সুইসাইড ফরেস্ট: যে জঙ্গলে আত্মহত্যা করতে যায় মানুষ, কী আছে সেখানে?

‘মা-বাবার দেওয়া অন্যতম উপহার হল জীবন। তাই আপনার সন্তান ও পরিবারের কথা ভাবুন। যা যা সমস্যা রয়েছে তা নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সকলকে জানান’—একটি জঙ্গলের বাইরে ঠিক এই ধরণের সাইনবোর্ড রাখা রয়েছে। কেন জানেন?
জাপানের রাজধানী টোকিও থেকে মাত্র ২ ঘণ্টা দূরত্বে একটি জঙ্গলের বাইরে লাগানো রয়েছে সাইনবোর্ডটি। সাধারণত বনের বিপজ্জনক প্রাণীদের থেকে সতর্ক করার জন্য সাইনবোর্ড ঝোলানো হয়। কিন্তু জাপানের আওকিগাহারা নামের এই বনে মানুষকে আত্মহত্যা না করতে উৎসাহিত করা হয়।
জানা গেছে, আওকিগাহারা বন প্রায় ৩৫ বর্গ কিমি জুড়ে বিস্তৃত। এটি এতই ঘন যে একে ‘গাছের সমুদ্র’ও বলা হয়। অনেকেই এখানে বেড়াতে আসেন। তবে সব পর্যটকের এমন উদ্দেশ্য থাকে না। ২০১৩-২০১৫ সালের মধ্যে এখানে ১০০ টিরও বেশি আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে। সেই কারণে এখন জাপান সরকার আওকিগাহারার জঙ্গলের আত্মহত্যার পরিসংখ্যান কত তা জনগণকে বিস্তারিত ভাবে জানায় না।
যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর গোল্ডেন গেট ব্রিজের পর বিশ্বে সবচেয়ে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে এই আওকিগাহারা জঙ্গলে। এই কারণেই এ জঙ্গলকে বলা হয় ‘সুইসাইড ফরেস্ট’। কিন্তু সবসময় এই জায়গা কিন্তু এমন ছিল না। ইতিহাসের পাতা উল্টালে দেখা যাবে, প্রায় হাজার বছর আগে এখানে শুধু লাভা প্রবাহিত হত। প্রকৃতপক্ষে ৮৬৪ সালে জাপানের মাউন্ট ফুজিতে একটি বিস্ফোরণ হয়েছিল। যা ছয় মাস ধরে চলেছিল। সেই সময় আশেপাশের অনেক গ্রাম ধ্বংস হয়ে যায়। গত কয়েকশ বছর ধরে সেই লাভা জমাট বেধে ঘন-ঘন বন তৈরি হয়েছে। এই বন আজ আওকিগাহারা নামে পরিচিত।
১৯৬০ সালের জনপ্রিয় ছোটগল্প ‘টাওয়ার অফ ওয়েভস’-এও আওকিগাহার উল্লেখ রয়েছে। গল্পটি এক প্রেমিক ও প্রেমিকার। যাদের সমাজ বাধা দেয়। শেষ পর্যন্ত প্রেমিকা গিয়ে ওই জঙ্গলে আত্মহত্যা করেন।
২০০৯ সালে মার্কিন সংবাদাধ্যম সিএনএন এক ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিয়েছিল। যেখানে আওকিগাহারা জঙ্গলে তিনি নিজের জীবন শেষ করার চেষ্টা করেছিলেন। সেই ব্যক্তি বেঁচে থাকার ইচ্ছা হারিয়ে ফেলেছিল। তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছিল। সেই কারণে তিনি জঙ্গলে আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলেন, তবে সফল হতে পারেননি। কিন্তু বনে পৌঁছানোর পর লোকটি তার কব্জি কেটে ফেলেছিলেন।
আশেপাশের বাসিন্দারা জানান, আওকিগাহারা জঙ্গলে রহস্যময় জাদুকরী শক্তি রয়েছে। সেই কারণে তারাই মানুষজনকে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করতে বাধ্য করে। এছাড়াও এই জঙ্গল এত গভীর যে এখানে হারিয়ে গেলে বের হওয়া খুব কঠিন। কারণ কম্পাস বা মোবাইলের মতো প্রযুক্তিও নাকি এখানে কাজ করে না।
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫