|
প্রিন্টের সময়কালঃ ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৯:৪৪ পূর্বাহ্ণ     |     প্রকাশকালঃ ২৫ জানুয়ারি ২০২৫ ০২:৪৭ অপরাহ্ণ

১৬ বছর পর বাড়িতে তারিফুল, স্বজনদের চোখে অশ্রু ও আনন্দ


১৬ বছর পর বাড়িতে তারিফুল, স্বজনদের চোখে অশ্রু ও আনন্দ


ঢাকা প্রেস,টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:-

 

খেলাধুলার প্রশিক্ষণের জন্য বান্দরবান থেকে ঢাকার পিলখানায় এসেছিলেন সৈনিক তারিফুল ইসলাম। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে, কোনো অপরাধ না করেও তাকে ১৬ বছর কাটাতে হয়েছে কাশিমপুর কারাগারের অন্ধকার কুঠুরিতে। তখন তার একমাত্র সন্তান মোবিন ইসলামের বয়স ছিল মাত্র দুই মাস। আজ মোবিন নবম শ্রেণিতে পড়ে। এই দীর্ঘ সময়ে তারিফুল হারিয়েছেন তার শ্বশুর-শাশুড়িসহ অনেক আপনজনকে। এমনকি শেষবারের মতো তাদের মুখ দেখার সুযোগও পাননি।
 

বৃহস্পতিবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুর ২টায় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে নিজ বাড়ির আঙিনায় পা রাখেন তারিফুল। বাড়িতে প্রবেশ করতেই পরিবারের সদস্যরা আবেগে তাকে জড়িয়ে ধরেন। পুরো পরিবেশ হয়ে ওঠে আবেগঘন।
 

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ফসলান্দি গ্রামের শাহ আলম ও খোদেজা বেগমের ছেলে তারিফুল ইসলাম ২০০৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ১০ রাইফেল ব্যাটালিয়নে যোগ দেন। ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে বিয়ে করেন মির্জা লিমাকে। একই বছরের ২২ ডিসেম্বর তাদের সংসারে মোবিন নামে একটি পুত্রসন্তান জন্ম নেয়। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের আগের দিন তিনি বান্দরবান থেকে ঢাকার পিলখানায় স্পোর্টস প্রশিক্ষণের জন্য আসেন।
 

তারিফুল জানান, প্রশিক্ষণের সময় হঠাৎ গুলির শব্দ শুনে তিনি পরিস্থিতি দেখতে যান। সেখানে অস্ত্রধারীদের দেখে ভয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। তাদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করার জন্য চাপ দেওয়া হয়। এমনকি, অপারেশনে যোগ না দিলে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়।
 

অস্ত্রধারীদের বিষয়ে তিনি বলেন, “তারা বিডিআর সদস্য ছিল না। তাদের অধিকাংশের মুখ কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল। আমাদের ব্যবহৃত অস্ত্রের সঙ্গে তাদের অস্ত্রের মিলও ছিল না।”
 

জেলে থাকার সময়ের কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, “বাইরের আলো দেখার আশা প্রায় ছেড়েই দিয়েছিলাম। মাঝে মাঝে আন্দোলনের খবরে আশা জাগত, কিন্তু সেগুলোও ব্যর্থ হয়ে যেত। তবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলে আজ মুক্ত হয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। পাশাপাশি যারা আমার মুক্তির জন্য কাজ করেছেন, তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞ।”
 

তার একমাত্র সন্তান মোবিন বলে, “আমার দুই মাস বয়স থেকে আব্বু কারাগারে ছিলেন। এত বছর পর তাকে কাছে পেয়ে যে আনন্দ পাচ্ছি, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।”
 

তার স্ত্রী মির্জা লিমা জানান, “বিয়ের এক বছর পর বিনা অপরাধে কারাগারে যেতে হয়েছে আমার স্বামীকে। দীর্ঘ ১৬ বছর যন্ত্রণায় কাটিয়েছি। আমার মা-বাবা এই কষ্ট সইতে না পেরে মারা গেছেন। আজ আমার স্বামী ফিরে এসেছেন, এটাই এখন সবচেয়ে বড় শান্তি।”
 

তারিফুলের বাবা-মা শাহ আলম ও খোদেজা বলেন, “আমরা কখনো ভাবিনি, আমাদের ছেলে এভাবে ফিরে আসবে। মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া যে তিনি আমাদের ছেলে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন।”
 

১৬ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে তারিফুল আজ পরিবারের বুকে ফিরে এসেছেন। তিনি আবারও তার চাকরিতে ফিরে যাওয়ার আশা ব্যক্ত করেছেন।


সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির     |     প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ   +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ   +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫