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। এ বিষয়ে অর্থ বিভাগকে তদন্তের সুপারিশ জানানো হবে বলেও জানান ফাওজুল কবির।
ব্যবসায়ীদের ক্ষোভ ও সরকারের ধৈর্য
ব্যবসায়ী নেতারা কমিটিকে জানিয়েছেন—এনবিআরের কর্মকর্তাদের আন্দোলনের ফলে তারা অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন এবং এখনও হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তারা সরকারের সংস্কার উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও প্রশ্ন তুলেছেন, “কেন আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি?”
উপদেষ্টা বলেন, “সরকার চায় গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এগোতে। এ জন্যই এত ধৈর্য দেখানো হয়েছে।”
‘তাদের অভয় দেওয়ার কিছু নেই’
এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন—এই মুহূর্তে এনবিআরের কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করার মতো কিছু বলবেন কি না। উত্তরে উপদেষ্টা সাফ জানিয়ে দেন, “তাদের অভয় দেওয়ার কিছু নেই। তারা শিশু না।”
বিশ্বব্যাংকের শঙ্কা অমূলক
বিশ্বব্যাংকের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা ও বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে অর্থনীতি মন্দার মুখে পড়তে পারে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “এই ধরনের রিপোর্ট সাধারণত পুরনো তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি হয়। বাংলাদেশ এখন সেই সময় পার করে এসেছে।”
সূত্র: বাসস।