কুড়িগ্রামের রৌমারীতে উপবৃত্তির নামে অবৈধ টাকা আদায়:

প্রকাশকালঃ ০৯ জুন ২০২৪ ০৬:৪৩ অপরাহ্ণ ৭৩৮ বার পঠিত
কুড়িগ্রামের রৌমারীতে উপবৃত্তির নামে অবৈধ টাকা আদায়:

ঢাকা প্রেসঃ
আনোয়ার সাঈদ তিতু, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি:-

 

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় উপবৃত্তির তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত এবং নগদ অ্যাকাউন্ট খোলার নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে উপজেলার মাধ্যমিক পর্যায়ের বিভিন্ন বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। শ্রেণিভেদে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা করে আদায় করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

 

উপজেলার কুটিরচর স্কুল অ্যান্ড কলেজের ৯ম শ্রেণি পড়ুয়া আল-আমিন বলেন, ‘উপবৃত্তির তালিকাভুক্তির জন্য তাদের কাছ থেকে ১৫০ টাকা করে নিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। শ্রেণিশিক্ষকরা ৮ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জোর করে ২০০ টাকা করে আদায় করেছেন।’

 

চরশৌলমারী বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র শান্ত বলেন, ভর্তির পর উপবৃত্তির তালিকায় নাম তুলে দেওয়ার জন্য ২০০ টাকা নিয়েছে।

 

বাইটকামারী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রদের কাছ থেকে ৪০০ এবং ৮ম শ্রেণির ছাত্রদের কাছ থেকে ৫০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। সোনাভরী উচ্চবিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ১০৫ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত।

 

এ ছাড়া যাদুরচর উচ্চবিদ্যালয় এবং রৌমারী কেরামতিয়া মাদ্রাসাসহ উপজেলার প্রায় সব মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উপবৃত্তির তালিকার নামে টাকা আদায় করেছে বলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়।
 

 

অভিভাবক ফজর আলী আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ দিন আইনা দিন খাইয়া পোলাডারে লেখাপাড়া শিখাইতেছি। কিন্তু মাস্টারগো চাপে এহন আমি আর পারি না। সরকার বৃত্তি দেয়। সেই বৃত্তি নিতে আবার মাস্টারগো ৪০০ টেহা দেওয়া নাগে।’

 

অষ্টম শ্রেণির ছাত্র মমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বাবা ভ্যানগাড়ি চালিয়ে আমার লেখাপড়া খরচসহ পরিবার চালায়। কিন্তু কয়দিন পরপর মাস্টাররা বলে আজকে উপবৃত্তির টাকা দেও, কাল সেশন ফি, বোর্ড ফি, পরীক্ষার ফি- এভাবেই শুধু টাকা দিতে হয়। না দিলে বলে পরীক্ষায় নাম্বার দিবে না।’

 

জানতে চাইলে সোনাভরী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহজাহান আলী বলেন, ‘শুধু ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে কম্পিউটার খরচ হিসাবে ১৫০ টাকা করে নিয়েছি।’

 

বাইটকামারী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘আমি টাকা নিয়েছি, তবে সেটা উপবৃত্তির না।’

 

চরশৌলমারী বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমি উপবৃত্তির তালিকার নাম করে দেওয়ার জন্য ২০০ টাকা নেই নাই। ১০০ টাকা নিয়েছি খরচ হিসেবে।’

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. বদরুল হাসান বলেন, ‘টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এ রকম কোনো সরকারি নীতিমালা নেই। যে প্রতিষ্ঠান প্রধানরা শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করছেন, লিখিত অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’