প্রকাশকালঃ
২৯ জুলাই ২০২৪ ১১:১৬ পূর্বাহ্ণ ৯৭ বার পঠিত
আহা, কী সেই দিন ছিল। এখন ভাবলেও আনন্দ লাগে। আবার কষ্টও বাড়ে। বাসা থেকে বের হয়ে পাঁচ মিনিট হাঁটলেই মেট্রো রেলস্টেশন। আবার স্টেশন থেকে নেমে তিন মিনিট হাঁটলেই অফিস। এখন মনে হচ্ছে ঢাকার ভয়ংকর যানজটের মধ্যে কিছুদিন স্বর্গে ছিলাম।’ মেট্রোর শূন্যতায় বেড়েছে ভোগান্তিমো. আরিফুর রহমান নামের এক ব্যক্তি এভাবেই নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করলেন। তিনি থাকেন রাজধানীর মিরপুরে।
চাকরি করেন মতিঝিলে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। মেট্রো রেল বন্ধ থাকায় বাসে যাতায়াত করতে হচ্ছে তাঁকে। চালু হওয়ার পর থেকে মেট্রো রেলেই যাতায়াত করতেন তিনি। রাজধানীর মনিপুরীপাড়ার বাসিন্দা শাহীন আলম গতকাল যাবেন পল্টনে।
দুপুরে তাঁকে ফার্মগেটে ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলের চালকের সঙ্গ দর-কষাকষি করতে দেখা যায়। চালক তাঁর কাছে ২৫০ টাকা চাচ্ছেন। তিনি ২০০ টাকা পর্যন্ত দিতে রাজি আছেন। কথা হলে শাহীন আলম বলেন, ‘আজ খালি মেট্রো রেল বন্ধ দেখে ব্যাটারা এত ভাব নিতে পারতেছে। মেট্রো চালু থাকলে ১৫০ টাকায় চলে যেতেন।
যদিও তখন তার (মোটরসাইকেলচালক) সঙ্গে আমার কথা হতো না। আমি তো মেট্রোতেই চলে যেতাম।’ শুধু শাহীন আলম বা আরিফুর রহমানের গল্পই এমন নয়। গত মাসের (জুন) হিসাব পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রতিদিন গড়ে তিন লাখ ৫০ হাজার মানুষ মেট্রো রেলে নিয়মিত ভ্রমণ করত। তাদের এখন বিকল্প পরিবহন ব্যবহার করতে হচ্ছে।
১৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে দুর্বৃত্তদের হামলায় মেট্রো রেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ নম্বরে অবস্থিত স্টেশন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরপর রেল চলাচল বন্ধ করে দেয় মেট্রো পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।
মেট্রো রেল বন্ধ থাকায় মানুষের ভোগান্তির কথা উল্লেখ করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গত শনিবার বলেছিলেন, মেট্রো রেল বন্ধ থাকায় মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে। ৩০ মিনিটের পথ দুই ঘণ্টায়ও যেতে পারছে না। কবে নাগাদ চালু হবে তা নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। মেট্রো রেলের কাজীপাড়া ও মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশন ধ্বংসপ্রাপ্ত। যন্ত্রপাতি এনে এক বছরেও এটা সচল করা সম্ভব হবে না।
গত কয়েক দিনের দীর্ঘ যানজটে মানুষের ভোগান্তি ভাবনার চেয়েও বাস্তবে বেশি হচ্ছে। মেট্রো রেল বন্ধ থাকায় রেলের যাত্রীদের বাসে যেতে হচ্ছে। এতে পরিবহন সংকট তৈরি হচ্ছে, বিশেষ করে অফিসের সময় যাত্রীদের বাসের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
গতকাল বিকেলে কাকরাইল মোড়ে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন জহিরুল ইসলাম। তিনি পল্টন থেকে যাবেন উত্তরা। পল্টনে বাস না পেয়ে হাঁটতে হাঁটতে কাকরাইল মোড়ে এসে থেমেছেন। দাঁড়িয়ে আছেন প্রায় ২৫ মিনিট। এই সময়ে কয়েকটি বাস সামনে দিয়ে গেলেও তিনি সেগুলোতে ওঠার সুযোগ পাননি।
জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে একই অবস্থা। আমার অফিস শনিবারও খোলা থাকে। গতকাল (শনিবার) তো চার ঘণ্টায় বাসায় গেছি। রাস্তায় ভয়ংকর যানজট। আগে যখন বাসে নিয়মিত যাতায়াত করতাম তখন এগুলো সয়ে গিয়েছিল। মেট্রোতে যাতায়াতের অভ্যাস হয়ে যাওয়ায় এই ভোগান্তি আর নিতে পারছি না। মেট্রো চালু হলে বাঁচি।’
জানতে চাইলে ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, মেট্রো রেল কবে চালু হবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না। একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ট্রেন চালুর বিষয়ে সেই কমিটি সুপারিশমূলক পরামর্শ দেবে। কমিটির মতামতের ওপর ভিত্তি করে ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সেটি কবে হতে পারে সেই ধারণাও এখন দেওয়া সম্ভব না।
এদিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) গত বছরের ১৭ জুলাই থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একটি জরিপ পরিচালনা করে। দেড় হাজার যাত্রীর তথ্য নিয়ে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। ওই সময় মেট্রো আংশিক (উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও) চলাচল করত। জরিপে দেখা গেছে, যারা মেট্রো রেলে চলাচল করছে তাদের ৬০ শতাংশই আগে বাসে চলাচল করত। মেট্রো রেল পুরোপুরি চালু হওয়ার পর এই সংখ্যা আরো বাড়ার কথা।