ইসলাম বিবাহ সহজ করার কথাই বলে

বিবাহ কঠিন নয়, সহজ করতে হবে—এটা ইসলাম চায়। বিবাহ সহজ করার কথাই বলে ইসলাম। বিবাহ যদি কঠিন করা হয়, তাহলে সমাজে ব্যভিচার আর অন্যায় বাড়বে। কিন্তু বিবাহ যদি সহজ করা হয় তাহলে সমাজে ব্যভিচার কমবে শান্তি বৃদ্ধি পাবে।
বর্তমানে আমরা নানাভাবে, নানা কায়দায় বিবাহ জিনিসটাকে কঠিন করে তুলেছি। বিবাহের কথা বিশাল আকারের কোনো পাহাড় মাথায় জেঁকে বসে। যার কারণে একজন পুরুষকে বিবাহের কথা ভাবতে হলে তাকে অনেক কিছুর কথা চিন্তা করতে হয়। নিচে আমরা বিবাহকে কিভাবে সহজ করতে হয় তা নিয়ে আলোচনা করব।
বিবাহ আল্লাহর নিদর্শন
বিবাহের আগে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের মধ্যে কোনো সম্বন্ধ থাকে না। কিন্তু বিবাহের পর তাদের মধ্যে এমন অদৃশ্য গভীর বন্ধন ও ভালোবাসা গড়ে ওঠে; তারা অতীত জীবনকে ভুলে গিয়ে সম্পূর্ণরূপে একে অন্যের হয়ে যায়। এখন আর একজন অন্যজন ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতে পারে না। যৌবনকালে না হয় এ ভালোবাসার পেছনে জৈব তাগিদের কোনো ভূমিকাকে দাঁড় করানো যাবে; কিন্তু বৃদ্ধকালে কোন সে তাড়না এ ভালোবাসাকে স্থিত রাখে? তখন তো দেখা যায়, একের প্রতি অন্যের টান ও মমতা আরো বৃদ্ধি পায়।
এটাই কুদরতের সেই নিদর্শন, যার প্রতি আল্লাহ তাআলা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তাঁর এক নিদর্শন এই যে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদেরই মধ্য থেকে স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে গিয়ে শান্তি লাভ করো এবং তিনি তোমাদের পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই এর ভেতর নিদর্শন আছে সেই সব লোকের জন্য, যারা চিন্তা-ভাবনা করে।’ (সুরা : আয়াত : ২১)
বড় আয়োজন বর্জন করতে হবে
আমাদের তরুণসমাজ অনেকেরই ধারণা বিবাহ করতে গেলে বিশাল বড় আয়োজন করতে হবে। যদি বড় আয়োজন না করে তাহলে মানুষ কী বলবে, লোকেরা কী ধারণা করবে! চক্ষুলজ্জায় হলেও আমাদের সাধ্যের বাইরে গিয়ে আয়োজন করতে হবে।
এমন মনমানসিকতা কমবেশি সবাই লালন করে। হাদিসে অলিমার কথা এসেছে। অলিমার ব্যবস্থা সাধ্য অনুযায়ী মানুষ আয়োজন করবে। লোক দেখানোর জন্য অলিমা করবে না। ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, বিয়ের প্রথম দিনের ভোজের ব্যবস্থা করা আবশ্যকীয়, দ্বিতীয় দিনের ভোজের ব্যবস্থা করা সুন্নত এবং তৃতীয় দিনের ভোজ হলো নাম-ডাক ছড়ানোর উদ্দেশ্যে। যে ব্যক্তি নাম-ডাক ছড়াতে চায়, (কিয়ামতের দিন) আল্লাহ তাআলা তাকে তদ্রুপ (অহংকারী ও মিথ্যুক হিসেবে) প্রকাশ করবেন। (জামে তিরমিজি, হাদিস : ১০৯৭)
বিপুল অর্থের মোহর নির্ধারণ না করা
বিবাহ কঠিন হওয়ার আরেকটি বড় অন্যতম কারণ হচ্ছে চড়া মূল্যের মোহর নির্ধারণ করা। অথচ শরিয়ত নিজের সাধ্যের বাইরে গিয়ে, চড়া মূল্যে মোহর নির্ধারণ করাকে কোনোক্রমেই পছন্দ করে না। আবুল আজফা আস-সুলামি (রহ.) বলেন, একবার ওমর (রা.) আমাদের উদ্দেশ্যে ভাষণে বলেন, সাবধান! তোমরা নারীদের মোহর নির্ধারণে সীমা লঙ্ঘন করো না। কারণ যদি তা দুনিয়ার মর্যাদার বস্তু হতো এবং আল্লাহর কাছে পরহেজগারির বস্তু হতো, তাহলে তোমাদের চেয়ে নবী (সা.) হতেন এর যোগ্যতম ব্যক্তি। অথচ তিনি তাঁর স্ত্রীদের কারো মোহর এবং তাঁর কন্যাদের কারো মোহর ১২ উকিয়ার বেশি ধার্য করেননি। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২১০৬)
কুসংস্কার পরিহার
সামাজিক যেসব কুসংস্কার আছে তা পরিহার করা। আমাদের সমাজে প্রচলিত বিবাহের মাঝে অনেক কুসংস্কার আছে। বিবাহের অনুষ্ঠানে গিফট বুথ রাখা। অর্থাৎ বিবাহে আগন্তুক যত মানুষ আসবে তাদের বাধ্যতামূলক উপঢৌকন দেওয়া—এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা। যাতে মানুষ চক্ষুলজ্জায় হলেও উপঢৌকন দেয়। এসব দেখে অতিথি অনেক সময় চক্ষুলজ্জায় উপঢ্যৌকন দিয়ে থাকে। অথচ উপঢৌকন দেওয়া-নেওয়ার মাঝে সন্তুষ্ট থাকা চাই। এভাবে জোর করে, চাপ দিয়ে উপঢৌকন নেওয়ার কোনো অর্থ হতে পারে না।
তেমনি বরযাত্রীকে গ্রহণ করার জন্য গেট ফি থাকে। এসব নিয়ে কত বিয়ের মাঝে যে মনোমালিন্য হয় তার কোনো ইয়াত্তা নেই। ইসলাম এসবের কোনোটাই সমর্থন করে না। এসব আয়োজনের মাঝেই অনেক এমন অনৈসলামিক কার্যকলাপ ঘটে থাকে, যার কারণে আল্লাহ তাআলা আমাদের ওপর ক্রোধান্বিত হন। এসব কারণে বিবাহের মধ্যে আল্লাহ তাআলা যে বরকত রেখেছেন সে বরকত উঠিয়ে নেন।
উপযুক্ত পাত্র-পাত্রী পেয়েও বিবাহ না দেওয়ার অনুচিত
অনেকেই আছেন নিজের ক্যারিয়ারকে অনেক উঁচুতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিবাহতে যথেষ্ট বিলম্ব করে থাকেন। উপযুক্ত পাত্র-পাত্রী পাওয়ার পরও বিবাহ দিতে চান না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা যে ব্যক্তির দ্বিনদারি ও নৈতিক চরিত্রে সন্তুষ্ট আছ তোমাদের নিকট সে ব্যক্তি বিয়ের প্রস্তাব করলে তবে তার সঙ্গে বিয়ে দাও। তা যদি না করো তাহলে পৃথিবীতে ফিতনা-ফ্যাসাদ ও চরম বিপর্যয় সৃষ্টি হবে।’ (জামে তিরমিজি, হাদিস : ১০৮৪)
অভাবের ভয়ে বিবাহ না করা
আমাদের সমাজে অনেকে এমন আছেন যে তাদের বিশ্বাস, বিবাহ করলে অভাব বেড়ে যাবে। অথচ আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ণ, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদের সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৩২)
এ আয়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বালেগ নারী-পুরুষ যদি বিবাহের উপযুক্ত হয়, তবে অভিভাবকদের উচিত তাদের বিবাহের জন্য চেষ্টা করা। এ ব্যাপারে বর্তমান সামর্থ্যই যথেষ্ট। বিবাহের পর স্ত্রী ও সন্তানদের ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে সে অভাবে পড়তে পারে এই আশঙ্কায় বিবাহ বিলম্বিত করা সমীচীন নয়। চরিত্র রক্ষার উদ্দেশ্যে আল্লাহ তাআলার ওপর ভরসা করে বিবাহ দিলে অতিরিক্ত ব্যয় নির্বাহের জন্য আল্লাহ তাআলা উপযুক্ত কোনো ব্যবস্থা করে দেবেন। (তাওজিহুল কোরআন)
ইবনে মাসউদ বলতেন, ‘তোমরা যদি ধনী হতে চাও, তবে বিবাহ করো।’ (মাআরেফুল কোরআন)
যৌতুক দাবি করা
যারা বিবাহের মাঝে স্ত্রীর ওপর যৌতুক দাবি করে তাদের মতো নিম্ন, নিচু ইতর শ্রেণি আর হতে পারে না। এই যৌতুকের মতো গজব চাপিয়ে আমাদের সমাজে যে কত বিশৃঙ্খলা আর অশান্তি হচ্ছে, তা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ভালো জানেন।
সম্পাদকঃ সারোয়ার কবির | প্রকাশকঃ আমান উল্লাহ সরকার
যোগাযোগঃ স্যুইট # ০৬, লেভেল #০৯, ইস্টার্ন আরজু , শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণি, ৬১, বিজয়নগর, ঢাকা ১০০০, বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০ ১৭১১৩১৪১৫৬, টেলিফোনঃ +৮৮০ ২২২৬৬৬৫৫৩৩
সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত © ২০২৫