নওগাঁর বদলগাছী কোলার হাটে সরকারি নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে কৃষকের কাছ থেকে অতিরিক্ত টোল আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। আট টাকার টোল নেওয়া হচ্ছে ২০ টাকা। প্রতিমণ আম বিক্রি করলেই নেওয়া হচ্ছে ৫০ টাকা টোল। সম্প্রতি টোল আদায়কারী ডালিমের সাথে আম বিক্রেতারা ৫০ টাকা টোল তোলা নিয়ে তর্ক-বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন।
সম্প্রতি কোলার হাটে অতিরিক্ত টোল আদায়ের তথ্য সংগ্রহকালে হাট ইজারাদারের অংশীদার ফেরদৌস হোসেন জানান, অতিরিক্ত টোল আদায় নিয়ে লেখালেখি করলে ভালো নিউজ হবে ঠিকই, কিন্তু তাতে কোনো কিছুই হবে না। কারণ যা করা হয় তা ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত ঠিক রেখেই করা হয়। হাট ইজারা দেওয়ার সময় টোল আদায়ের রেট চার্ট বা সরকারি নীতিমালা দিয়েছে। কিন্তু সেটা কাগজে লেখা থাকে।
বাস্তবে সরকারি নীতিমালা কোনো হাটে ব্যবহার হয় না। তিনি আরো বলেন, জেলার সবচেয়ে বড় হাট মহাদেবপুর উপজেলার মাতাজিহাট। সেখানে দেখেন, কী রকম অতিরিক্ত টোল আদায়ের মহোৎসব চলছে। কারো কিছুই করার নেই।
ভুক্তভোগী হাটুরিয়ারা (যারা হাটে ক্রয়-বিক্রয় করেন) জানান, হাট ইজারা দেওয়া হলেও কখনো রেট চার্ট ঝোলানো হয়নি এবং রশিদ না দিয়ে নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত টোল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নওগাঁ জেলা হাট-বাজার ইজারা টোল রেট নীতিমালা অনুসারে চাল। গমের খুচরা দোকান ও চালঘরের সরকারি টোল রেট ৭ টাকা, টোল নেওয়া হয় ২০ টাকা। তরকারী দোকান প্রতি (বড়) রেট ১২ টাকা, নেওয়া হয় ২০ টাকা। আর দোকান ছোট হলে রেট ৭ টাকা, কিন্তু নেওয়া হয় ২০ টাকা।
খাজা, মুড়ি, মুড়কি, ভাজা, চানাচুর, বাদাম, ঝুড়ি দোকান প্রতি রেট পাঁচ টাকা, নেওয়া হয় ২০ টাকা। মুদির দোকান প্রতি রেট আট টাকা, নেওয়া হয় ২০ টাকা। বিস্কুটের দোকান প্রতি রেট ছয় টাকা, নেওয়া হয় ২০ টাকা।
মুদি দোকানী খাদেমুল ইসলাম জানান, গত বছর কোলার হাটের ডাক ছিল এক কোটি টাকা। টোল নিয়েছে ১৫ টাকা করে। এবার ডাক হয়েছে ৫৬ লাখ টাকা, কিন্তু জোরপূর্বক টোল নিচ্ছে ২০ টাকা করে। ১৫ টাকা দিয়েছিলাম, আদায়কারী আমার মুখে টাকা ছুড়ে মেরেছে। তারপর বলেছি, রশিদ না দিলে আর টোল দেব না। গত দুই হাট থেকে রশিদ দিয়ে নিচ্ছে ২০ টাকা করে।
বারফালা গ্রামের জামালসহ অর্ধশতাধিক পটল, বেগুনচাষি জানান, প্রতিমণ ২০ টাকা হারে টোল নিচ্ছে। হাটের ঝাড়ুদার নেয় ১০ টাকা করে এবং ওজন নেয় ৪২-৪৩ কেজিতে মণ হিসাবে। কে শোনে কার কথা!
বিষ্ণুপুর গ্রামের ছানোয়ার জানান, শুক্রবার হাটে ৪৩ হাজার ৫০০ টাকায় গরু কিনেছিলেন। টোল নিয়েছেন ৫৫০ টাকা, বিক্রেতার কাছ থেকে নিয়েছে ৫০ টাকা। সরকারি রেট গরু ৫০০ টাকা। ছাগলের রেট ২০০ টাকা, নেওয়া হয় ৩০০-৪০০ টাকা।
কোলা হাটের ইজারাদার নওগাঁ জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বিমান কুমার রায়ের সঙ্গে মোবইল ফোনে জানতে চাইলে তার অংশীদার ফেরদৌসকে প্রথমে চিনেন না বললেও পরে চেনেন বলে জানান। অতিরিক্ত টোল নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তিনি ফোন কেটে দেন। পরে আরো দু'বার ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেননি।
হাট-বাজার ইজারা দেওয়ার পর সরকারি নীতিমালা কোনো কাজে লাগে না। ফাঁকা রশিদ অথবা রশিদ না দিয়ে অতিরিক্ত টেল নেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে নওগাঁ জেলা হাট বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান জানান, কেউ যদি বলে সরকারি নীতিমালা কাজে আসে না, আবার অতিরিক্ত টোল নেবে, তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।