প্রকাশকালঃ
২০ জুলাই ২০২৩ ০১:৫৭ অপরাহ্ণ ২৮৫ বার পঠিত
ষড়ঋতুর দেশ - বাংলাদেশ। মৌসুমের বৈচিত্র্যের কারণে এই দেশের এক এক কোণের সৌন্দর্য, এক এক সময়ে শিখরে থাকে। তাই ভিন্ন ভিন্ন মৌসুমে গড়ে ওঠে নতুনভাবে দেশের পর্যটন কেন্দ্রগুলো দেখার অনন্য সুযোগ। গ্রীষ্মকাল যেমন কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকত ঘুরে আসার সেরা সময়, তেমনই শীতকালটা পাহাড় পর্বত দেখার জন্য বেশি উপযুক্ত।
ঠিক তেমনই বর্ষাকালটা সিলেট ঘুরে আসার জন্য মোক্ষম সময়। সিলেটের পাহাড় এবং বনের সবুজ আরও তাজা হয়ে ওঠে বর্ষার সুবাদে। বর্তমানে সিলেট বিভাগের অন্যান্য আকর্ষণগুলোর মাঝে নতুন একটি গন্তব্যের জনপ্রিয়তা বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সেটা হল টাঙ্গুয়ার হাওর।
প্রায় ১০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত টাঙ্গুয়ার হাওরের জলাভূমি। হাওর এলাকার জনপ্রিয়তা বিগত কয়েক বছরের মাঝেই আশ্চর্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সাথে সাথে টাঙ্গুয়ার হাওরকে ঘিরে বেড়ে উঠেছে পর্যটনের নতুন এক কেন্দ্রভূমি। আগে দেখা যেত, শুধুমাত্র রোমাঞ্চপ্রিয় তরুণরাই টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে উৎসাহী ছিল। নৌকায় সুষ্ঠু থাকার ব্যবস্থা, রান্নার ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশের নিশ্চয়তা না থাকায়, পরিবার সহ টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ ছিল একটি অকল্পনীয় বিষয়। কিন্তু বর্তমানে হাওরে ৬৫টিরও বেশি বিলাসবহুল এবং আধুনিক হাউসবোট দৈনন্দিন পর্যটকদের নিয়ে চলাচল করে। আধুনিক আসবাবপত্র, ওয়াশরুম, এমনকি এয়ার কন্ডিশনিং- ও পাওয়া যায় এইসব হাউসবোটে। কিছু কিছু নৌকায় এখন ব্যবস্থা হয়েছে বাথটব এবং জ্যাকুজির।
হাওরে ঘুরে বেড়ানোকে কেন্দ্র করে আরাম আয়েশ অনেক বাড়লেও, আবেগটা ঠিক আগের মতোই রয়ে গেছে। তাছাড়াও হাওরের আশেপাশের দর্শনীয় স্থানগুলো এখনো একইভাবে ঘুরা যায়। পাহাড়ে ঘেরা হাওরের শান্ত স্থির পানিতে কিছু সময় কাটাতে পারা আপনার বর্ষাকালের সেরা স্মৃতিগুলোর মাঝে একটা হয়ে দাড়াতে পারে। টাঙ্গুয়ার হাওরের অত্যাধুনিক হাউসবোটে ট্যুর পরিকল্পনা করলে তাই এই ৫টি কাজ অবশ্যই করতে হবে।
হাওরের স্বচ্ছ পানিতে সাঁতার কাটা
টাঙ্গুয়ার হাওরের সমগ্র অভিজ্ঞতার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে হাওরের পানিতে সাঁতার কাটা। সাম্প্রতিক কালের ট্যুরগুলোতে টাঙ্গুয়ার হাওরের ওয়াচ টাওয়ার এর পাশেই সাঁতার কাটার সুযোগ করে দেওয়া হয়। তাই এই সুযোগটা কোনভাবেই হাতছাড়া করা উচিত না।
টাটকা হাওরের মাছের স্বাদ নেওয়া
তাহিরপুর উপজেলায় হাওর এলাকার আশেপাশে পাওয়া যায় টাটকা শাকসবজির সমাহার। তাছাড়া হাওরের তাজা মাছ তো আছেই। টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকদের আনাগোনার প্রাক্কাল থেকেই হাওর থেকে তোলা তাজা মাছ প্রধান খাবারগুলোর মাঝে একটা ছিল। কয়েক বছর আগেও পর্যটকবাহী নৌকায় মাঝিরা নিজেরাই মাছ ধরতেন। সেই মাছ দিয়ে সম্পন্ন করা হত সারাদিনের খাওয়া দাওয়া। কিন্তু বর্তমানে এই প্রক্রিয়াটি আরও আধুনিক হয়ে গিয়েছে। টাঙ্গুয়ার হাওর ট্যুরগুলোতে হাওরের তাজা মাছই পরিবেশন করা হয়, কিন্তু মাঝিরা তা নৌকায় নিজ হাতে ধরে না। পূর্ব থেকেই হাউসবোটে মজুদ করে রাখা হয় পর্যাপ্ত পরিমাণে তাজা মাছ। তাই চোখ এবং মনের শান্তির পাশাপাশি, পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মাঝে স্বাদও পরিতৃপ্ত থাকবে টাঙ্গুয়ার হাওরের ট্যুরে।
লাকমা ছড়া কিংবা 'মিনি জাফলং' ঘুরে দেখা
সুনামগঞ্জের স্বল্প পরিচিত আকর্ষণগুলোর মধ্যে একটি হল লাকমা ছড়া। অনেকটা জাফলং এর মত দেখতে এই জায়গাটায় পর্যটকদের ভিড় বেশ কম। তাই আপনি একান্ত নিবিড় কিছু সময় কাটাতে পারবেন প্রকৃতির সাথে। মেঘালয়ের পাহাড়ের মাঝে অবস্থিত লাকমা ছড়া বর্ষাকালে তার সম্পূর্ণ রূপে জেগে ওঠে।
শিমুল ফুলের সমাহার দেখা
টাঙ্গুয়ার হাওরের আরেকটি আকর্ষণ হল শিমুল বাগান। ফুল ফোটার মৌসুমে বাগানটিতে গেলে লাল ফুলে ঘেরা বাগান দেখতে পাওয়া যায়। কিন্তু এখানে সৃষ্টি হতে পারে নতুন এক দ্বিধার। শিমুল বাগানে ফুল ফোটে শীতকালে। অথচ হাওর ঘুরার মৌসুম বর্ষা এবং শরৎ। তবে চিন্তার কোন কারণ নেই, বর্ষাকালে সবুজ পাতায় ভরপুর শিমুল বাগানের সৌন্দর্য অন্যরকম। শিমুল বাগানে আরও একটি আকর্ষণ আছে - ঘোড়ায় চড়া। শিমুল গাছে ফুল থাকুক আর না থাকুক, বছরজুড়ে শিমুল বাগানে থাকে অশ্বারোহীর দল। চাইলে আপনিও কিছুক্ষণের জন্য ঘোড়ায় চড়তে পারবেন বাগানের মাঝে দিয়ে।
নিলাদ্রি লেকের মাঝে ভ্রমণ
টাঙ্গুয়ার হাওরের কাছে নিলাদ্রি লেক আরেকটি আশ্চর্য দৃশ্য। লেকের স্বচ্ছ পানিকে মনে হয় আকাশ থেকে পড়া এক ফোটা অশ্রুজল। পাহাড় ঘেরা হ্রদটি সত্যিকার অর্থেই ঐন্দ্রজালিক এক দৃশ্য। লেকটির প্রকৃত নাম শহীদ সিরাজ লেক। অন্যান্য পর্যটনের জায়গার তুলনায় নিলাদ্রি লেকে ভিড় কিছুটা কম থাকে। লেকের আশেপাশে তেমন কোন প্রতিষ্ঠিত দোকান পাট নেই। তবে ডাব, ফলমূল ইত্যাদি নিয়ে কিছু বিক্রেতারা লেকের পাশে বসে থাকেন। তাই যদি টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে যান, তবে অবশ্যই একবার নিলাদ্রি লেক ঘুরে আসা দরকার।
বাংলাদেশের পর্যটন খাতে ধীরে ধীরে দেখা দিচ্ছে প্রযুক্তির ছোঁয়া। যেই প্রযুক্তির কারনে ৫ বছর আগে টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরে আসা আর এখন ঘুরার মধ্যে আকাশ পাতাল তফাত। একইভাবে উন্নতি হয়েছে ভ্রমণের প্রস্তুতিপর্বেরও। কয়েক বছর আগেও টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরতে চাইলে তাহিরপুর যেয়ে নিজে দামাদামি করে নৌকা ঠিক করা লাগতো। বাজারে যাওয়া, বাবুর্চি জোগাড় করা, মাঝি বাছাই করা - সবই আলাদা আলাদা ভাবে নিজে করা লাগতো। ফলে ভ্রমণ পূর্বেই বেশ কিছুটা কসরত জরুরি ছিল। কিন্তু এখন দৃশ্যকল্পটা একেবারেই ভিন্ন। অনালাইনেই ছবি দেখে পছন্দ করা যায় নিজের জন্য সেরা হাউসবোট। এই কাজটি করার জন্য আপনি ব্যবহার করতে পারবেন গোযায়ান। শুধু তাই নয়, এখানে দামাদামিরও কোন প্রয়োজন নেই। ওয়েবসাইটেই পেয়ে যাবেন জনপ্রতি ট্যুরের খরচ। সেই ট্যুরে কোথায় কোথায় ঘুরতে পারবেন, প্রতিবেলা খাবারের মেনু কি, ভ্রমণসূচি- সবই বিস্তারিতভাবে দেওয়া থাকে। তাই পরের ছুটিতে যেখানেই ঘুরতে যান, গোযায়ান থেকেই বুকিং করতে পারেন ভ্রমণের সবকিছু।
টাঙ্গুয়ার হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য এই বর্ষাই সেরা সময়। আপনার পরবর্তী ছুটিতে টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরার পরিকল্পনা করে ফেলুন এখনই।